চীনে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা কেমন আছেন?

করোনাভাইরাস আতঙ্ক

চীনের কয়েকটি শহরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বাংলাদেশে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলেও দেশটির সরকার সেখানকার সব ধরণের গণপরিবহনে চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় এক প্রকার আটক অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

তবে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ দূতাবাস।

করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে চীনা মানচিত্রের কেন্দ্রে থাকা হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের বাসিন্দারা। এছাড়া উহানের আশেপাশের ১৩টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি।

যদি বাংলাদেশে ফেরার সুযোগ থাকতো!

এরইমধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনায় চাপা আতঙ্কের মধ্যে আছেন সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।তাদের একজন শামিমা সুলতানা, যিনি গত চার বছর ধরে তার দুই সন্তান নিয়ে উহান শহরে বসবাস করছেন।প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইলেও শহরটির সব গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

‘খুবই উদ্বেগ, আতঙ্ক আর মেন্টাল প্রেশারের মধ্যে আছি। বাজার করার জন্যও বাইরে যেতে পারছি না। যে খাবার দাবার আছে, সেটা শেষ হলে কি করবো জানি না। এখন যদি বাংলাদেশে ফেরার কোন সুযোগ থাকতো আমি এক মুহূর্তও এদেশে থাকতাম না। কিন্তু বাস, প্লেন, ট্রেন সবই বন্ধ। ফেরার কোন পথ নেই।’ বলছিলেন শামিমা।

শিক্ষার্থীদের যেভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে

শুরুতে এমন উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ শাকিল আহমেদও। তিনি উহানের একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার মতো উহান শহরে বসবাসরত অন্যান্য শিক্ষার্থীরা শুরুতে ভাইরাসের আতঙ্কে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদেরকে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়ার কথা আশ্বাস দেয়ায় উদ্বেগ কিছুটা কমেছে।

কিন্তু চীনা সরকারের নির্দেশনা মানতে গিয়ে এক রকম আটক অবস্থায় সতর্ক হয়ে চলতে হচ্ছে তাদের।

শাকিল আহমেদ বলেন, ‘দূতাবাস থেকে আর ইউনিভার্সিটি থেকে সব সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছে। ইউনিভার্সিটি থেকে বলেছে যেন আমরা প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হই। সব সময় যেন মাস্ক পরি, তারা ওই মাস্ক দিয়েছে। বারবার হাত ধুতে বলেছে, প্রচুর পানি খেতে বলেছে। মানে যতভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন – তারা রুমে রুমে এ সংক্রান্ত নোটিশ দিয়ে গেছে।’

শিক্ষার্থীরা যেন তাদের প্রয়োজনীয় বাজার সেরে নিতে পারে এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা বাস সপ্তাহে দুই দিন এই শিক্ষার্থীদের ডর্মেটরি থেকে পাশের সুপার শপে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে।

এছাড়া কোন শিক্ষার্থীর যদি, জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, সর্দি বা বুকে ব্যথা হয়- যেগুলো কিনা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। তাহলে সাথে সাথে এই তথ্য ডর্মেটরির সুপারভাইজারকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ নেয়া হচ্ছে যে আমরা ঠিক আছি কিনা। তারপরও যদি কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। আসলে সাবধানে থাকা আর নির্দেশনা মেনে চলা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।’

চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস যেভাবে সাহায্য করছে

চীনে বসবাসরত প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে প্রায় তিনশ জনের বসবাস উহান এবং এর আশেপাশের শহরগুলোয়। করোনাভাইরাসের এই বিস্তারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলার কথা জানিয়েছে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস।

বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে উহানে বসবাসরত দুই শতাধিক বাংলাদেশি ইতোমধ্যে এক হয়ে তাদের সমস্যাগুলোর কথা দূতাবাসকে অবহিত করেছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকেও সব বাংলাদেশি নাগরিককে জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো সহায়তা চাওয়ার জন্য সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টার একটি হটলাইন নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলেছে।

বিশেষ করে কেউ অসুস্থ হলে দূতাবাসের পক্ষ থেকেই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। যদিও এখন পর্যন্ত কোন বাংলাদেশি বা বিদেশি নাগরিকের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

মানুষের আতঙ্ক দূর করতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে দূতাবাস যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানান চীনে বাংলাদেশি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন মাসুদুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি যে, উহানের বাংলাদেশিরা যে একপ্রকার আটক হয়ে অসহায় অবস্থায় আছে। চীনা সরকার এখনও যেহেতু কাউকে সরিয়ে নেয়ার কোন নির্দেশনা দেয়নি, তাই আমরা সেটা করতে পারছি না। এখন চীনা স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে যে পরামর্শ দিচ্ছে সেগুলো মেনে চলতে বলছি।’

‘এছাড়া আমরা যে হটলাইন নম্বর চালু করেছি, সেখানে প্রতিদিন প্রচুর ফোন আসে। কারো বাসায় বাজার নেই, সে কিভাবে যাবে। কিন্তু কেউ আক্রান্ত হয়েছে এমন খবর আমরা পাইনি।’ বলছিলেন মাসুদুর রহমান।

এই পরিস্থিতে বর্তমান সময়ে চীনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা যে কতটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। স্বাভাবিকভাবেই তারা এখন দেশে ফিরতে আকুল হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কীভাবে ফিরবেন তারা এ উপায় তো কারো জানা নেই।

এদিকে চীনে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের নিয়ে েটেনশনে রয়েছেন এখানে থাকা তাদের স্বজনরাও। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার কি ব্যবস্থা নেয় সেদিকেই তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে আছেন তারা।