ঘরকে দূষণমুক্ত করবে এই ১০টি গাছ

আজকাল বেশিরভাগ মানুষ ঘরের ভেতর অনেকটা সময় কাটান৷ এই সময় ভালো অনুভূতি পেতে ঘরের মধ্যে গাছ রাখা যেতে পারে৷ কেননা এসব গাছ অক্সিজেন ছড়িয়ে এবং বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে আপনার ঘরের বাতাসকে করবে বিশুদ্ধ আর তাজা। তবে ঘরে সব ধরনের গাছ রাখা ঠিক না। আবার সূর্র আলো ছাড়া তো সব গাছ বাঁচেও না। তাই ঘর সাজানোর জন্য বেছে নিতে হয় বিশেষ ধরনের গাছ। চলুন তাহলে এমন ১০টি বিশেষ গাছ সম্পর্কে জেনে নেই।

১. এরিকা পাম ট্রি
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার করা এক সমীক্ষায় জানা যায়, ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ বা শক্তিশালী গাছ হচ্ছে এরিকা পাম ট্রি৷ এই গাছেরই নাকি ঘরের ভেতরে তৈরি হওয়া দূষিত পদার্থ ফিল্টার করার সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা রয়েছে। তাই এই গাছটি নির্ধিদ্বায় রাখতে পারেন আপনার বেডরুমে।

 

২. গ্রিন লিলি
গাছগুলো এমনিতেই দেখতে ভীষণ সুন্দর, আর যথেষ্ট আলো পেলে তো কথাই নেই! তেমন যত্ন না পেলেও কিন্তু এই গাছ বেড়ে ওঠে বেশ তাড়াতাড়ি৷ গ্রিন লিলি সব ঘরেই রাখা যায়, তবে অফিস বা পড়ার ঘরে রাখলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কারণ গ্রিন লিলির বড়গুণ হচ্ছে, এটি ফটোকপি মেশিনের ট্রাইক্লোরোইথিলিনকে ফিল্টার করে ঘরের বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।

 

৩. বোস্টন ফার্ন

গাঢ় সবুজ পাতার এই গাছটি বাথরুমের এক কোণে রাখতে পারেন৷ সেখানে রোদের আলো কম পেলেও কিন্তু বেশ ভালোই থাকে ফার্ন গাছ৷ বাথরুমে রাখলে এই গাছ টয়লেট পেপার, চুলের রং কিংবা কসমেটিক্সে থাকা কেমিকেল সহজে ফিল্টার করে বাথরুমের বাতাস দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।

 

৪. স্নেক প্ল্যান্ট
এরকম একটি গাছকে টবে করে বাথরুমে রেখে দিন, অন্ধকার আর জলীয়বাষ্পপূর্ণ পরিবেশে এরা সুন্দর বেড়ে উঠবে, কিন্তু পরিষ্কার করবে আপনার ঘরের ফরমালডিহাইডকে। এরকম দুটো টবকে শোবার ঘরেও রেখে দিতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ফরমালডিহাইড আর কার্বন মনোক্সাইড সরানোর সাথে সাথে আরো একটি উপকার আপনাকে দেবে গাছটি। সাধারণত গাছ যেখানে রাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে, এই গাছটি তার ব্যতিক্রম। ফলে যখন ঘুমাচ্ছেন, গাছটি আপনাকে একটুখানি অতিরিক্ত অক্সিজেন দেবে।

 

৫. লাল ধারের ড্রাসিনিয়া
লাল ধার বিশিষ্ট এই ড্রাসিনিয়া আপনাকে দেবে রঙের বৈচিত্র্য। অনেক জাতের ড্রাসিনিয়ার ভেতর এদেরকে চিহ্নিত করা যায় ফিতার মতো পাতা, আর লাল ধারগুলোর জন্য। ধীরে ধীরে বাড়লেও এরা প্রায় ১৫ ফুট লম্বা হয়ে আপনার সিলিং ছুঁতে পারে। তাই এদেরকে উঁচু ছাদবিশিষ্ট মধ্যম আলোর ঘরে রাখা উচিত। এরা ঘরের বার্নিশ ও গ্যাসোলিনের সাথে আসা জাইলিন, ট্রাইক্লোরোইথেন ও ফরমালডিহাইড দূরীকরণে সবচে’ বেশি পারদর্শী।

 

৬.তরোয়াল ফার্ন
দেখতে অনেকটা বোস্টন ফার্নের মতো, কারণ একই গোত্রের নাকি প্রায় ৪৪ জাতের গাছ রয়েছে৷ এই গাছটি রাখা যেতে পারে বাড়ির করিডোরে বা ঢোকার জায়গায়৷ বাড়ির কোনো ধরণের ধোঁয়া বা বাইরে থেকে ঢোকা গাড়ির ধোঁয়াকে সহজে ফিল্টার করে ঘরকে দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করে এই গাছ। তবে গাছটি তেমন রোদ সহ্য করতে পারেনা৷ তাই বাড়ির করিডোরই এর জন্য উপযুক্ত জায়গা।

 

৭. ইংলিশ আইভি
গাছটি পশ্চিমের দেশগুলোতে ক্রিসমাসের দিন ঘর সাজাতে ব্যবহার হয়। অনেক দ্রুত বেড়ে গিয়ে অন্য গাছপালাকেও লতায় ছেয়ে ফেলে বলে অনেকেই একে ঘরে রাখতে চান না। ছোট পাত্রে রাখা ইংলিশ আইভি আপনার ঘরে খুব বেশি বাড়তে পারবে না। ছেঁটে রাখার মাধ্যমেও একে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। বোনাস হিসেবে এরা ঘরের ক্লিনারের সাথে আসা ফরমালডিহাইডকে শুষে নিয়ে আপনাকে দেবে বিশুদ্ধ বাতাস।

 

৮. পিস লিলি
সাধারণত এরা লিলি নামেই আমাদের দেশে বেশি পরিচিত। কালচে সবুজ পাতার সাথে সাদা ফুলের কনট্রাস্ট আপনার মন কাড়তে বাধ্য। অনেক সহজেই বাঁচিয়ে রাখা যায় গাছটিকে। সাধারণ অবস্থায় এরা ১২-১৬ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। গরমকালের শুরুতেই সাধারণত ফুল দিলেও সারাবছর ধরেও ফুল দিতে দেখা যায় এদেরকে। নাসা গবেষণায় এদেরকে ‘বাতাস পরিষ্কারক’ উদ্ভিদ বলে চিহ্নিত করেছে। এরা আশেপাশের বাতাস থেকে ফরমালডিহাইড, বেনজিন ও কার্বন মনোক্সাইড শোষণ করে। উদ্ভিদটি শিশু ও পোষা প্রাণীর নাগালে না রাখাই ভাল। বেশিরভাগ সময়ে উদ্ভিদটির মৃত্যুর কারণ হয় অতিরিক্ত পানি দেয়া। পরিমিত পানি ও দিনের কিছুটা সময় উজ্জ্বল আলোতে থাকতে ভালোবাসে গাছটি।

 

 

৯. মানি প্ল্যান্ট
গৃহসজ্জায় এই গাছটি বোধহয় বাংলাদেশে সবচেয়ে পরিচিত। পানিতে বা মাটিতে, দু’ভাবেই গাছটি লাগাতে পারেন। সহজে বেড়ে চলে, আর সহজলভ্য বলে এর কদর সবখানেই আছে। শুধু একটি পাত্রে লাগিয়ে পাত্রটি ঝুলিয়ে দিন, গাছটি সবুজ লতার ঝালর তৈরি করে আপনার ঘরের শোভা বাড়াবে। গাছটি উজ্জ্বল আলো ভালোবাসলেও, অন্ধকারে এর কোনো সমস্যা হয় না। অন্ধকারেও সবুজ থাকতে পারে বলে, এর আরেক নাম ‘শয়তানের বৃক্ষ’ (ডেভিলস আইভি)। যদি মাটিতেই লাগান, তবে অতিরিক্ত পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই, পানিতে রাখলেও পানি পরিবর্তন করবেন। নাহলে শেকড়ে পচন ধরতে পারে।

 

১০. অ্যালোভ্যারা
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী একটি রসালো পাতাযুক্ত আলোকদিকমুখী গাছ। গাছটি বড় করা বেশ সহজ। ঘর পরিষ্কারক ও রঙয়ের সাথে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে ফরমালডিহাইড ও বেনজিন। অ্যালোভেরা এগুলোকে পরিষ্কার করে। সবথেকে ভালো হয় যদি অ্যালোভেরাকে কোনো আলোকিত জানালার পাশে রাখা যায়। বাতাস পরিষ্কার করার সাথে সাথে অ্যালোভেরা কিন্তু কাটাছেঁড়ার জন্যও উপকারী। ৬,০০০ বছর আগ থেকে মিশরের মানুষেরা এই উদ্ভিদকে নানা কাজে ব্যবহার করে এসেছে, তারা একে ‘অমরত্বের উদ্ভিদ’বলত। ত্বকের বিভিন্ন জটিলতায়, ক্ষত সারাতে ও জোলাপ (কোষ্ঠ পরিষ্কারক) হিসেবে। আজও কাটাছেঁড়া, রোদে পোড়া (সানবার্ন), পোড়া ক্ষত ও ত্বকের অন্যান্য জটিলতায় উদ্ভিদটি নানাভাবে ব্যবহার করা হয়।

ওমেনস নিউজ-লাইফস্টাইল ডেস্ক/