নারীদের সম্মান আদায়ে সাইকেল নিয়ে ছুটছেন সোহিনী

গ্রামের নারীদের সঙ্গে সোহিনী

মেয়েদের প্রাপ্য সম্মান ও অধিকারের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের মেয়ে সোহিনী দেব রায়। তিনি সাইকেলে করে নারী অধিকারের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন ওই রাজ্যের ঘরে ঘরে।

সোহিনীর সাইকেলের সামনে টাঙানো বোর্ডে সাঁটা সাদা কাগজে লেখা রয়েছে একটি সহজ বাক্য ‘মায়েরা চায় শান্তি, মেয়েরা চায় সম্মান’। আর সেই সাইকেল নিয়ে ইতিমধ্যে তিনি পাড়ি দিয়েছেন ব্যারাকপুর থেকে সুন্দরবনের উপকূল অঞ্চলের কাকদ্বীপ৷ পথে যেখানেই মানুষজনের ভিড় দেখেছেন, বিশেষ করে মেয়েদের জমায়েত, সাইকেল থামিয়ে কথা বলেছেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে বুঝিয়েছেন, সমাজে মেয়েদের সম্মান কেন এবং কতটা জরুরি।

এই সচেতনতা প্রসারের কাজটা করছেন একজন একা মেয়ে, একার চেষ্টায় এবং আত্মপ্রচারের সামান্যতম উদ্দেশ্য ছাড়াই। এই ব্যাপারটাই সোহিনীর এই উদ্যোগকে সবার নজরে এনেছে৷ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তার নামকরণ করেছে ‘‌সাইকেল ওম্যান'‌৷ প্রশংসিত হচ্ছে সোহিনীর এই সাহসী উদ্যোগ।

পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের মেয়ে সোহিনী পুষ্টি বিজ্ঞানে এমএসসি করেছেন, এখন বিএড পড়ছেন। এর মধ্যে তার বিয়েও হয়েছে বর্ধমানে। কিন্তু নিজের বাড়ি, বা শ্বশুরবাড়ি, কোথাও সোহিনীর এই প্রচার অভিযানে বাধা দেওয়া হয়নি। দুই পরিবারের মানুষই সোহিনীকে উৎসাহিত করেছে।

ব্যারাকপুর থেকে কাকদ্বীপ, রাস্তার দুপাশের মানুষজনের থেকে যেরকম সাড়া পেয়েছেন সোহিনী, তাতে ভবিষ্যতে এরকম আরও সাইকেল যাত্রার পরিকল্পনা এখনই করে রাখছেন সোহিনী।

মেয়েদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার যে প্রচার নিয়ে সাইকেলে বেরিয়েছিলেন, যাত্রাপথেই তার সাফল্যের স্বাদ মিলেছে। কোনও প্রবীণ মানুষ তাকে পুষ্টিবর্ধক গ্লুকোজ পাউডার কিনে দিয়েছেন, তো কোনও কমবয়সি ছেলের কাছে পথের হদিশ জানতে চাইলে সে বলেছে, ‘বসে একটু চা খেয়ে, একটু জিরিয়ে যাও’।

তার এই ভ্রমণ কেবল যে নারীদের সম্মানই বাড়াচ্ছে তাই নয়, মেয়েদের সাইকেল চালনায় উৎসাহিত করছে বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সোহিনী। তিনি জানান, ইতিমধ্যে বিভিন্ন গ্রামের অনেক মেয়ে সাইকেলে চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। এমনকি অনেক মেয়ে সোহিনীর সামনেই তাদের অভিভাবকদের কাছে সাইকেল কিনে দেয়ার বায়না ধরেছে।এটা সোহিলীর খুব ভালো লেগেছে। 

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মেয়েদের মধ্যে বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল বেশ জনপ্রিয়। আমি মনিপুর, আসাম ও রাজস্থানে প্রচুর মেয়েকে মোটরসাইকেল চালাতে দেখেছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের মধ্যে এই যানটি তেমন জনপ্রিয় নয়। কিন্তু এবার সোহিনীর এই সাইকেল ভ্রমণ ওপার বাংলার মেয়েদের জীবনযাত্রায় বড় রকমের প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করা হচ্ছে। সেখানকার মেয়েদের স্বাধীনচেতা এবং স্বাবলম্বী হওয়ার পাঠ দিয়েছে সোহিনীর সাইকেল এবং সোহিনীর সাহস।

এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের জন্য ওমেনসনিউজের পক্ষ থেকে সোহিনীকে অনেক অভিনন্দন ও শুভকামনা।