করোনায় বাড়ছে আত্মহত্যা

করোনা মহামারিতে মানুষ কেবল রোগাক্রান্ত বা মৃত্যু নিয়ে আতঙ্কিত তা কিন্তু নয়। মহামারিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাড়ছে নানারকম মানসিক সঙ্কট। কে না জানে বিশ্বে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার কারণে অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছে। হঠাৎ করে এই বেকার হওয়াটা কিন্তু মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। তাই হতাশায় আত্মহত্যার মতো পাপের পথও বেছে নিচ্ছেন। উদাহরণ হিসাবে আমরা থাইল্যান্ডের কথা বলতে পারি। সেখানে করোনার ফলে হঠাৎ বেকার হয়ে পড়াদের আত্মহত্যার ঘটনা কিন্তু বেড়েই চলেছে।

একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে দেয়া পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে থাইল্যান্ডে প্রতিমাসে গড়ে ৩৬৮ জন আত্মহত্যা করেছিলেন৷ এ বছরের প্রথম চার মাসে তা ৩৫০-এ নেমে আসে৷ তবে করোনার কারণে লকডাউন শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি ফের খারাপ হতে শুরু করেছে৷ কেননা কাজ হারানো অনেকেই আত্মহননের পথ খুঁজছেন৷

এখানে আমরা সে দেশের মধ্যবয়সী নারী নিতিওয়াদি সায়-তিয়ার কথা বলতে পারি। জাপানি এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন ওই নারী৷ আয় দায় ভালোই ছিলো তার৷ লকডাউন শুরুর পরও আপনজনদের সঙ্গে কথা বলতেন ফোনে, ভিডিও চ্যাটে৷ কিন্তু ৫০ বছর বয়সি এই নারী চাকরি হারানোর হতাশা বেশিদিন সহ্য করতে পারেননি৷ আত্মহত্যা করেন নিজের ঘরেই!

কিন্তু তার আত্মহত্যার কথাটি অনেকদিন কেউ জানতে পারেনি। বেশ কিছুদিন নিতিওয়াদির সাড়া-শব্দ না পাওয়ায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তার চাচি প্রাফাই ইয়োদপ্রাদিত৷ তাই একদিন সোজা চলে যান নিতিওয়াদির বাড়িতে৷ গিয়ে তিনি যা দেখেছিলেন তা বলতে গিয়ে এখনো কান্নায় ভেঙে পড়েন। ইয়োতপ্রাদিত বলেন, ‘ভেতরে ঢুকেই থ হয়ে যাই আমি৷ দেখি মেঝেতে পড়ে আছে ওর নিথর দেহ!’

দেশটিতে এমন নিতিওয়াদি কিন্তু একজন নন। লকডাউন শুরুর পর থেকে থাইল্যান্ডে আত্মহত্যা আবার বাড়ছে৷ এ বছরের প্রথম চারমাসে আত্মহত্যা আগের বছরের তুলনায় কমলেও মে মাসে আবার সংখ্যাটা আবার বাড়তে শুরু করে৷ জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক নাত্তাকর্ন চাম্পাথং মনে করেন, ‘ছয় মাস পর করোনা সংকট শেষ হলে থাই সরকারকে খুব বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে৷’

কাজ হারানো মানুষদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার৷ করোনার কারণে বেকার হয়ে যাওয়াদের তিন মাসে ১৫ হাজার বাথ, অর্থাৎ ৪৬০ ডলার দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু এই প্রণোদনা প্রয়োজনের তুলনায় এত কম যে আকস্মিকভাবে বেকার হওয়া মানুষদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনা কমছে না, আত্মহত্যা চলছেই৷

৫৯ বছর বয়সি উন্নাকরম বুব্রাসার্ট-ও হতাশা থেকে মুক্তির জন্য বেছে নিয়েছিলেন আত্মহননের পথ৷ নিজের ঘরে আত্মহত্যা করতে গেলে এতদিনে শেষকৃত্য হয়ে যেতো তার৷ তবে তিনি চেয়েছিলেন সবার হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে জীবন থেকে বিদায় নিতে৷ তাই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন থাইল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে৷ কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে সফল হতে দেননি৷

উন্নাকরম বুব্রাসার্ট-এর জীবনে আবার স্বচ্ছলতা ফিরেছে৷ সরকার তাকে দিয়েছে বিশেষ অনুদান। দেশের মানুষও সামর্থ অনুযায়ী দাঁড়িয়েছে প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই এই নারীর পাশে৷ করোনা বিদায় হবে, সবার জীবনে ফিরবে স্বাভাবিক ছন্দ, আবার একটা চাকরি জুটবে-এ আশায় দিন গুনছেন উন্নাকরম বুব্রাসার্ট৷

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/