জলমানুষ

ছবি-সংগৃহীত

মাহমুদা আকতার

আমারও মাঝে মাঝে খুব কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে। যখন যাদুকাটা নদীটার কথা মনে পড়ে। ছোট্ট নদীটা কী শান্ত আর স্থির! ঝিরঝির বয়ে চলা জলের নিচের প্রতিটি বালুকণা পর্যন্ত দেখা যায়। ইচ্ছে করলে আমি সেগুলো গুণে ফেলতে পারতাম! সেখানে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিলো। যদিও আমি তাকে চিনতে পারিনি। মুখ ফিরিয়ে চলে আসতে আসতে কেবল বলেছিলাম,‘আপনাকে কোথায় দেখেছি বলুন তো!’

সে কোনো উত্তর দেয়নি। শান্ত পায়ে নদীর দিকে যেতে যেতে কেবল বলেছে, ‘জলের মানুষ জলে মিশে যাই।’

এইরকম ‘বেলা যে পড়ে এলো জলকে চল’টাইপ সন্ধ্যা আমার খুব পছন্দ। তাই সূর্য ডোবা দেখতে দেখতে কপোলে আবিরের রং মেখে আমি যাদুকাটা নদীটার কাছে কিছু ছন্দ চেয়েছিলাম। তখন সেই জলের মানুষটা বলেছিলো,‘আমি তোমায় গল্প দিতে পারি, তুমি কি গল্প নেবে?’

আমি ময়ুকণ্ঠী শাড়ির আচলখানা সর্ষে ফুলের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে বলেছি, ‘দাও দেখি কত গল্প আছে তোমার কাছে!’

‘ও কি ,এভাবে কেউ গল্প নেয় নাকি!’
সে আহত হয়েছিলো কিনা আমি জানিনা। আমার সেদিকে খেয়ালও ছিলো না। আমি ততক্ষণে মগ্ন হয়ে যাদুকাটা নদীর শান্ত জলের তলায় ডুবে যাওয়া আগুনের বলটাকে ধরে রাখার কায়দাটা খুঁজছিলাম। আমার মনের কথা কীভাবে যেন জেনে গিয়েছিলো শুশুকটা। জলের গভীর থেকে ঠোঁট উঁচিয়ে সে কেবল বলেছিলো, ‘এই মন্ত্র কেউ জানে না, তুমিও পাবে না।’

এজন্যই শেষ পর্যন্ত আমার কিছুই হলো না- না গল্প না কবিতা। এমনকি আগুনে বলটাকেও তালুবন্দি করা হলো না। যদিও আশা ছাড়িনি। আমি এখনও মনে মনে মন্ত্রটা খুঁজে চলেছি। মন্ত্রটা পেলেই ছুটে যাব যাদুকাটা নদীটার কাছে। সেখানে কি এখনও অপেক্ষায় আছে জলমানুষটা, আমার জন্য অনেক অনেক গল্প নিয়ে?

মাহমুদা আকতার: লেখক ও সাংবাদিক

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/