মগজের জোর বাড়ায় যে ১১ খাবার

ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য কেবল শরীর নয় মগজেরও জোর থাকা জরুরি। ব্রেন বা মগজের জোর বাড়াতে হলে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ওমেগা-৩ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার। এসব খাবার খেলে ব্রেইন সতেজ থাকে।

খাবারের ২০% শর্করা এবং শক্তি মানুষের মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কের কাজের পুরোটাই নির্ভর করে তার গ্লুকোজের মাত্রার ওপর। শরীরে গ্লুকোজের মাত্রায় হেরফের হলে মনেও দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। যেসব খাবার সবাই খুব পছন্দ সেগুলো খেলে আপনার মস্তিষ্কের 'রিওয়ার্ড এরিয়ায়' ডোপামিন রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মনে খুশি খুশি ভাব হয়। কিন্তু মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি পেটের দিকেও নজর রাখতে হবে। মানুষের দেহের পরিপাকতন্ত্রে একশো ট্রিলিয়নেরও বেশি অণুজীব বসবাস করে। এরা আপনার মস্তিষ্কের সঙ্গেও সংযোগ রক্ষা করে। মগজের সুস্থতার জন্য এই অণুজীবগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা খুব জরুরি। আসলে, পাকস্থলীকে অনেক সময় 'দ্বিতীয় মগজ' বলে ঢাকা হয়। পেটে নানা ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার ঢুকলে এসব অণুজীবের মাধ্যমে তার সুফল মস্তিষ্কে পর্যন্ত পৌঁছায়।

মস্তিষ্কের কোষ ফ্যাট অর্থাৎ স্নেহ পদার্থ দিয়ে তৈরি। তাই খাবার থেকে তেল-চর্বি একেবারে বিদায় না করাই ভাল। বাদাম, তেলের বীজ, মাছ ইত্যাদি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে জন্য ভাল। আর খাবার সময় একা একা না খাওয়াই ভাল। সবার সাথে বসে খাবার খেলে তা মস্তিষ্কের জন্য সুফল বয়ে আনে। তাহলে চলুন মস্তিষ্ক ভালো রাখে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে জেনে নেই।

১.সবুজ চাঃ সবুজ চায়ে ক্যাফেনের পাশাপাশি এল-থিয়াইন (L-theanine) রয়েছে যা মূলত আপনার মস্তিষ্কের উদ্বেগের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি ডোপামাইন এবং আলফা ওয়েভ উত্পাদনের মাত্রা বৃদ্ধি। যা আপনাকে উদ্বেগমুক্ত হতে সাহায্য করে।

২. কমলাঃ ভিটামিন সি আপনার স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

৩. বাদামঃ খেলে মস্তিষ্ক অনেক বেশি সচল হবে। আর মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে।

৪. ডিমঃ মস্তিষ্কের কোষ ভালো করতে সাহায্য করে। ডিমের ভিটামিন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং এটা স্নায়ুকেও সুস্থ রাখে।

৫. মটরশুটিঃ মটরশুঁটি রক্তে চিনির মাত্রাকে স্থিতিশীল রাখে। গ্লুকোজ হল মস্তিষ্কের জ্বালানি। যদিও মস্তিষ্ক গ্লুকোজ সংরক্ষণ করতে পারে না, এটি শক্তির ক্রমাগত প্রবাহের উপর নির্ভর করে এবং মটরশুঁটি এটি দিতে পারে।

৬. গাজরঃ আমাদের চোখের জন্য ভালো। নিয়মিত গাজর খেলে স্মৃতিভ্রম হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

৭. পালং শাকও আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি। কারণ এতে রয়েছে লুটেইন, ফুটেইন ও বিটা ক্যারোটিন। যা আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখে ও মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে।

৮. মাছঃ মাছ খেলেও ব্রেইন ভালো থাকে। কারণ মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি-১২।

৯. আঙুরঃ ইউনিভার্সিটি অফ সিনসিনাটি এর একটি গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত আঙুরের জুস পান করার ফলে যাদের সামান্য বুদ্ধি বিকাশে সমস্যা ছিল তা ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে এবং সেই সাথে স্মৃতিশক্তিতে বেশ উন্নতি সাধন হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৩ বার পরিমিত পরিমাণে আঙুর খাওয়া আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত কার্যকর। তবে যদি আঙুরের জুস পান করতে হয় তবে এর সাথে কোনো ধরণের চিনি বা সুগার না মেশানোই ভালো।

১০. মিষ্টি আলুঃ বারনার্ড তার বইয়ে উল্লেখ করেন ‘ওকিনাওআনস যিনি কিনা বিশ্বের দীর্ঘজীবী ব্যক্তি ছিলেন এবং যার মানসিক দক্ষতা বুড়ো বয়সেও ছিল বেশ সচল তার অন্যতম প্রধান খাবারের মধ্যে ছিল মিষ্টি আলু’। মিষ্টি আলুর বেটা ক্যারোটিন বেশ শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। বারনার্ড বলেন, ‘মাঝারি আকারের একটি মিষ্টি আলু ১০০ ক্যালরি এবং প্রায় ১৪ মিলিগ্রাম বেটা ক্যারোটিনে ভরপুর থাকে যার দ্বিগুণ পরিমাণে বেটা ক্যারোটিন আমাদের মস্তিষ্কের জন্য জরুরী প্রতিদিন’।

১১. ডালিমঃ ডালিমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে বলে এটি ফ্রি র‍্যাডিক্যালের আক্রমণ থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে পারে।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/