কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধায় পানিবন্দি সাড়ে তিন লাখ মানুষ

টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে উত্তরাঞ্চলের চার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তী আরও কয়েক লাখ মানুষ।

লালমনিরহাটে পানি কমতে শুরু করলেও প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত ঘরবাড়ি। নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। অনেক জায়গায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৯টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্রামের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এদিকে ধরলা নদীর পানির প্রবল চাপে সোমবার সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামে একটি বিকল্প বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা জহুর উদ্দিন বলেন, সকাল ৮টার দিকে বাঁধটি ভেঙে পানি প্রবল বেগে ধেয়ে আসে। একে একে পাঁচটি বাড়ি বিধস্ত হয়। অনেক মালামাল ভেসে যায়। তীব্র স্রোতের কারণে নৌকা নিয়ে সেখানে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১১ লাখ টাকা ও তিন হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়াসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত আছে। জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২৬টি ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামের এক লাখ ৪৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক বছরের মতো বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে ভয়াবহ বন্যা। তাই বন্যা আতঙ্কে জেলার সাত উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

 ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, খাটিয়ামারী ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। এ উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি বৃদ্ধির ফলে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ও জুমারবাড়ী ইউনিয়নের পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, বাঁশহাটা, মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, নলছিয়াসহ ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর গ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এ উপজেলার ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে লালমনিরহাট ও নীলফামারি জেলাতেও। ভারী বর্ষণ ও ধুম নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে নীলফামারির ডিমলা এলাকায় তিস্তা ক্যানেলে স্থাপিত পাকা ভবনের একটি পুলিশ বক্স।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/