ভারতীয় সঙ্গীতকে বাঁচিয়ে রেখেছে রিয়েলিটি শো: অভিজিৎ

বিচারকের আসনে গায়ক অভিজিৎ

কলকাতার বাংলা চ্যানেল স্টার জলসার শুরু হচ্ছে সঙ্গীতের ওপর নতুন রিয়েলিটি শো ‘সুপার সিঙ্গার’। এতে রয়েছে  চার নতুন বিচারক অভিজিৎ ভট্টাচার্য, শান, রূপঙ্কর বাগচি আর লোপামুদ্রা মিত্র। প্রতি শনি আর রবিবার ভারতীয় সময় রাত ৯টার প্রচারিত হবে ‘সুপার সিঙ্গার’। এই অনুষ্ঠান নিয়ে কলকাতার বাংলা সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজারের সঙ্গে মন খুলে কথা বলেছেন গায়ক অভিজিৎ। ওই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ ওমেন্স নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

হঠাৎ রিয়েলিটি শো-র বিচারক হওয়ার অফারটা নিলেন কেন?

এত দিন নিইনি কেন, এখন সেটাই ভাবছি। টিভি-রেডিয়ো খুললে যে সব গান বাজে, কান-মাথা নষ্ট হয়ে যায়। ওগুলো গান? রিয়েলিটি  শো-ই একমাত্র ভারতীয় সঙ্গীতের ধারাটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

কিন্তু রিয়েলিটি শো থেকে প্রতি বছর বেরিয়ে আসা প্রতিযোগীদের বেশিরভাগই  তো হারিয়ে…

(প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়ে) আপনি কি জোর গলায় বলতে পারেন পাশ করে বেরিয়েই আপনি চাকরি পেয়ে যাবেন? যে সমস্ত সিঙ্গার এটা ভেবে আসবেন যে এই শো থেকে বেরিয়েই আমার অনেক নাম হবে, অনেক কাজ পাব আমি, আমি বলব সেটা ঠিক নয়। এটা কোয়ালিফিকেশন লিস্টে একটা এক্সট্রা পালক। যেখান থেকে অনেকটা শিখে প্রতিযোগীরা বাইরে বেরবে।

একটু আগে বললেন, এখনকার গানে কান-মাথা নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু মানুষ তো এসবই শুনছে।

হ্যাঁ। কারণ তারা ইলিশ আর স্যামন মাছের ফারাকটাই করতে শেখে্ননি। তাদের কাছে কোনও চয়েজ নেই। একটা গান তৈরি হল, পাবলিককের কাছে দিয়ে বলা হল, তাকে এটাই শুনতে হবে। যে মানুষটা জীবনে কোনও দিন রাজভোগ, ল্যাংচার স্বাদ পায়নি, সে কী করে ভাল-মন্দের ফারাক করবে বলুন তো? সে তো জানে এটাই ভাল। এটাই খেতে হবে।

সোনু নিগম থেকে মোনালি ঠাকুর কিছু দিন আগেই মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ফেভারিটিজম নিয়ে সরব হয়েছেন…আপনি কী বলবেন?

পঁচিশ বছর ধরে এই ফেভারিটিজম নিয়ে বলে এসেছি আমি। তখন অনেকেই বলেছ্‌ অভিজিৎ তো ধর্ম নিয়ে কথা বলছে। আমার বক্তব্য ছিল, আমাদের দেশের গায়কদের দিয়ে বলিউডে গান গাওয়াতে হবে। আজ যখন সবাই  দক্ষিণের শিল্পী, বাংলার শিল্পী বলে বিভাজন করে, সেটা দোষের নয়? আজকে যারা এই ফেভারিটিজম নিয়ে কথা বলছেন, তারা আগে কেন বলেননি? আসলে নিজেদের গায়ে ঘা না লাগলে মানুষ মুখ খোলে না। সেই সময় আমি একদম টপে। তখনও আমি আর জগজিৎ সিংহ এই নিয়ে কথা বলেছিলাম।  (একটু থেমে) আমায় কেউ চাইলেও বিয়েবাড়িতে গাওয়াতে পারবে না। আমি আমার শিল্পকে, আমার কাজকে খুব সম্মান করি। আত্মসম্মান আমার কাছে সবচেয়ে বড়।

তার মানে  আপনি বলতে চাইছেন সোনু নিগমের ‘মিউজিক মাফিয়া’র তত্ত্ব ঠিক?

এর সবচেয়ে বড় ভিক্টিম কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর, রফিজি। বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে নতুন কেউ গাইতে এলে পুরনো সিঙ্গারদের সরিয়ে ওরা কী করেন জানলে অবাক হবেন। নতুন গায়কদের দিয়ে গান গাইয়ে নিল। পয়সা তো দিলই না। বরং যে লাভটা হল পুরোটাই ওদের পকেটে। নাম বলছি না, আজকে যাদের বলিউডের নাম্বার ওয়ান গায়ক বলা হয়, আপনার কী মনে হয় এদের অনেক পয়সা? মাসের শেষে ইএমআই দেওয়ার অবস্থা থাকে না। মিউজিক কোম্পানি একটা গাড়ি কি একটা ঘড়ি গিফট করে দিল, এরা তাতেই খুশি।

তা সত্ত্বেও তারা গান গাইছেন কেন?

ওই যে নাম হচ্ছে, লোকে চিনছে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে সব… এরা তাতেই খুশি। তবে এতে আমার একটা লাভ হয়েছে।

কী রকম?

আমাদের জেনারেশনের গান মানুষ আবার শুনতে চাইছেন। রেডিয়ো, টিভি খুললেই দেখতে পারবেন সেটা।

তবে লাইভ কনসার্টের তো এখন চাহিদা বেড়েছে, সেখান থেকেও একটা মোটা টাকা পান নিউ এজ সিঙ্গাররা।

(হেসে) একটা পেপসি কিনুন। দুটো টিকিট পাবেন। এই করেই তো চলছে। সেদিন আমার গানের একটা রিমেক শুনলাম। ওটা গান না কী, অন্য কিছু বুঝতেই পারলাম না। অদ্ভুত ভাবে গেয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আরও বেশ কিছু গান হয়তো গাইতে পারতাম। কিন্তু যা যা গেয়েছি তার লিস্টও অনেক বড়। আমি তাতেই খুশি।

 'সুপার সিঙ্গার'-এ এক ঝাঁক নতুন ছেলেমেয়ে। তাদের থেকে কী প্রত্যাশা?

সবাই ভীষণ ভালো। এক এক জন এক এক রকম। আর অসম্ভব চেষ্টা প্রত্যেকের। প্রথম যখন তারা আমায় অফারটা দিল একটু দোটানায় ছিলাম। মুম্বাই থেকে কলকাতায় গিয়ে শো-টা করব কী না।… এখন মনে হচ্ছে, না এলে মিস করতাম। দর্শকদেরও বলব, দেখুন। ওরা এক ঝাঁক মুক্ত হাওয়া।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে গান গাইছেন পশ্চিবঙ্গের এই সঙ্গীতশিল্পী। বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানসহ বিভিন্ন নায়কদের লিপে অভিজিৎয়ের বহু গান জনপ্রিয় হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে তিনি বরাবরই বিতর্কিত। যে শাহরুখের গান গেয়ে তিনি বলিউডে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সেই শাহরুখের বিরুদ্ধেও তিনি মুখ খুলতে দ্বিধা করেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, শাহরুখ তার ছবিতে অভিজিৎকে গান গাওয়ানোর নেয়ার জন্য পরিচালকদের বলেন না। অথচ রাজেশ খান্না তার ছবিতে কিশোর কুমারকে দিয়ে গান গাওয়াতে বলতেন। শুধু কি তাই, অভিজিৎ আর কখনও শাহরুখের জন্য কণ্ঠ দেবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তিনি একসময় বলিউডে পাকিস্তানি শিল্পীদের গান গাওয়া নিয়েও আন্দোলন করেছেন। ভারতে অভিজিৎদের আন্দোলনের কারণেই বলিউডের ছবিতে নিষিদ্ধ হয়েছেন অতিফ আসলাম আর রাহাত ফাতেহ আলীরা।  এমনকি বিভিন্ন সময়ে ইন্ডিয়া আইডলসহ সঙ্গীতের বিভিন্ন রিয়েলিটি শো নিয়েও কটূক্তি করতে ছাড়েননি গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্য। অথচ আজ তার মুখে উল্টো সুর শোনা যাচ্ছে। তিনি নিজে রিয়েলিটি শো ‘সুপার সিঙ্গার’য়ে বিচারকের চেয়ারে বসছেন এবং মিডিয়ার কাছে এর গুণকীর্তন করছেন।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/