চা বিক্রি করে যেভাবে মাধ্যমিক সেরা হুজাইফা

ছবিতে হাস্যেজ্জ্বল যে ছেলেটিকে দেখছেন তার নাম মুহাম্মদ হুজাইফা। ১৬ বছরের এই কিশোর মাধ্যমিকে দারুণ ফলাফল করেছিল। আর সে এতটা ভালো রেজাল্ট করেছিলো চা বিক্রির পাশাপাশি পড়া চালিয়ে। কিন্তু এতটা ভালো ফলাফল করার পরও সে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সে কলেজে গেলে তার মা আর পাঁচ ভাই-বোনকে কে দেখবে? তার পরিবারে সেই তো একমাত্র রোজগেরে সদস্য। কিন্তু ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। অবশেষে তার ও তার পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে স্থানীয় প্রশাসন।  তার সামনে এবার খুলে গেছে স্বপ্নে দুয়ার।

এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম সে পাকিস্তানের মুলতান শহরের বাসিন্দা। পিতৃহীন পরিবারের সেই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সে চা বিক্রি করে নিজের সংসার ও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে মুলতান বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিকে সে দারুণ ফলাফল করে। মোট ১১০০ নম্বরের পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ১০৫০। তখন পাকিস্তানের সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল মুহাম্মদ হুজাইফা’র এই সাফল্য। তার পড়াশোনার জন্য স্থানীয় এক প্রাইভেট কলেজ থেকে বৃত্তি-ও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হুজাইফা তখন কলেজে ভর্তি হয়নি।

তার সাফ কথা,‘ আমি কলেজে পড়তে গেলে আমার পরিবারের কি হবে? তাদের মুখে আহার জোগাবে কে?’

তাই সে পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজে মনোযোগ দেয়। বর্তমানে সে মুলতানের  ঘালা মাইন্ড এলাকায় শরবত বিক্রি করছে। এ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কোনও রকমে চলছে সংসার।

তার এই পরিশ্রমের কথা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। অনেকে তার ছবিসহ টুইট করেছেন।

একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘হুজাইফার মতো এক উজ্জ্বল, বুদ্ধিমান ছেলেকে দেখে অবাক হয়েছি। সে ২০১৯ সালে  ম্যাট্রিকে মুলতান বোর্ডে ১১০০’র মধ্যে ১০৫০ পেয়েছিল। এখন সে তার মা ও পাঁচ এতিম ভাইবোনদের জীবনধারণের জন্য শরবতের স্টলে কাজ করছে।’

আর হয়তো বা সোশাল মিডিয়ায় হুজাইফাকে নিয়ে এইসব প্রচারণার কারণেই পাক সরকারের মন গলেছে। সরকারি ফান্ড থেকে এই মেধাবী ছাত্র ও তার পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বায়তুল মাল নামে পরিচিত ওই তহবিলের চেয়ারম্যান  আওন আব্বাস বাপ্পি গত সোমবার (২৭ জুলাই) টুইটারে জানিয়েছেন, তারা হুজাইফা ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এখন থেকে ওই কিশোরের লেখাপড়ার সমস্ত ব্যয় এই তহবিল থেকে বহন করা হবে। পাশাপাশি তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে যাতে নির্বিঘ্নে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে হুজাইফা। তাকে আর চা বা শরবত বিক্রি করতে না হয়।

কিন্তু ইতিমধ্যে  হুজাইফার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে একটি শিক্ষা বছর। পাকিস্তান সরকারের যদি আরও আগে এই শুভবুদ্ধির উদয় হতো তাহলে ছেলেটিকে এখনও শরবতের গেলাস নিয়ে কাস্টমার ধরতে ছুটে বেরাতে হতো না। এখন সে কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তো। সে যাই হউক, শেষ পর্যন্ত হুজাইফা যে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে এটাই বড় কথা।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/