তুরস্কের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্যাস অনুসন্ধানকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী গ্রিস ও সাইপ্রাসের সাথে তুরস্কের যে বিরোধ চলছে তারই প্রেক্ষিতে আঙ্কারাকে কড়া হুমকি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংস্থাটির শীর্ষ কূটনীতিক জোসেফ বরেল  শুক্রবার (২৮ আগস্ট) এই হুমকি দিয়ে বলেন, এ বিরোধ না মিটলে তুরস্কের বিরুদ্ধে অবরোধসহ যে কোনও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে ইইউ। সূত্র-আল জাজিরা, রয়টার্স

বার্লিনে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে কথা বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। তুর্কি-গ্রিস বিবাদে গ্রিসের প্রতি সমর্থন জানাতে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

বৈঠক শেষে জোসেফ বোরেল বলেন, তুরস্ক যদি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে না পারে তাহলে দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে উত্তেজনা নিরসনে ইইউ প্রথমে আঙ্কারাকে ‘সংলাপের একটি চরম সুযোগ’ দিতে চায়।

ভূমধ্যসাগরে তেলগ্যাস অনুসন্ধান ও সমুদ্রসীমা নিয়ে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে তুরস্কের বহুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। কিছুদিন আগে তুরস্ক ওই কৃষ্ণ সাগরে নিজেদের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় গ্যাসের খনির সন্ধান পায়, যা বিতর্কিত অঞ্চলে হওয়ায় সম্প্রতি এই উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

গ্রিস-তুরস্ক বিরোধে ইইউ-এর সদস্য দেশ গ্রিস ও সাইপ্রাসের প্রতি সংস্থাটির সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন জোসেফ বোরেল। তুরস্কের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে তিনি জানান, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের অনুসন্ধান কার্যক্রম সংক্রান্ত সবকিছুকেই অবৈধ হিসেবে বিবেচনার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

তার ভাষায়, এই অবরোধের ফলে জলে (পূর্ব ভূমধ্যসাগর) প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানে তুরস্কের ক্ষমতা কমে যাবে এবং এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় তাদের জাহাজ বা ইউরোপীয় বন্দর ব্যবহার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। আমরা এ সম্পর্কিত আরও কিছু পদক্ষেপে যেতে পারি … যেখানে তুর্কি অর্থনীতি ইউরোপীয় অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত।

জোসেফ বোরেল আরও বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্ক এখনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে আগ্রহী। তবে সংস্থাটির নিষেধজ্ঞার মুখে পড়লে এর সদস্য হওয়ার ব্যাপারে তুরস্কের প্রার্থিতা ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং সেটি বাতিল হতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই জন ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, জোটের পররষ্ট্রমন্ত্রীরা এ ব্যাপারে যে কোনও সিদ্ধান্তের ভার ইইউ নেতাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির দুই দিনের সম্মেলনে এ নিয়ে পরবর্তী ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে আঙ্কারার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভাবে গ্রিসের পক্ষ নেওয়ার কোনও ভিত্তি নেই। সমুদ্রসীমা নিয়ে গ্রিসের দাবি প্রত্যাখ্যান করছে তুরস্ক। গ্রিসের ‘বেপরোয়া’ চাহিদার প্রতি সমর্থন না দিতেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কারা।

এ পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে এরদোয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ন্যাটো প্রধান জিন স্টোলটেনবার্গ। বুধবার ট্রাম্প ও শুক্রবার ন্যাটো প্রধানের সঙ্গে পূর্ব ভূমধ্যসাগর পরিস্থিতি নিয়ে ফোনে কথা হয় তুর্কি প্রেসিডেন্টের।

ফোনালাপে তুর্কি প্রেসিডেন্ট তাদেরকে জানান, আঙ্কারা পূর্ব ভূমধ্যসাগর পরিস্থিতির একটি সুষ্ঠু সমাধান চায়, যা সবার জন্যই লাভজনক হবে। তবে তার সরকার তুরস্কের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

ন্যাটো প্রধানের সঙ্গে আলাপকালে এরদোয়ান বলেন, ন্যায্য আলোচনার মাধ্যমেই কেবল আঞ্চলিক শান্তি অর্জন সম্ভব। আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে এবং আঞ্চলিক শান্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন একতরফা অবস্থান না নিয়ে ন্যাটোকে তার দায়িত্ব পালন করা উচিত।

তবে জোসেফ বোরেলের এই হুমকির ফলে ওই অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেয়া দিয়েছে। এমনকি খুব শিঘ্রই সামরিক সংঘাত দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জোসেফ বোরেল

তবে ইইউ’র এই হুমকিতে পিছু হটতে নারাজ তুরস্ক। গত ২৪ আগস্ট এক ঘোষণায় তুরস্ক জানায়, ভূমধ্যসাগরের বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমায় তাদের গবেষণা জাহাজ অরুচ রেইসের অনুসন্ধানের সময় ২৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই অনুসন্ধানকে বেআইনি হিসেবে আখ্যায়িত করে গ্রিস। এর জেরে পাল্টাপাল্টি মহড়ার ঘোষণা দেয় তুরস্ক ও গ্রিস। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গ্রিসের পাশে দাঁড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

ইউরোপের চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্ক কোনও ধরনের অস্থিরতা তৈরি করছে না। তার দেশ জোরালোভাবে এটা প্রমাণ করেছে যে, তারা উত্তেজনা কমাতে আগ্রহী। এ ইস্যুতে তুরস্ক সংলাপে বসতেও প্রস্তুত রয়েছে।

২৬ আগস্ট একাদশ শতকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সেলজাক তুর্কিদের বিজয় স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্রিসের সঙ্গে বিরোধ নিয়ে কথা বলেন এরদোয়ান। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে কোনও ছাড় দেবে না তুরস্ক। কৃষ্ণ সাগর, আজিয়ান সাগর ও ভূমধ্যসাগরে নিজেদের অধিকার বজায় রাখতে আঙ্কারা সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা অন্য কারও অঞ্চল, সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থের দিকে নজর দিচ্ছি না। কিন্তু যেগুলো আমাদের সেগুলোতে কোনও প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।’

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/