মোদি সরকারের রোষের মুখে ভারত ছাড়ছে অ্যামনেস্টি

মোদি সরকারের শত্রুতার মুখে ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সূত্র- আনন্দবাজার ও এনডিটিভি।

জানা যায়, গত বছর কাশ্মীরের ওপর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নিয়ে রাজ্যটিতে কারফিউ জারিসহ সেখানকার জনগনের ওপর নানা দমন পীড়ন চালানোর প্রেক্ষিতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এরপরই মোদি সরকারের রোষের মুখে পড়ে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। এরপর চলতি বছর দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে তারা যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেখানেও মোদি সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা রয়েছে। ওই রিপোর্টে এটিকে একটি ‘পরিকল্পিত দাঙ্গা’হিসাবে উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি। এ কারণেই সংস্থাটির ওপর ক্ষেপেছে মোদি সরকার এবং তাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। যার সর্বশেষ নমুনা হচ্ছে  অ্যামনেস্টির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেয়া।

এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে ভারতে সব কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। একই সঙ্গে সমস্ত  ভারতীয় কর্মীদেরকেও কার্যত ছাঁটাই করতে শুরু করেছে অ্যামনেস্টি।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ভারত সরকার যে সংস্থাটির ব্যাংক একাউন্ট অবরুদ্ধ করেছে, তা তারা ১০ সেপ্টেম্বর জানতে পারে। এর প্রভাবে ভারতে অসংখ্য কর্মীকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি। এছাড়া অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মানবাধিকার সংক্রান্ত সব ধরণের কার্যক্রম থমকে গেছে।

সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জুলি ভেরার বলেছেন, ভারত সরকারের ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক পদক্ষেপের ফলে সেখানে মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আপাতত থমকে গেছে। তবে ভারতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অঙ্গীকার এবং সম্পৃক্ততার অবসান ঘটেনি। সামনের দিনগুলোতে আমরা ভারতে আরও দৃঢ় ভাবে কাজ শুরু করবো।

এ নিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি বলছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতের ‘ফরেইন কন্ট্রিবিউশন অ্যাক্টের’আওতায় নিবন্ধন নেয়নি বলে যুক্তি দেখিয়ে মোদি সরকার আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করে। কারণ ভারতে কোনো এনজিওর বিদেশি তহবিল নিতে গেলে ওই আইনে নিবন্ধিত হতে হয়।

তবে এনডিটিভির ওই প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সব নিয়ম মেনেই সংস্থাটি ভারতে কাজ করে আসছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অলীক অভিযোগের ভিত্তিতে ভারত সরকার মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে দমাতে চাইছে। অ্যামনেস্টি’র ব্যাংক একাউন্ট অবরুদ্ধ করা ভারত সরকারের নোংরামির শেষ উদাহরণ।

এ ঘটনায় ভারতের বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা- জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া এবং দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করার কারণেই অ্যামনেস্টি-কে এই শাস্তি পেতে হলো।

এ নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অবিনাশ কুমার বলেন, ‘দু’বছর ধরে ভারতে অ্যামনেস্টির কাজকর্মে বাধাদানের চেষ্টা চলছে। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সরকারের নানা অনৈতিক ও অমানবিক কাজকর্মের সমালোচনা করার জন্যই ইডি-সহ সরকারের নানা সংস্থার মাধ্যমে হেনস্থা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে দিল্লি সংঘর্ষে তার আগে জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। অ্যামনেস্টি শুধু অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। তার জন্য অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ-এর মতো ব্যবস্থা নেওয়া অনুচিত।’

তবে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি-অ্যামনেস্টি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকারে অর্থ নিয়েছে, যা ভারতীয় আইনে অলাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠান নিতে পারেন না।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৭ সালেও একবার অ্যামনেস্টির ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করেছিল ভারত সরকার। সে সময় আদালতে গিয়ে অ্যামনেস্টি কার্যক্রম চালানোর অনুমতি পেলেও তাদের সেই ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে অ্যামনেস্টির মতো বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য লড়াই করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভারত ছাড়লে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মখে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/