ফুলের জন্য ভালোবাসা

সুলতানা রিজিয়া

জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি'
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!
বাজারে বিকায় ফল তণ্ডুল
সে শুধু মিটায় দেহের ক্ষুধা,
হৃদয়-প্রাণের ক্ষুধা নাশে ফুল
দুনিয়ার মাঝে সেই তো সুধা!

'ফুলের ফসল'
– সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

আল্লাহ্ রাব্বুল আল-আমিন এই মহাবিশ্বের সকল মখলুকাতের মহান সৃষ্টিকর্তা। তিনি তার মনের মাধুরি দিয়ে সৃজন করেছেন বিশ্বপ্রকৃতি এবং অসীম আকাশের ( সপ্তাকাশ ) বিস্ময়কর কক্ষপথের রূপরেখা। তার সকল সৃষ্টির মূলেই রয়েছে তার প্রিয় সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত স্বরূপ মানুষ। মানুষের সকল সুখ, শান্তি ,আনন্দের প্রতি তার দয়ার্দ্র অনুভব চিরবিরাজমান। তার এই অনুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ দেখি আমাদের চারপাশে। ঊর্ধ্বে চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র আর  তারকারাজি, মৃত্তিকায় মখমল সদৃশ্য তৃনভূমি। সবুজের আলোছায়া। রঙের আলোকলতা।

আমরা জন্মের পরপরই পরিচিত হই আলোর সাথে, সুবাসের সাথে, রঙের মুগ্ধতার সাথে। সৃষ্টির সৃজনশীলতা বিকাশে ফুলের প্রধান্য স্বয়ং দয়াময় আল্লাহ্ ই হেফাজত করে আসছেন। ফুলে গন্ধ নেই, ভাবতেই পারিনা। ফুলে রং নেই সেটা চিন্তারও অধিক। ফুলে প্রেম নেই প্রেমিক মানতেই পারে না। আল্লাহর রহমতের দান এই ফুল মূলতঃ সুবাস, রং, মানবিকতা, শোভা ও বিশুদ্ধার প্রতীক।

ফুলের সামাজিক আচার অনুষ্ঠান বিশ্বজনীন। সুখে ফুল, দুঃখে ফুল, বিরহে ফুল, বিচ্ছেদে বা মরনে ফুল, প্রেমে ফুল, লজ্জায় (বাসরে) ফুল, লেখকের কলমের কালিতেও ফুল অপরিহার্য। তাই বুঝি বর্ষার প্রথম কদম ফুল সব নর-নারীর হৃদয়ের চাওয়া। এ কারণেই হয়তো বা ভালোবাসার প্রথম পরশ পেয়ে আনন্দে নারী গেয়ে উঠে- ‘ফুলের মালা পরিয়ে দিলে/ আমায় আপন হাতে।’ অন্যদিকে বিরহে কাতর প্রেমিকা বলে-‘আমি তো বসেছিলাম নিয়ে এই গানের সুর ,তুমি তো দিয়েছিলে মোরে কৃষ্ণচূড়া ফুল…। চলে গেছো কোথায় আমায় ফেলে বহুদূর ।’

যদিও আমরা ফুলের ঘ্রাণ ও রং নিয়ে মাঝেমাঝে বিভ্রান্ত হই, হতবাক হই, উৎফুল্ল হই। চিত্ত বিনোদনে ফুল আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ। রঙের উৎসব আমাদের প্রেরণার মঞ্চ, দৃষ্টির শীতলতা, আবেগের ঝাড়বাতি। ফুল ভালোবাসেন না এমন মানুষ বিরল।

ফুল আল্লাহ্ তায়া’লার সৃষ্টির ধারাবাহিকতার ধারক। ফুলের বীজে নতুন প্রানের উন্মেষ ঘটে। এমন শস্য নেই, এমন তৃণ-লতা তরু বা বৃক্ষ নেই যার ফুল হয় না! ফুলের বীজ হয় না! ফুলের রেণু, পরাগেও রয়েছে সৃষ্টির মাহাত্ম্য ! মধুর আদি ও অকৃত্রিম উৎস ফুল। মধু মানব দেহের জন্য উপকারি পথ্য। মধু অনেক প্রজাতি পাখির, কীট পতঙ্গের প্রিয় আহার্য। মধুর শেফা ( আরোগ্য ) পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লিখিত আছে।

ফুল নিয়ে কতশত সঙ্গীতের বাণী ও সুরের মূর্চ্ছনা আমাদের মনে প্রশান্তির পরশ বুলায়। ফুলের জনপ্রিয়তা বর্তমানে ঘরে ঘরে আসন পেতেছে। এক চিলতে বারান্দায়ে, জানালার কার্ণিশে, দরজার কোণে কিম্বা বাড়ির ছাদে ফুলের উল্লাস বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জমে উঠেছে ফুলের চাষ, ফুল এখন পেশার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে। আন্তর্জাতিক আয়ের উৎসে রূপ নিয়েছে ফুল। মানুষের জীবন, সমাজ-সংসারে ফুল এখন আর নিছক চিত্ত বিনোদনের তটে থেমে নেই, ফুলের রোজগারে জীবনের চাকাও সচল হয়েছে।

আসুন, আমরা আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি ফুলকে ভালোবাসি, ফুলের কদর করি, টবে কিম্বা জমিনে ফুলে চাষ করি। এতেই মানুষ ও ফুলের সখ্যতা নতুন মাত্রা পাবে।

সুলতানা রিজিয়া: কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, সংগঠক ও প্রকাশক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নন্দিনী নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করছেন। এই পত্রিকার মাধ্যমে অনেক নতুন লেখক তৈরি হয়েছে। এছাড়া তার রয়েছে প্রকাশনা হাউস সম্রাজ্ঞী। তার প্রকাশিত একক গ্রন্থের সংখ্যা ২৩ টি। সাহিত্য ও সাংগঠনিক অবদানের জন্য তিনি অর্জন করেছেন ত্রিশটিরও বেশি সম্মাননা পদক।   

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/