শুভ জন্মদিন নোবেল বিজয়ী লেখক গাও শিংচিয়ান

আজ ৪ জানুয়ারি, নোবেল বিজয়ী বিখ্যাত চীনা লেখক শিংচিয়ানের জন্মদিন। তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, চিত্রকর, ফটোগ্রাফার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও অনুবাদক। তিনি প্রধানতঃ স্যামুয়েল বেকেট এবং ইউজিন আয়নেস্কোর রচনাসমূহ চীনা ভাষায় অনুবাদ করার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।

১৯৪০ সালের জানুয়ারি ৪ তারিখে চীনের চিয়াংশি প্রদেশের কানচৌ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন কাও শিংচিয়ান। তার বাবা ছিলেন এক চীনা ব্যাংকের কেরানি। আর মা একসময় থিয়েটারে অভিনেত্রী হিসাবে কাজ করতেন। মায়ের প্রভাবে শৈশবেই ছবি আঁকা আর লেখালেখিতে উৎসাহী হয়ে উঠেন শিংচিয়ান। ৫০’র দশকে নানজিংয়ে পাড়ি জমান তার পরিবার। সেখানকার একটি নামি স্কুলে ভর্তি হন শিংচিয়ান। মাধ্যমিক স্কুলে পড়তেই তিনি পশ্চিমা চিত্রশিল্প ও সাহিত্যকর্মের নানা অনুবাদ গ্রন্থ পড়তে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে অনুবাদ সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠেন। ধরে নেয়া হয়-পশ্চিমা সাহিত্যের অনুবাদ পড়ার অভ্যাসের কারণেই পরবর্তীতে অনুবাদক হিসাবে এতটা সফল হতে পেরেছিলেন এই চীনা সাহিত্যিক।

১৯৫৭ সালে গ্রাজুয়েট শেষ করার পর মায়ের পরামর্শে বেইজিং ফরেন স্ট্যাডিজ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন শিংচিয়ান। যদিও তার নিজের ইচ্ছা ছিল ফাইন আর্টর্সে পড়ার। কেননা ছোটবেলা থেকেই শিল্পী হওয়ার আগ্রহ ছিল তার। কিন্তু তিনি মায়ের ইচ্ছাটাকেই প্রাধ্যান্য দেন।

১৯৬২ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসি ভাষা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যোগ দেন শিক্ষকতা পেশায়। পাশাপাশি চলে লেখালেখির কাজও। ১৯৭৯ সাল থেকে পুরোপুরি লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন শিংচিয়ান। একই সাথে তিনি চীনের সমাজতান্ত্রিক দলেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৮১ সালে তিনি অ্যা প্রিলিমিনারি ডিসকাশন অফ দ্য আর্ট অফ মডার্ন ফিকশন লিখে সমসাময়িক লেখক ও সমালোচক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। ১৯৮৬ সালে তার বিখ্যাত বই দ্য আদার শোর প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমা অপসংস্কৃতির সংক্রমণের অভিযোগ উত্থাপিত হলে তিনি চীন সরকারের রোষানলে পড়েন। তাকে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা দেখা দেয়।

একই সময় তার ফুসফুসের ক্যানসার হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। এই মরণব্যাধি তার জীবনটাকে একেবারে পাল্টে দিয়েছিল। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে এবং একই সাথে ক্যানসার হয়েছে ধরে নিয়ে জীবনের আশা একরকম ত্যাগ করেই এক অনির্দিষ্ট ও নিরুদ্দেশ যাত্রায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন গাও শিংচিয়ান। দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস ধরে উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে চলেন ইয়াংজি নদীর কূল ধরে। যদিও পরে জানা যায় চিকিৎসকদের ধারণা ভুল ছিল, তার ক্যানসার হয়নি। কিন্তু তাসত্ত্বেও এই দীর্ঘ উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণকে তার জীবনের মহান অডিসি বলে ধরে নেয়া হয়। বলা হয়ে থাকে-এ হেন অনিশ্চিত অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে তার পুনর্জন্ম হয়েছিল যা তাকে জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ এক অভিজ্ঞ ও পূর্ণবয়স্ক পুরুষে পরিণত করে। এই অডিসিতে তিনি ১৫,০০০ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

এই অভিযানে চীনের বিভিন্ন প্রত্যন্ত স্থানের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সাথে তার পরিচয় ঘটে। এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তীতে তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত উপন্যাস সোল মাউন্টেইন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে তার এই উপন্যাস। আমাদের দেশেও প্রকাশিত হয়েছে  সোল মাউন্টেনের বাংলা অনুবাদ। এই উপন্যাসের জন্য ২০০০ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে তিনি আবার সক্রিয় লেখালেখি শুরু করেন। চীনের তিয়েনআনমেন চত্বরে চীন সরকারের ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ‘ফিউজিটিভ’ নামে একটি প্রেমের গল্প  লিখেন  শিংচিয়ান, যা ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়। এটি প্রকাশের সাথে সাথে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে চীন সরকার। তার সমস্ত সাহিত্য ও চিত্রকর্ম নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে চীন ছেড়ে তিনি ফ্রান্সে চলে যান তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি পাকাপাকিভাবে বসবাস করছেন ফ্রান্সের প্যারিস শহরে। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের নাগরিকত্বও লাভ করেছেন। সেখানে তিনি ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিভিন্ন সময়ে বেইজিং, হংকং, নিউইয়র্ক ও তাইপেতে তার শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। তার শিল্পকর্ম সংগৃহীত রয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েকটি চিত্রশালায়।

আজ এই বিখ্যাত লেখকের ৮২তম জন্মদিনে ওমেন্স নিউজের পক্ষ থেকে তার প্রতি রইলো অশেষ শ্রদ্ধা ও অভিবাদন। শুভ জন্মদিন সোল মাউন্টেনের মহান স্রষ্টা গাও শিংচিয়ান। আমরা আপনার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/