ধর্ষক-ধর্ষণ-গ্রুপ স্টাডি বনাম অভিভাবক

প্রতীকী ছবি

শামীম আরার ফেসবুক ওয়াল থেকে

ফেসবুক থেকে: এ বিষয় কথা বলতে আমি বিদ্ধ হই। কষ্ট পাই। বলার ভাষাও হারাই। ধর্ষণের পর ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে সকলেই সোচ্চার। সবারই এক দাবি, সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। তারপর সব শেষ। ধর্ষকের কি শাস্তি হলো, বাবা-মায়ের কি হলো। — আর কিছু জানা যায়না। ধর্ষক যখন নিজের মুখে অপরাধ স্বীকার করেন ,তখনই তার বিচার হলে কেউ আর এমন কাজ করতে সাহস পেতো না।

দেশের প্রথম সারির  ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলির মধ্যে মাষ্টার মাইন্ড স্কুল একটি। এসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের আড়াই বছর বয়সে ভর্তি করতে হয়। ভর্তি ফি প্রায় এক লাখ ৫০হাজার টাকা। ও লেবেলের শিক্ষার্থীদের বেতন  প্রতিমাসে ২০০০০ হাজার টাকা মাত্র। এরপরও প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী কোচিং করে থাকে। প্রতিটি সাবজেক্টের জন্যে কোচিং ফি মাসে ৬০০০ হাজার টাকা মাত্র। কোভিড কালীন সময়ের প্রথম দিকে কিছুদিন শিক্ষা  কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। তারপর থেকে পুরোদমে অনলাইন ক্লাশ চলেছে। কোচিং সেন্টারগুলোও অনলাইন ক্লাশ চালু করেছে।

যদিও শিক্ষা দান করা স্কুল ও কোচিং সেন্টারগুলোর উদ্দেশ্য, কিন্তু বিরাট অংকের মুনাফা অর্জনেরও এর সাথে জড়িত। তাই অনলাইনের ক্লাশগুলো খুব যত্নসহকারে করানো হয় এবং শিক্ষার্থীদের কঠিন চাপের উপর রাখা হয়। কারণ ক্লাশ মনিটারিং অনেক কড়াকড়ি। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পড়াশুনায় খুব ব্যাস্ত থাকতে হয়। আর এতো ব্যস্ততার মাঝে গ্রুপ কোনও ষ্টাডির প্রয়োজন পড়ে না। আর তাছাড়া স্কুলের ‘ও’ লেবেলে পড়া ছেলে-মেয়েরা মিলে গ্রুপ ষ্টাডিও করেনা। তারপরও ধরে নিলাম মাষ্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফলের জন্য গ্রুপ ষ্টাডি করছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা এখনও স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাইনি।

অভিভাবকদের প্রতি খোলা চিঠি

সাবধানে চলাফেরা করা অপরাধ কিংবা অনগ্রসরতা নয়-আত্মরক্ষার কৌশল মাত্র। মাষ্টার মাইন্ড স্কুলের ছাত্রী সম্প্রতি ধর্ষিতা হয়ে মারা গেছেন। আমি মনে করি ধর্ষকের শাস্তি ফাঁসি নয়, এমন শাস্তি হওয়া উচিৎ যা সারা জীবন তাকে বয়ে বেড়াতে হয়। ফাঁসি তো এক সেকেন্ডের বিষয়। তারপর সব শেষ। কিন্তু ধর্ষকদের এমন শাস্তি দেয়া উচিত যা নিয়ে  তাকে সমাজে দশজনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে হয়। এমন হলে অন্য কেউ এমন অপরাধ করার সাহস পাবে না।

এই সেই অপরাধী

এবার অভিভাবদের উদ্দেশে দু একটা কথা বলবো। আশা করছি এতে কেউ মনক্ষুন্ন হবেন না।

প্রিয় বাবা-মা,

হাসপাতালের বারান্দায় আপনাদের আহাজারি — দিহানের ফাঁসি চাই। আচ্ছা, ফাঁসি হলে কি আপনারা আপনাদের মেয়েকে ফিরে পাবেন? আর কেবল আপরাধীর ফাঁসি চেয়েই কি আপনাদের দায়িত্ব শেষ হবে, কোনও আত্মসমালোচনা করবেন না! আপনারা কতটা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন সেটি খতিয়ে দেখবেন না। যদি বলি — এ ঘটনার জন্যে আপনি বা আপনারাও দায়ী, তাহলে! এবার তাহলে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন-

## কোভিড কালীন সময়ে আপনার মেয়ে বাড়ির বাইরে গেল কেন ?
##  আপনার মেয়ের  ( ও লেবেলের শিক্ষার্থীর  ) গ্রুপ স্টাডির প্রয়োজন
      আছে কি? এ নিয়ে ভেবে দেখেছেন কখনও?
##  আপনার মেয়ের চলাফেরার মনিটারিং করেন কি ?  
     আপনি যদি পারিবারিক এবং সামাজিক অনুশাসন এবং সর্বোপরি ধর্মীয় মূল্যবোধ আপনার  মেয়ের মধ্যে জাগাতেন, তাহলে আজ হয়তো এই দিন দেখতে হতো না। হাসপাতালের বারান্দায় আপনাকে আহাজারি করতে হতো না । তাই ধর্ষক  যেমন  একজন খুনি । আপনিও তেমনি একজন খুনি! আপনি যদি সঠিকভাবে মেয়ের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করতেন তাহলে হয়তো অকালে আপনার মেয়েকে এভাবে প্রাণ দিতে হতো না।

শামীম আরাএকজন ব্লগার ও কলেজ শিক্ষক

বিশেষ দ্রষ্টব্য- চলমান ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যম থেকে বিভিন্ন সচেতন ব্যক্তিবর্গের মতাতম তুলে ধরা হয়। মতামত একজন লেখকের একান্তই নিজস্ব বিষয়। এ বিষয়ে ওমেন্স নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/