চুড়ি ফেরিওয়ালা থেকে যেভাবে আইএএস অফিসার

মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। চেষ্টা করলে যে কারো পক্ষেই যে কোনও কিছু করা বা হওয়া সম্ভব। এই কথার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যেন রমেশ। এক সময় গ্রামের হাটে মাঠে ঘাটে চুড়ি ফেরি করে বেড়ানো রমেশ আজ দেশের একজন বড় সরকারি কর্মকর্তা। যদিও এত বড় পদের জন্য কোয়ালিফাই করা তার পক্ষে সহজ ছিল না। এজন্য তাকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছে। চলুন তাহলে আজ আপনাদের রমেশের গল্প শোনাই।

ভারতের এক দরিদ্র পরিবারের ছেলে রমেশ। বাবা গোরাখ ঘোলাপের ছিল সাইকেল সারাইয়ের দোকান। যা উপার্জন হত তা দিয়ে ৪ জনের পরিবারে কোনও মতে চলে যেত। রমেশের বাবার ছিল মদের নেশা। অতিরিক্ত মদ্যপান করার কারণে অকালে মারা যান তিনি। এরপরই সংগ্রাম শুরু হয়  রমেশের। তিনি তখন সবে স্কুলে পড়েন। তার মধ্যেই সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে।

বাবার মৃত্যুর পর সংসার চালাতে মায়ের সাথে তখন চুড়ি বিক্রি করতে শুরু করেন রমেশ। রোজ মায়ের সঙ্গে চুড়ির বোঝা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। আশেপাশের গ্রামে দিনভর ঝুরে ঘুরে চুরি বিক্রি করতেন। একজন পোলিও আক্রান্ত কিশোর হিসাবে সারা দিন হাঁটাহাঁটি করা সহজ ছিল না তার পক্ষে। ছেলেবেলায় পোলিও হওয়ায় বাঁ পায়ে সমস্যা ছিল রমেশের। বাঁ পায়ে খুব বেশি ভর দিতে পারতেন না তিনি। তা সত্ত্বেও রোজ মায়ের সঙ্গে চুড়ি বেচতে যেতেন।

মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার মহাগাঁওয়ে থাকত রমেশের পরিবার। সেখানে একটাই প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিলেন রমেশ। সারা দিন পরিশ্রমের পর স্কুলের পড়া পড়তেন কেরোসিনের মৃদু আলোয়। তবে ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না রাত জেগে পড়ার। কেরোসিন তেল ফুরিয়ে গেলে নিভে যেত আলো। পরদিন সকালে হলেই শুরু হত গ্রামে গ্রামে চুড়ি ফেরি করা।

ছেলের এই সাফল্যের পিছনে মায়ের অবদান কম নয়

এভাবে লেখাপড়া করে ২০০৯ সালে একটি ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে কলাবিদ্যায় স্নাতক হন রমেশ। তার পর একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু এই জীবনে সস্তুষ্ট ছিলেন না এক সময়ের চুড়ি বিক্রেতা রমেশ। কেননা তার জীবনের লক্ষ্য ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় চাকরি আইএএস অফিসার হওয়া। তার মনে এই স্বপ্ন বপন করেছিলেন এক তহশিলদার। কলেজে পড়ার সময়ই ওই তহশীলদারের সাথে দেখা রমেশের। তারপর থেকেই বড় সরকারি চাকুরি হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছা ডালপালা মেলতে থাকে। কোনও কষ্টই তাকে তার সেই ইচ্ছা থেকে বিচ্যূত করতে পারেনি।

কিন্তু এই কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পড়াশোনার জন্য অনেকটা সময়ের প্রয়োজন ছিল। চাকরি করে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারছিলেন না তিনি। এসময় স্বনির্ভর প্রকল্পের আওতায় ব্যবসার জন্য ঋণ নেন তার মা। এর পরই চাকরি ছেড়ে পুণে শহরে গিয়ে নিজেকে পুরোপুরি ইউপিএসসি-র পড়াশোনায় নিয়োজিত হন রমেশ। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো চাকরির পরীক্ষায় বসেন তিনি। কিন্তু পাস করতে ব্যর্থ হন। তবে এতে উত্তীর্ণ হতে না পারলেও স্টেট ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কেরিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ফলে থাকার জন্য হোস্টেল এবং পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপ পান। এ থেকে নিজের থাকা খাওয়ার খরচ অনেকটাই মিটে যেত। দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর জন্য এসময় পোস্টারে রং করতেন রমেশ।

এভাবে পরিশ্রম করার পর অবশেষে ধরা দেয় সফলতা। ২০১২ সালে আইএএস পরীক্ষায় সফল হন রমেশ। এর কয়েক মাস পরে এমপিএসসি (মহারাষ্ট্র পাবলিক সার্ভিস কমিশন)-এর ফল প্রকাশ হয়।  সেই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন রমেশ। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। আর্থিক সমস্যা আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সব বাধা পেরিয়ে একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা তিনি। কঠোর পরিশ্রম, মানসিক শক্তি আর মায়ের দোয়া ও ভালোবাসার জোরেই মিলেছে এই সফলতা। সে কারণে এক সময়ের চুড়িওয়ালা আজ বহু মানুষের প্রেরণা।

আজ সে বহু ছেলেমেয়ের প্রেরণা

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/