৩০ বছর ধরে ভাঙা ঝুপড়িতে রাত কাটছে বৃদ্ধ গৌর দাসের

হাসানুজ্জামান হাসান

তিন কূলে আপন বলতে কেউ নেই তার। দু’বেলা দুমুঠো খাবারের জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে ঘুরে বেড়ান হতদরিদ্র এই বৃদ্ধ। ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়েই অতি কষ্টে ক্ষুধা নিবারণ করছেন তিনি। গত  ত্রিশ বছর ধরে এভাবেই দিন কাটছে তার। এতক্ষণ ধরে যার কথা বলছিলাম তার নাম গৌরি দাস।

পাখির বাসার মতো একটি ঝুপড়ি  ঘর। কেবল নাম মাত্রই ঘর। সেটি থাকার যোগ্য নয়। ঘরের ভেতর রাত কাটানোর মতো নেই কোনও বিছানা। ঘুমোতে হয় বাঁশের চাংড়াতে। বৃষ্টি হলে সেই ঝুপড়ি  ঘরে থাকা যায় না। তখন ঘুমোনোর জন্য আশ্রয় নিতে হয় অন্য কারও বারান্দায়।  
 
জীবিকার তাগিদে সারাদিন অন্যের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেন বৃদ্ধ গৌরি দাস। টিনের ঝাপড়ি  হলেও উপরের পুরোনো টিন অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে ভরা। ফলে দিনের বেলায় সূর্য শিখা এবং রাতে খোলা আকাশের তারা স্পষ্ট ভাবে চোখে পড়ে। তারপরও তার খোঁজ রাখেন না মেম্বার চেয়ারম্যান।  এমন পরিস্থিতে সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য হয়ে আজও তার ভাগ্যে জোটেনি কোনও ঘর।

‘মোর কাও নাই, ৩০ বছর ধরি একলায় একলায় এই ধাপরিত থাকোং। ভাগিনায় থাকির জন্যে এইকন্যা করিদিছে।ভিক্ষা করি খাং। বউ ছাওয়া কাও নাই। চেয়ারম্যান একনা বয়স্ক ভাতা করিদিছে তা দিয়া চলে না। ঝড়ির দিনোত(বৃষ্টির সময়) থাকির সমস্যা হয়।সরকার কত কিছু দিয়ার নাগছে, মোক তা কই কি দেয় বাহে।কত কষ্ট করি রাইত কাটাং।’-সীমাহীন ব্যাথা আর কষ্ট ভারাক্রান্ত মনে চোখ মুছতে মুছতে কথা বলছিলেন, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের চাঁপারতল এলাকার ১নং ওয়ার্ডের ৭৩ বছর বয়সী গৌরদাস। ত্রিশ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলছেন তিনি। নিজের বলতে কিছুই নেই।

পলিথিন ও খড়ের বেড়া আর ফুঁটা টিনের ছাপড়া ঘরে বসবাস বৃদ্ধ গৌর দাসের। তিনি জীবিকার তাগিদে সারাদিন ঘুরে বেড়ান অন্যের দুয়ারে দুয়ারে। এই বয়সেও সারাড়িন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর জরাজীর্ণ ঘরে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে তার। জনপ্রতিনিধিরা রাখেন না খোঁজ, তাই আজও তার ভাগ্যে জোটেনি স্বপ্নের ঘর। ভাগিনা বিরু রায়ের দেয়া ঝুঁপড়িতে কোন রকমে রাত্রি যাপন করেন তিনি।

স্থানীয় ও প্রতিবেশী আরিফ উদ্দিন জুয়েল জানান, ‘আমার বয়সে এই ধরনের মানুষ দেখিনাই। আগে গ্রামে গ্রামে কাঠ খড়ি সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন তিনি। এখন আর চলার মত পথ নেই, দিন কাটে খুব কষ্টে। মেম্বার-চেয়ারম্যানের চোখে কি পড়ে না? এই হতদরিদ্র লোকটিকে যদি কেউ সাহায্য করে তাহলে তিনি বাকি জীবনটা ভালো ভাবে কাটাতে পারবেন।’
 
সহিদুল হক শাহিন নামে এক কৃষক জানান, ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি ভিক্ষা করে চলেন।স্ত্রী-সন্তান না থাকায় একাই কোনমতে দিন যাপন করেন। ভাগিনা একটু থাকার মত চালা পেতে দিয়েছে,সেখানে রাতে থাকে কোনও রকমে। কুকুর-বিড়াল এদিক দিয়ে ঢোকে ওদিক দিয়ে বের হয়! মানুষের বাড়িতে ঘুরে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকম চলেন। এখন চোখে দেখেন না, কানেও শোনেও কম। এক প্রকার শ্রবণ প্রতিবন্ধী তিনি।

আনোয়ার হোসেন বলেন-এনাক প্রতিদিন বিকেলে ভিক্ষা করতে দেখি, আমার দোকানেও যায়। আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাই এনাকে যাতে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ জানান, তিনি ঘর পাওয়ার যোগ্য। পরবর্তী তালিকায় খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কাকিনা ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক বলেন, ঘরের আপাতত বরাদ্দ নেইা তবে তিনি ঘর পাওয়ার যোগ্য। পরবর্তীতে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/