যে কারণে উচ্চশিক্ষিত দুই মেয়েকে নির্মমভাবে খুন করলেন শিক্ষক মা

ঘাতক বাবা-মায়ের সাথে দুই মেয়ে

বাড়িতে নিজের মা-বাবার হাতেই খুন হলেন দুই বোন। রোববার ভয়ঙ্কর এই ঘটনা রবিবার ঘটেছে অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলার মাদানাপাল্লে মণ্ডলে। পুলিশ মনে করছে, এই ঘটনার পিছনে অন্ধবিশ্বাস জড়িত কোনও প্রথা রয়েছে। প্রতিবেশীদের থেকে খবর পেয়ে পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন নিহতদের মা দাবি করেন, এক দিন সময় পেলেই তারা বাঁচিয়ে তুলতে পারবেন মেয়েদের।

নিহত দুই তরুণীর নাম আলেখ্য (২৭)ও দিব্যা (২৩)। পুলিশ এসে দেখে, তারা দু’জনেই লাল শাড়ি পরা অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে রয়েছেন। তাদের মাথা থেকে গলগল করে রক্ত বেরচ্ছে। জানা গিয়েছে, ডাম্বল দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়েছে তাদের।

নিহত আলেখ্য এমবিএ শেষ করে ভোপালের ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার ছোট বোন সাই দিব্যা বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনে স্নাতক করার পর গান শিখছিলেন। তিনি ভারতের বিখ্যাত গায়ক ও কম্পোজার এ আর রহমানের চেন্নাই মিউজিক একাডেমির ছাত্রী ছিলেন। লকডাউনের কারণে গত কয়েক মাস ধরে তারা বাবা-মায়ের সাথে বাড়িতেই ছিলেন।

মেয়েদের খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত বাবা-মা হলেন ভি পদ্মজা এবং ভি পুরষোত্তম নাইডু। তাদের দু’জনের বয়সই ৫০-এর কোটায়। তারা দু’জনেই উচ্চশিক্ষিত এবং শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত। নিহতদের মা ভি পদ্মজা এমএসসিতে গণিতে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন এবং তিনি মাস্টারমাইন্ড আইআইটি স্কুলের প্রিন্সিপাল। অন্যদিকে তার স্বামী পুরষোত্তম মেয়েদের একটি সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ও রসায়ণের শিক্ষক।
তবে উচ্চশিক্ষা ওই দু’জনের মনের মধ্যে ঘাঁটি গেড়ে থাকা অন্ধবিশ্বাসকে দূর করতে পারেনি।

দুই মেয়েকে খুনের আগে তাদের বাড়িতে পুজো হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতি মনে করতেন, তাদের মেয়েদের মধ্যে কোনও অশুভ শক্তি বাসা বেঁধেছে। এজন্য দুই মেয়েকে নির্মমভাবে খুন করেন তাদের মা।

ঘটনার কিছুক্ষণ আগে দুই মেয়েকে লাল শাড়ি পরে নিজেদের বাড়ি প্রদক্ষিণ করতেও দেখেন প্রতিবেশীরা। অনুষ্ঠানের পর রোববার রাতে (২৪ জানুয়ারি) পদ্মজা দুই মেয়ের মাথায় ডাম্বল দিয়ে সজোরে আঘাত করে তাদের হত্যা করেন। সে সময় তার স্বামী ও মেয়েদের বাবা পুরষোত্তম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও  কোনও রকম বাধা দেননি। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও তাদের প্রথমে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চাননি ওই দম্পতি।

এ নিয়ে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার রবি মনোহরা ছারি বলেছেন, অপরাধস্থলের অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, সেখানে পুজো হয়েছিল। দুই যুবতী লাল শাড়িতে লুটিয়ে পড়েছিল এবং ওই দম্পতি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন।

তিনি আরও বলেছেন, ‘ওই বাড়িতে চারজনই থাকতেন। পদ্মজা মেয়েদের মারার সময় তার স্বামী পুরষোত্তম কোনও বাধা দেননি। পুলিশের ধারণা, এই খুনের সঙ্গে অন্ধবিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে। কেননা পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর নিহতদের মা পুলিশকে বলেন- একদিন সময় দিলে তিনি তার মৃত মেয়েদের বাঁচিয়ে তুলবেন।

ইতিমধ্যে ঘাতক পদ্মজা এবং তার স্বামী পুরষোত্তমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পদ্মজার মানসিক স্থিতি নিয়েও সন্দেহ রয়েছে পুলিশের।  তাদের ধারণা, মেয়েদের খুন করার পর আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ওই দম্পতির। যার পিছনে থাকতে পারে একসঙ্গে অন্য ভুবনে যাওয়ার অন্ধবিশ্বাস।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/