শুভ জন্মদিন বিখ্যাত সাহিত্যিক ইসমাইল কাদারে

আজ ২৮ জানুয়ারি, বিখ্যাত আলবেনিয়ান কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সমালোচক, বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবী ইসমাইল কাদারের জন্মদিন। কেবল লেখালেখি নয়-রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিক হিসাবেও সুনাম রয়েছে তার।

১৯৩৬ সালের এই দিনে আলবেনিয়ার ঐতিহাসিক শহর জিরোকাস্তারের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই মেধাবী লেখক। বাবা হালিত কাদারে ছিলেন একজন পোস্ট অফিসের কর্মচারী, মা হাটিক্সে ডবি গৃহবধূ।

তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি জিরোকাস্তার এক মিশনারি স্কুলে। স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন মস্কোর বিখ্যাত তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন ফ্যাকাল্টিতে। সেখানকার পাঠ শেষে ভর্তি হন মস্কোর গোর্কি ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার্ল্ড লিটারেচারে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে পেশা হিশেবে গ্রহণ করেন সাংবাদিকতা। এরপর দীর্ঘ সময় রাশিয়ায় কাটানোর পর ফিরে আসেন মৃতৃভূমি আলবেনিয়ায়। ১৯৯০ সাল পর্য়ন্ত তার জীবনকালকে দুইভাগে ভাগ করা হয়- আলবেনিয়া ও ফ্রান্স। কম্যুনিস্ট শাসনামলে ১৯৭০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্য়ন্ত আলবেনীয় সংসদের সদস্য ছিলেন এই লেখক।

কিন্তু দেশের বেহাল দশা তার মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এইসব অনুভূতি নিয়ে লিখে ফেলেন প্রথম কবিতার বই ‘ড্রিমস’।  ১৯৫৭ সালে এটি প্রকাশিত হয় মস্কো থেকে। এরপর উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। প্রায় ৩ বছর সময় নিয়ে লেখেন নিজের প্রথম উপন্যাস ‘দ্য জেনারেল অব দি ডেড আর্মি’যা প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। এটি বের হওয়ার পরপরই আলবেনিয়াসহ সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন তোলে এবং সাহিত্যিক হিসাবে সমালোচকদের নজরে পড়েন। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় – দ্য ওয়েডিং (১৯৬৪), দ্য ক্যাসেল (১৯৭০), ক্রোনিকল ইন স্টোন (১৯৭১), ব্রোকেন এপ্রিল (১৯৮০), দ্য পিরামিড (১৯৯২), এ মুনলাইট নাইট, আগামেমন’স ডটার  ইত্যাদি উপন্যাস। তার কয়েকটি বই বাংলায় অনুদিত হয়েছে। এর মধ্যে বুলবুল সরওয়ারের অনুবাদে ‘স্বপ্নমহল’ ও অমর মুদির অনুবাদে ‘উত্তরাধিকার’উল্লেখযোগ্য। কেবল বাংলায়, বিশ্বের চল্লিশটির বেশি দেশে কমপক্ষে ত্রিশটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে তার বিভিন্ন গ্রন্থ।

তবে তার সাহিত্য জীবন কখনই সরল বা মসৃন ছিল তেমনটি বলা যায় না। বারবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন লেখক কাদারে। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক কারণে ও ব্যঙ্গাত্মক কবিতা লেখার অভিযোগে তার বই প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। এমনকি তার বিদেশ ভ্রমণের ওপরও নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল বহুদিন ধরে। রাজনৈতিক কারণে কিছু সময় দেশের বাইরে তার বই প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এমনকি বিদেশ ভ্রমণের ওপরও নিষেধাজ্ঞা ছিল। বলা হয়ে থাকে, তিনি নিজের স্বাধীনতার জন্য যথেষ্ট মূল্য পরিশোধ করা লেখক।

এ অবস্থায় ১৯৯০ সালে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন কাদারে। ফ্রান্সে আশ্রয় নেওয়ার পর তিনি পুরোপুরি স্বাধীনভাবে লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে প্যারিসে তার নির্বাসন ফলপ্রসূ ছিল বলা যায়। তিনি আলবেনীয় এবং ফরাসি এই দুই ভাষাতেই লেখার কারণে তার সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রটি আরও ব্যাপক হয়েছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। ১৯৯৪ সালে তিনি ফরাসি প্রকাশনা ফেয়ার্ডের সাথে নিজের বই প্রকাশের কাজ শুরু করেন।

তবে ১৯৯০ ও ২০০০ এর দশকে আলবেনিয়ার দুই প্রধান রাজনৈতিক দল একাধিকবার আলবেনিয়ার একটি এক্যবদ্ধ সরকারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি কাদারে। তিনি কেবল সাহিত্যচর্চার প্রতিই পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছেন। দু হাতে লিখে চলেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ।

লেখালেখির জন্য পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ। বেশ কয়েক বছর ধরে নোবেল পুরস্কারের জন্য তার নাম উচ্চারিত হয়ে আসছে। যদিও এখনও পর্যন্ত তিনি সেটি পাননি। ১৯৯৬ সালে তিনি ফ্রান্সের প্রেস্টিজিয়াজ প্রতিষ্ঠান একাডেমি অব মর‌্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সেসের আজীবন সদস্য হন। দার্শনিক কার্ল পপারের স্থলাভিষিক্ত করা হয় তাকে। ১৯৯২ সালে পিক্স মন্ডিয়াল কিনো ডেল ডুকা পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে পেয়েছেন প্রিন্সেস অব অ্যাস্টুরিয়াস অ্যাওয়ার্ড।

আরও পড়তে পারেন-ইসমাইল কাদারের দুটি কবিতা

 লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা একবার তাকে গোগল, কাফকা ও জর্জ অরওয়েলের সঙ্গে তুলনা করেছিল। কিন্তু লেখক কাদেরার রয়েছে একটি নিজস্ব ও সর্বজনীন কণ্ঠস্বর যার শিকড় আলবেনিয়ার মাটিতে গভীরভাবে প্রোথিত। যে কারণে তাকে বলা হয়ে থাকে ‘আলবেনিয়ার বিবেক’।

কেবল লেখক হিসাবে নয়, পারিবারিক জীবনেও তিনি দারুণ সফল। তার স্ত্রী হেলেনা কাদারে একজন আলবেনীয় লেখক। তাদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে বেসিয়ানা কাদারে জাতিসংঘে আলবেনীয় রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করছেন। এর আগে তিনি এবং কিউবায় আলবেনিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসাবেও কাজ করেছেন।

আজ এই বিখ্যাত লেখকের ৮৬তম জন্মদিবসে ওমেন্স নিউজের পক্ষ থেকে রইলো প্রাণঢালা শ্রদ্ধা ও অভিবাদন। শুভ জন্মদিন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাহিত্যিক ইসমাইল কাদারে। আমরা আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি।

শুভ জন্মদিন বিখ্যাত গল্পকার আন্তন চেখভ

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/