খামার করে বেকারত্ব ঘুচল সালামের

খামারের গাভীদের পাশে সালাম

হাসানুজ্জামান হাসান

একসময় বেকার ছিলেন আব্দুস সালাম। তবে মন থেকে চাইলে যে পরিবর্তন সম্ভব তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই যুবক। তার উদ্যম, একাগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রমে বাড়িটি এখন খামারবাড়ি হিসেবে গড়ে উঠেছে। সালাম লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা পাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা।

২০১০ সালে সরকারি আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যাালয় কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করার পর স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হয়ে ভাল চাকরি করবেন। সে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় বেছে নিয়েছে ভিন্ন পথ। আর তা পূরণে এগিয়ে আসেন চাকরিজীবি বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ। ফলে নিজ বাড়িটিকে ঘিরেই একের পর এক গড়ে তোলেন গাভী,কবুতরের খামার ও মাছ চাষ প্রকল্প।

সালাম জানায়,লেখা পড়া শেষ করে ইচ্ছে ছিল একজন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। তবে শত চেষ্টার পরেও স্বপ্নটা যখন কুয়াশার আচ্ছোদনে ঢেকে যায়। বেকারত্ব কাধের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমি বেছে নেই খামার করার পরিকল্পনা।

বেকারত্বকে ‘গুডবাই’জানাতে চাকরির বিকল্প হিসেবে নিজবাড়িকে ঘিরেই এই কর্মমূখী উদ্যোগ নেই। উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছেন। আমার ভাই ও ভাবি কাজে সহায়তা করছে। সালাম বেকার যুবকদের উদ্দেশ্য জানায়, কেউ যদি চাকুরির আশায় না থেকে সৎভাবে চেষ্টা করে তবে সফল হবেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, সালামের খামারবাড়িতে ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতরের মেলা। আর শোনা যায় বাক বাকুম শব্দগুঞ্জন। এরপর চোখ ঘুরালেই দেখা যাবে একটি উঁচু ঘরে খড়ের স্তূপ ও উত্তরে মাছ চাষ আর পূবে গরুর খামার। তিনি কবুতরগুলোর থাকার ব্যবস্থা করেছেন থাকার ঘরের উপরের দ্বিতল অংশে। এদের দেখাশোনার জন্য নীচ থেকে উপরতলা পর্যন্ত রয়েছে একটি লম্বা মই। মাছ,কবুতর ও গাভীপালনের কাজ করতে হয় নিজেকেই।

সালামকে ব্যস্ত থাকতে হয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। কাজে সহযোগিতা করেন মা ও ভাবি। বিশেষ করে প্রতিদিন প্রায় ২০ লিটার পরিমান দুধ দোহনের কাজটি করতে হয় সালামের ভাবি মৌসুমী আক্তারকেই।

মৌসুমী বলেন, এসব করতে অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু দুধ বিক্রির টাকা হাতে এলে তখন আর সেটা মনে হয়না। তাই আমি বাড়ির কাজের পাশাপাশি সময় দেই। এতে সালামের অনেকটা সুবিধা হয়।

তবে প্রশিক্ষণ না থাকলেও খামার পরিচালনায় সালাম নানা পদ্ধতি, তথ্য, উপাত্ত ও প্রযুক্তিগত দিক সম্পর্কে জানতে সাহায্য নেন তার ব্যবহৃত একটি স্মার্টফোন ও প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকেই। সালাম আরো যে সমস্যাটির প্রতি জোর দেন তা হলো দুধ বাজারজাতকরণ। এজন্য দুধ সংগ্রহে সরকারি উদ্যোগ কামনা করেন তিনি।

সালামের খামারবাড়ি সম্পর্কে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.নুরুল ইসলাম বলেন, শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগেও যে ভালো কিছু করা যায় সালাম তার উদাহরণ। যিনি বেকারত্বকে বিদায় জানানো এক অদম্য সৈনিক। সালামের উদ্যোগ ও আন্তরিকতা দেখে আমরা প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রাখছি। খামার উন্নয়নে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি আশাকরি সে ভালো কিছু করবে।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/