আবু সাইদ কামালের গল্প ‘ঈদের উপহার’

Abu shayed Kamal

ঈদের উপহার

পাহাড় পাদদেশের এক সীমান্তবর্তী উপজেলা সদরে কর্মরত ফয়সাল আহমেদ। নতুন চাকুরি। নিজের উপজেলা সদরে চাকুরিরত থেকে গাঁয়ের বাড়িটা গুছিয়ে নিতে পারছে বলে আপাতত খুশি ফয়সাল। একই কর্মস্থলে তিন বছর চাকুরি করার পর হঠাৎ করেই বিয়ে। তিন বছরের মধুর দাম্পত্য জীবনে স্বপ্নের ঘোর কাটতে না কাটতেই ঘটে ছন্দপতন। সিজার অপারেশনে শিশুকন্যার জন্ম হলেও তার মাকে পরপারে পাড়ি দিতে হয়। তখন আকাশ ভেঙে বিনা মেঘে বজ্রপাত হয় ফয়সালের মাথার ওপর। সদ্য গোছানো সংসার তাসের ঘরের মতো ভেঙে চুরমার হয়। আকস্মিক এমন ভয়াল আঘাতের জন্য প্রস্তুত ছিলো না সে। শরতের জোছনা মুখর স্বপ্নিল রাত যে হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড করে দেবে, এ কথা কখনো ভাবনি ফয়সাল। দাম্পত্য সুখের উচ্ছসিত মুখের হাস্যোজ্জ্বল বিভা টুটে গিয়ে সেখানে স্থায়ী নোঙর ফেলেছে নিটোল বিষণ্ণতা। স্ত্রী বিয়োগের শোকে বিধুর ফয়সালের মুখের দিকে তাকানো যায় না। তার সমস্ত সত্তা নিংড়ে, চুইয়ে চুইয়ে ঝরে পড়ে অব্যক্ত কান্না। মনোজগত গভীর বেদনার এক নির্ঝরণীতে রূপ নেয়। কিন্তু তার হৃদয়মথিত শোকের মাতম না কোনো শাব্দিক কান্নায়, না কোনো বাহ্যিক আচরণে প্রকাশ করতে পারে। অনেক সময় সে তার পুঞ্জিভূত বেদনাকে অন্য দশটা মানুষের বেদনার সাথে একাত্ম করতে চেষ্টা করে। কিন্তু কেনো যেন তা পারেনি। মানুষের জীবন-জগৎ নিয়ে কী যেনো ভাবনার ঘোরে থাকে। বহুদিন বিষণ্ণ মনে ধ্যানমগ্ন থাকার পর সে বুঝতে পেরেছে: মহৎ শিল্পমাত্রই গভীর বেদনার কাছে দায়বদ্ধ। তাই ফয়সাল সিদ্ধান্ত নেয়, সে শিল্প চর্চায় ব্রতী হবে। এ জন্য চাই প্রস্তুতি-চাই পড়াশোনা।
হঠাৎ স্ত্রীবিয়োগের মতো মর্মান্তিক ঘটনার পর ফয়সালের যাপিত জীবনের পর্বে পর্বে আসে পরিবর্তন। এতদিনে সে বেশ এলোমেলো হয়ে গেছে। অগোছালো হয়ে গেছে সাংসারিক জীবন। আক্ষেপ, অনুশোচনা, আফসোস আর হুতাশনের নিরন্তর দহন চলে মনোজগতে। শুধু ভাবে, কী হলো, এ কী হলো আমার…
এ সব বলে শত মাথা কুটেও যেনো শান্তি পায় না, পায় না কোনো স্বস্তি। বাহ্যিক দিক থেকে আপাত দৃষ্টে তাকে বিষণ্ণ ও শান্ত মনে হলেও তার ভেতর রাজ্য বড়ই অস্থির। উত্তেজনায় কখনো এতোটা বেসামাল হয় যে, নিজেকে সুস্থির রাখাই দায় হয়। তখন পরম ধৈর্যে অস্থির চিত্তকে স্বশাসনে আনতে চেষ্টা হয়। এ দুঃসময়ে বই ছাড়া কেউ আর তার সহায় হয় না। এভাবে জ্ঞান সাধনায় মনোযোগী হয়। উপজেলা পরিষদের পাবলিক লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করে চলে।
একদিকে জ্ঞান সাধনা অন্যদিকে বিয়োগান্ত ঘটনার দহন-ক্ষরণে এরই মাঝে সে বুঝতে পেরেছে, প্রতিটি বিয়োগান্ত ঘটনাই মানুষকে শোকের অথৈ সাগরে ভাসায় ঠিকই। কিন্তু স্ত্রী বিয়োগের ঘটনায় তার হৃদয় জগতে অবিনাশী এক আগ্নেয়গিরি যে আঘাত হেনেছে, এর ফলে সৃষ্ট ক্ষত থেকে নিরন্তর ক্ষরণ চলছেই। আর তাই নৈঃস্তব্ধতায় বিবশ মনে অহর্নিশ বাজতে থাকে করুণ বীণার সুর। পড়াশোনা করে সে জানতে পারে, অনুরূপ বেদনার সুরে জালাল খাঁ তো রচনা করেছেন তার অবিনাশী গান। প্রখ্যাত কথা শিল্পী বিভূতিভূষণও অনুরূপ কষ্টজাত দহনে দগ্ধ হয়ে সৃষ্টি করেছেন কালজয়ী কথাসাহিত্য। তার মতে, ‘দুঃখ মানুষের জীবনের বড় সম্পদ’। চিরকালীন সৌন্দর্যের পূজারী কবি জন কীটসও এমনি আগুনে পুড়ে পুড়ে করেছেন কাব্য সাধনা। তার বাবা- মা মারা যান ক্ষয় রোগে। তাতেও তেমন বিচলিত হননি তিনি। কিন্তু ক্ষয় রোগে আক্রান্ত ছোট ভাই কিশোর টমকে প্রাণপণ সেবা করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। বরং তার মাঝে ক্ষয়রোগ স্পষ্ট হয়ে উঠে। সে সময় তিনি পঁচিশ বছরের সুঠাম যুবক। নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! যে সময়ে তিনি ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে বুঝতে পেরেছেন, ঠিক সে সময়েই অতি গোপনে তার পছন্দের প্রেমিকার অন্যত্র বাগদান হয়। আর সে সময়েই তিনি চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। এভাবে একদিকে স্নেহের অনাথ ছোট ভাই হারানোর বিয়োগব্যথা, অন্যদিকে প্রেমিকার দেয়া আঘাত, ক্ষয়রোগে কবলে পড়ে ধীরে ধীরে জীবনী শক্তি হ্রাস আর চরম আর্থিক টানাপোড়েন। ফয়সাল মনে করে, এ চতুর্মুখী কষ্টের আগুনে নিজে দদ্ধ হয়েছেন বলেই জন কীটস বিশ্ব নন্দিত। আর এ জন্যই কাব্য জগতের প্রতি ফয়সালের যত আগ্রহ।

ছাত্রজীবন থেকেই অল্প-স্বল্প লেখার অভ্যেস ছিল তার। লিখতো আড়ালে- আবডালে। বন্ধু-বান্ধবদের দু’চারজন জানতো ফয়সাল নিভৃতে লেখালেখি করে। বন্ধুদের সীমিত পরিসর ছাড়া আর কেউ এ বিষয়ে জানতো না। তাই ওভাবে তার আত্মপ্রকাশও হয়নি। কিন্তু বিপত্নীক হয়ে আবার পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে লিখে যায় ফয়সাল। লিখে যায় শাসিত আবেগের দুঃখবোধজাত-হৃদয় নিংড়ানো ফসল। নান্দনিক শব্দ সুষমায় পঙক্তিমালা লিখার প্রয়াস চালায়। আর এভাবেই শুরু হয় তার সাহিত্যচর্চা। পশ্চাৎপদ উপজেলা সদরে অবস্থান করে একাকী কাব্যচর্চা করে চলে। প্রায় ছ’সাত মাসের মধ্যে সে তৈরি করে ফেলে কবিতার একটি পাণ্ডুলিপি। কেমন হয়েছে তার পাণ্ডুলিপির কবিতগুলো, তা দেখানোর জন্য চলে যায় জেলা শহরে। সহপাঠী বন্ধু রাজু আহমেদ। তাদের বাড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্রে। জেলা শহরে অসস্থান করে একই সাথে বাংলায় এম এ পড়তো ওরা। রাজুর সাথেই প্রথম কবিতার পাণ্ডুলিপি নিয়ে কথা বলে ফয়সাল। এ ব্যাপারে রাজু বলে, আমার এক বড় ভাই জেলা শহরের সাহিত্য পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক। চলো তোমাকে তার সাথে আলাপ-পরিচয় করিয়ে দিই।

শফিকুল ইসলাম শফি সে সাহিত্য পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক। রাজু আহমেদকে নিয়ে শফির ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয় ফয়সাল। পরিচয় পর্ব শেষ হলে কবিতার পাণ্ডুলিপিটা শফিকে দেখায়। পাণ্ডুলিপি হাতে নিয়ে বিজ্ঞের মতো শফি উল্টে-পাল্টে দেখে। ওদিকে ফয়সাল দুরুদুরু বুকে শফির মন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। শফি ক’টা কবিতা পড়ে রাশভারি গলায় বলে, যেহেতু আপনি কবিতার পাণ্ডুলিপি তৈরি করে ফেলেছেন, লিখতে পারবেন- অন্তত এইটুকু আশা করা যায়।
জেলা পর্যায়ের একটি সাহিত্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্য শুনে ফয়সালের চোখেমুখে প্রত্যাশার ঝিলিক ছড়ায়। এ সময়ই মি. শফি আবার বলে, তবে-
-তবে!
-আপনাকে নিরন্তর সাধনা করে যেতে হবে। আর আমাদের সাহিত্য সংগঠনে নিয়মিত আসতে পারেন। এখানে সপ্তাহে একদিন সাহিত্যের অধিবেশন হয়। আশা করি অধিবেশনে আসলে কবিতাসহ সাহিত্যের অন্যান্য ধারা সম্পর্কে সঠিক দিক নির্দেশনা পাবেন।
-জি আচ্ছা। আমি নিয়মিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আসরে উপস্থিত থাকতে চেষ্টা করবো।
 এই বলে মি. শফির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উভয়ে বের হয়। পরের সপ্তাহ থেকেই সে পশ্চাৎপদ উপজেলা সদর থেকে বেশ কষ্ট করে জেলা শহরের সাপ্তাহিক সাহিত্য আসরে উপস্থিত হয়। প্রথম থেকেই সাহিত্য সংগঠনের সদস্যদের প্রতি উচ্চ ধারণা পোষণ করে এসেছে ফয়সাল।
সাপ্তাহিক অধিবেশনে যোগদান করে ফয়সাল পরিচিত হয়েছে অন্য লেককদের সাথেও। কিছুদিন সাহিত্যের আসরে এসেই বুঝতে পারে জেলা পর্যায়ের সাহিত্য পর্ষদের বর্তমান যে সভাপতি, তিনি লেখক নন। তার বংশের কেউ হয়তো বা লেখক ছিলেন, সেই সূত্রে তিনি এ সংগঠনের এ পদে আছেন। প্রকৃত লেখক যারা এ সংগঠনে আসেন, ওরা নিরীহ প্রকৃতির। তবে প্রকৃত লেখকের সংখ্যা যে একেবারে কম তা বুঝতে ফয়সালের খুব বেশি দেরি হয়নি। অলেখকদের ভিড়ে সাহিত্য সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্যই যে ব্যহত হচ্ছে তা প্রকৃত লেককদের মাঝে আলোচনাও হয়। এদের মাঝে দু’একজন নিষ্ঠাবান লেখকের সাথে পরিচয় হয় ফয়সালের। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার ঠিকানা সংগ্রহ করে সে। তারপর লেখা পাঠাতে থাকে বিভিন্ন দৈনিকে। তাতে আশানুরূপ সাড়াও পায়। লেখা ছাপা হতে থাকে দৈনিক গুলোতে। এভাবে নিজের ওপর বিশ্বাস জন্মাতে থাকে তার।
এ মাধ্যমে কাজ করার জন্য জেলা শহরে একটা পরিবেশ আছে। তাই উপজেলা থেকে বদলি হয়ে ফয়সাল আসে জেলা শহরে। যে শিশু সন্তানটি মা হারিয়েছে, তাকে তো লালন পালন করা দরকার। তারওপর পারিবারিক জীবনযাপনের জন্যও একজন ঘরণী প্রয়োজন। আর তা বেশি অনুভব করে শিশু সন্তানটির নানার বাড়ির লোকেরাই। কারণ শিশুটির তো একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ দরকার। আর সে জন্যই শিশুটির নানার বাড়ির দিক হতে উদ্যোগটা নেয়া হয়। তাদের আত্মীয়ের মধ্যেই এক মেয়ের সাথে আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসে ফয়সাল। জেলা শহরেই তাদের বাড়ি। শিশু সন্তানটি পায় তার মা। শুরু হয় ফয়সালের জীবনের ভিন্ন আর এক অধ্যায়। ব্যক্তি ফয়সাল যদিও ফের সংসার জীবনে নিষ্ঠাবান হতে সচেষ্ট হয়, তবে স্ত্রী বিয়োগের পর মনটা যে বাউল হয়ে গেছে, সেটি আর ঘরে ফিরে না। তাই সে লেখালেখিতে আরও নিষ্ঠাবান হয়।
জেলা শহরের রেল স্টেশনের কাছেই খোশ মহল রেস্টুরেন্ট। ঐতিহ্যবাহী এ রেস্টুরেন্টে কবি সাহিত্যিকদের আড্ডা বসে অনেক আগে থেকেই। আড্ডাটা জমে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। কারণ, ঐ দিনই দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সাহিত্য সাময়িকী প্রকশিত হয়। জেলা পর্যায়ের লেখকদের আনেকের লেখা ছাপা হয় সাময়িকীগুলোতে। ওরা খোশমহল রেস্টুরেন্টের মোড়ে পত্রিকার দোকানে দৈনিকগুলোর সাময়িকী দেখে। যারা শহরের সেরা কবি-লেখক হিসেবে  ইতোমধ্যে আত্মপ্রচার করেছেন এবং প্রচার করে যাচ্ছেন, তাদের মোড়লিপনা আড্ডাতে প্রকাশ পায়। নবীন লেখক হিসেবে ফয়সাল আহমেদ স্টলের এক কোণে বসে থাকে। কিন্তু এরই মাঝে একটা অঘটন ঘটে। পনের বিশ বছরের সাধনায় জেলা শহরের যারা এখনো স্থান করে নিতে পারেনি, দেশের তেমন শীর্ষ স্থানীয় একটি পত্রিকার সাময়িকীতে হঠাৎ একদিন ফয়সালের কবিতা ছাপা হয়। এতে সাড়া পড়ে যায় জেলা শহরের কবি মহলে। ইতোমধ্যে যারা সেরা বলে এক ধরনের মোড়লিপনা দেখিয়ে যাচ্ছিল, ওরা এটু নড়েচড়ে বসে। তাদের কারো কারো রাশভারি গলায় ফয়সাল আহমেদের নাম উচ্চারিত হতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে প্রবীণদের সাথেও আড্ডায় বসে ফয়সাল। এভাবে জেলা শহরের সেরা কবি বলে আত্মপ্রচারকারী মুজাম্মেল হক আকন্দের সাথেও আড্ডা হয়। দু’একদিন পর পর দেখা হয় তার সাথে। বাড়ে ঘনিষ্ঠতা।

ক’দিন পর কবি আকন্দ ফয়সালের কাছে অভিনব ভঙ্গিতে একটা প্রস্তাব দিয়ে বসে। ফয়সালের কাছে প্রস্তাবটি অসঙ্গত মনে হলেও শহরের সেরা বলে কবি কথিত আকন্দের তো এরূপ প্রস্তাব দেওয়া মামুলি ব্যাপার। আকন্দ বলে, এই ফয়সাল! একদিন এক বোতল মাল খাওয়ান না।
প্রস্তাবটা শুনেও না শোনার ভান করে ফয়সাল। এবং মনে মনে বলে, আমি তোমাকে মদ কিনে খাওয়াবো, ভেবেছো! যে কিনা তার এলাকা থেকে মদ্যপ ও মাতালদের দৌরাত্ম দমনের জন্য আন্দোলন করেছে, বিক্রির জন্য যেসব উপজাতি বাড়িতে মদ তৈরি করে, সেসব বন্ধসহ এলাকায় থেকে মদের আসর দূর করার জন্য সফল আন্দোলন করেছে; সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে কোনোদিন মদ স্পর্শ করেনি, সে কিনা তোমাকে মদ কিনে খাওয়াবে?
ফয়সালের চোখে-মুখে ফুটে ওঠা দৃঢ় অভিব্যক্তি অধ্যয়ন করে কবি আকন্দ আর প্রস্তাবটির পুনরাবৃত্তি করেনি। তবে সে নির্লজ্জ, দুর্বিনীত এবং নাছোরবান্দা। ফয়সাল জানে প্রস্তাবটা সে দেবেই।
পরদিন শবে বরাতের রাত। সন্ধে বেলায় ফয়সাল শবে বরাতের নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়েছে। মসজিদে ঢোকার আগে সে খোশমহল রেস্টুরেন্টে একবার ঢুঁ দেয়। দেখে কবি আকন্দ বসে আছে। তার সাথে বসে কিছুক্ষণ। সংক্ষিপ্ত ঐ আড্ডাপর্বের এক পর্যায়ে আকন্দ বলে, এই ফয়সাল! গতকাল বলেছিলাম না, এক বোতল পানীয়’র ব্যবস্থা করেন।
– ইচ্ছে করলে সে ব্যবস্থা তো করাই যায়। তবে তার আগে চলেন একটা কাজ করি।
-কী কাজ?
-আজ পবিত্র শবে-বরাতের রাত না!
-হ্যাঁ!
-চলেন বড় মসজিদ থেকে আগে শবে-বরাতের নামাজ পড়ে আসি।
ফয়সালের এমন অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব শুনে কবি আকন্দ মুহূর্তের জন্য কেমন যেন নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন হয়। হঠাৎ তার এমন অপার্থিব নীরবতা দেখে ফয়সাল বলে, কী আকন্দ ভাই! যাবেন কী?
-হ্যাঁ চলেন।
বলেই একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে। তারপর বলে, একটু বসেন।  চলেন দু’জনে দু’কাপ চা খেয়ে নিই।
-আচ্ছা।
শবে-বরাতের রাতে বড় মসজিদের জামাত শেষ হয়ে গেছে আগেই। ফয়সাল কবি আকন্দকে নিয়ে প্রথমে ওজু করে। নামাজ শেষে মুসল্লিদের তখন ফেরার পালা। এ জন্যই মসজিদের নিচতলায় তখনো ঠাসা ভিড়। ওরা দু’জন ভিড় মাড়িয়ে মসজিদের দোতলায় উঠে। দোতলা তখন অনেকটা ফাঁকা। ফয়সাল কবি আকন্দকে নিয়ে এবাদতে মগ্ন হয়। নামাজ আদায় শেষে ফয়সালই দু’জনের মাঝে মোনাজাত পরিচালনা করে। মোনাজাতের প্রথমেই সে কবি আকন্দকে নিয়ে মহান স্রষ্টার উদ্দেশ্যে তওবা করে। অতঃপর মহান আল্লাহর প্রতি নিবেদিত হয়ে হৃদয়স্পর্শী ভাষায় প্রার্থনা করে। এভাবে মহান আল্লাহর প্রতি নিজেদের সমর্পণ করে আগামী দিনে তার প্রদর্শিত পথে জীবন পরিচালনার জন্য অঙ্গীকার করে। মোনাজাত শেষে পরস্পরের অগোচরে দু’জনই নিজ নিজ চোখের জল মুছে। অতঃপর মসজিদ হতে বের হয় ওরা।
এ ঘটনায় আকন্দের ভেতরে কেমন যেন ভাঙচুর চলে। সেই রাতে কবি আকন্দ আর ফয়সালের কাছে মদ কিনে দেবার বায়না ধরেনি। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হতে হতে অনেক রাত হয়ে গেছে। কাজেই আর কোথাও তেমন দেরি করেনি কেউ। ওরা দু’জনই চলে যায় নিজ নিজ বাড়িতে।
পরেরদিন বিকেলে ফের দেখা হয় দু’জনের। ফয়সাল তাকে আসরের নামাজ আদায় করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। আকন্দ তাতে রাজি হয়। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে ফেরার পথে ফয়সাল বলে, আকন্দ ভাই!
-জি!
-আপনার ছেলে-মেয়ে কয়জন?
-দুই ছেলে, এক মেয়ে।
-আপনি কি চান আপনার ছেলে দু’টি বড় হয়ে মাদকাসক্ত হোক?
-কখনও না।
-আপনার নিজের যদি ঐ অভ্যেসটা থাকে, তাহলে আপনার ছেলেরা আপনাকে অনুকরণ করবে-এটাঁই তো স্বাভাবিক। সন্তানদের স্বার্থে আপনার ঐ অভ্যেসটা অন্তত ছাড়া করা উচিৎ, তাই না!
ফয়সালের এ কথা শুনে কবি আকন্দ কিছুক্ষণ নীরব থাকে। কোনো কথা না বলে নিজের সাথেই যেন বোঝাপড়া করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর নৈঃশব্দের জট খুলে কবি আকন্দ ভারী গলায় বলে, হ্যাঁ! আপনি ঠিকই বলেছেন। অভ্যাসটা আমিও ছাড়তে চাই। কিন্তু পারি না। তবে পারবো, যদি আপনি আমাকে  একটু সাহায্যে করেন।
-কেমন?
-আমি এখন চরম নিঃসঙ্গ। আর এ নিঃসঙ্গ অবস্থায় একটু মানসিক শান্তি খোঁজার জন্য মদ্যপ বন্ধুদের সাথে যাই। আমি যদি এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই, তবে ওসব বন্ধুদের হাতছানি উপেক্ষা করতে হবে। যদি আপনি দয়া করে আমাকে সঙ্গ দেন, সাথে থাকেন; তাহলে ওরা আমাকে ডাকার সুযোগ পাবে না।
– ঠিক আছে, আমি না হয় সঙ্গ দেব। তবু আপনি ঐ ভূবন ছেড়ে আসুন।
– আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করবো

এরপর থেকে কবি আকন্দ মাঝে-মধ্যে ফয়সালের অফিসেও চলে যায়। প্রতিদিন সে দিবসের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ ফয়সালের সাথে কাটায়। মদ্যপান ছেড়ে সে মসজিদে নামাজ আদায়র করতে যায়। সময় নিয়ে নামাজ পড়ে। এভাবে ওদের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। ফয়সাল নির্দ্বিধায় কবি আকন্দের বিচরণ ক্ষেত্রগুলোতে যায়। আকন্দের একটি বিচরণ ক্ষেত্র হলো স্টেশন রোডের হিজরা সমাজ। প্রতিদিন স্টেশন রোডের একটি স্থানে ওরা জড়ো হয়। উন্নত বক্ষধারী যে সব হিজরা বেশি অর্ধেক নারী, ওদের সাথে বুক মিলাতে বেশ মজা পায় কবি আকন্দ। ফয়সালের সামনেই নির্দ্বিধায় এক কমনীয় হিজরার সাথে বুক মিলায় কবি আকন্দ। শুধু তাই না, ফয়সালকে তাদের সাথে পরিচয়ও করিয়ে দেয়। জেলা শহরের এ যেনো এক অন্ধ গলি। ফয়সাল বুঝতে পারে, এমন কানা গলিতেও আকন্দের রয়েছে অবাধ বিচরণ। হিজরা সমাজের সবাই তার পরিচিত। পুরুষ যৌনকর্মীদের সাথে সমকামীতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য স্টেশন রোডে যে দু’টি নিম্নমানের হোটেল রয়েছে এ তথ্যটি ফয়সাল অনেক পরে জানতে পেরেছে।
ফয়সালের সাথে নিবিড় ঘষ্ঠিতার জন্য তার অফিস পাড়ায় আকন্দের যাতায়ত বেড়ে যায়। বিশেষ করে কবি আকন্দের দু’একজন সতীর্থ লেখক বন্ধু ফয়সালকে বলে, আপনি এই মদ্যপ লোকটার সাথে চলাফেরা করেন কেনো? সঙ্গ দোষে আপনিও শেষে বিপথে চলে যান কিনা, তেমন ভেবে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন।
-দেখুন, সব জেনে শুনেই আমি তার সাথে চলাফেরা করি। অন্ধকার থেকে তাকে আলোর পথে আনবো, এটা আমার লক্ষ্য।
-বলেন কী! নেশাখোরেরা কখনো ভালো হয় নাকি?
-হতেও তো পারে। ইতোমধ্যে সে মদ্যপান ছেড়ে দিয়েছে। এমন কী, আমার সাথে সে মসজিদেও যায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।
-ভালো, খুব ভালো। আপনার সংস্পর্শে এসে একটা লোক যদি আলোর পথে ফিরে আসে-তা হবে আপনার জন্য একটা মহৎ কাজ।
এই বলে ওদের কাছ থেকে ফয়সাল বিদায় নেয়। সেদিনই বিকেল বেলায় ফয়সাল অফিস শেষে যখন বের হবে ভাবছে, তখনি কবি আকন্দ আসে। তাকে নিয়ে ফয়সাল বের হয়। দু’জন হাঁটে ব্রহ্মপুত্রের সম্মোহনী পাড় ঘেঁষা পার্কের রাস্তা ধরে। গাছের ছায়ায় কংক্রিটের বেঞ্চে পাশাপাশি বসে ওরা। গল্প করে অনেকক্ষণ।

দুই

ক’দিন পরের ঘটনা। সেদিন বিকেল বেলায় অফিসের কাছের এক চায়ের স্টলে এক গল্প লেখকের সাথে ফয়সালের দেখা। গল্পকার নাজিম উদ্দিন ফয়সালকে বলে, কবি আকন্দের সাথে দেখি আপনার গলায় গলায় ভাব। তার সাথে কারো বন্ধুত্ব তো দীর্ঘদিন টিকে না। আপনি তো একজন ভদ্র মানুষ। আকন্দ সম্পর্কে কতটুকু জানেন!
-সব না জানলেও কিছু কিছু তো জানি। তবে এখন সেও ভদ্র হওয়ার পথে। নেশা-টেশা করে না।
-হে: হা: হা:। আমগরে গাঁজা খাওয়া শিখাইয়া সে কি না ভালো মানুষের বেশ ধরছে।
জবাবে ফয়সাল আর কোনো কথা বাড়ায়নি। বরং জরুরী কাজের অজুহাত দেখিয়ে বিদায় নেয়। রওয়ানা হয় অফিসে। গিয়ে দেখে কবি আকন্দ তার টেবিলের পাশে বশে অপেক্ষা করছে। অফিস ছুটির পর বের হয় ওরা দু’জন। শহরে কনফেকশনারি দোকানে ফয়সালের কিছু কেনাকাটা ছিলো। ওসব কেনাকাটা শেষ করতে করতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। ফয়সাল বাসার উদ্দেশে রিকশায় উঠে। আকন্দও তার সাথে ওঠে। ফয়সাল বলে, আমার সাথে কোন পর্যন্ত যাবেন!
– আমার তো হাঁটা হয় না। আপনার বাড়ির এলাকাটা নিরিবিলি তো, ওখানে গিয়ে আবার হেঁটে হেঁটে আসবো।
-ও আচ্ছা।
শহরের ব্যস্ত এলাকা ছেড়ে রিকশাটা যখন শহরতলির নিরিবিলি পথে যাচ্ছে, তখন চারদিকে আবছা অন্ধকার। এমন নিরুপদ্রব রাস্তায় আকন্দ হঠাৎ সুঠামদেহী ফয়সালের দু’বাহু জড়িয়ে জোরে চেপে ধরে কী যেন দৈহিক আনন্দ খুঁজে চলে। সঙ্গমরত রমনী পরম সুখে আত্মহারা হয়ে ক্রীড়ামত্ত পুরুষকে আঁকড়ে ধরে যেমন আনন্দ পায়, তেমনি যেন অনন্দ খোঁজে আকন্দ। প্রতিক্রিয়ায় বিরক্তি ঝেড়ে এক ঝটকায় বাহুর বন্ধন মুক্ত হয়ে ফয়সাল বলে, এ কেমন বিকৃতি আপনার? ছি:…
ফয়সালের ঘৃণা প্রকাশের তোড়ে আকন্দ আর পাশে বসে থাকতে পারেনি। রিকশা থেকে নেমে বিপরীত দিকে হাঁটতে শুরু করে। ফয়সাল তখন ধাবমান রিকশায় বসে আত্মখেদে মনে মনে বলে, এ কাকে আমি আলোর পথে আনার চেষ্টা করছি! ও তো দেখি, শুধু বিপথগামীই নয়; নানা রকম অসহ্যকর বিকৃতিও তার মাঝে বাসা বেঁধে আছে।
পরদিন দেখা নেই আকন্দের সাথে। তৃতীয় দিন সে ফয়সালের অফিসে গিয়ে উপস্থিত হয়। হাতে তার কবিতার ছন্দের একটি বই। ফয়সালকে উপহার দেয় বইটি। সে উপহার সামগ্রী গ্রহণ করে। ফয়সাল আকন্দের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়নি। বরং আকন্দের প্রতি তার করুণা হয়। আর সেই করুণা বশেই মনে মনে বলে, শেষ চেষ্টাটা করে দেখি না। মদ্যপান যেখানে ত্যাগ করেছে, ওসব বিকৃত আচরণ থেকে নিশ্চয়ই মুক্ত হতেও পারে।
ওসব নানা রকম সমস্যা থাকার পরও ফয়সাল আকন্দকে নিয়ে নিষ্ঠার সাথে সাহিত্য চর্চা করে যায়। উঠতি লেখক হিসাবে ততদিনে ফয়সালের পরিচিতি বিস্তার নেয়। ফয়সাল-আকন্দের ঘনিষ্ঠ চলাচল এ অঙ্গনের অনেকের চোখে ভালো ঠেকে না। তাই কখনো নানা রকম সমালোচনাও হয়। তাতে ফয়সাল একটুও টলে না। বরং যে যাই বলুক, ওসব তোয়াক্কা না করে ফয়সাল অভীষ্ট লক্ষ্যের পথে অটুট থাকে। শুধু বাইরের সমালোচনাই নয়, নিজেকে শহরের শ্রেষ্ঠ কবি মনে করে আকন্দ আত্মগরিমায় ফয়সালের সাথে কখনো দুর্বিনীত আচরণ করে। অন্যদিকে কবি আকন্দের বিকৃত আচরণগুলোও ফয়সালকে অতীষ্ঠ করে তোলে। কিন্তু ফয়সাল তার লক্ষে পৌঁছানোর জন্য মুখ বুজে সব সহ্য করে।
এভাবে দিন যায, মাস যায়। ধীরে ঈদ এসে কড়া নাড়ে। কবি আকন্দ রমজানের আগে থেকেই আলোর পথে যাত্রা করেছিলো। এখনো সে আলোর পথেই আছে। ফয়সাল নিষ্ঠার সাথে তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে। এবারই নাকি প্রথম বারের মতো সবগুলো রোজা রেখেছে আকন্দ। ফয়সাল উপলব্ধি করতে পারে যে, একজন বিপথগামী মানুষের সুস্থ জীবনে ফিরে আসার জন্য নৈতিক শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষা যে একটা বড় ভূমিকা পালন করে, সে বাস্তবতা বুঝেই ফয়সাল কবি আকন্দকে এপথে ক্রমাগত আকর্ষণ করে চলে ।
ঈদুল আযহা আসন্ন। কুরবানির হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। ফয়সাল ভাবে, এই ঈদে কবি আকন্দকে একটা কিছু উপহার দেবে। কী উপহার দেওয়া যায়, মনে মনে ভাবতে থাকে। সে ইতোমধ্যে বুঝতে পেরেছে যে, কবি আকন্দের অন্যান্য দিকে বিস্তর পড়াশোনা থাকলেও একটা দিকে তার পড়াশোনার যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে। পবিত্র কোরআন যে তার বঙ্গানুবাদসহ পড়া হয়নি, এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে ফয়সাল। কবি আকন্দের নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণের জন্য ফয়সাল মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়। ঈদের দু’দিন আগে ওদের সাক্ষাৎ হয়। বড় মসজিদে একই সাথে ওরা নামাজ পড়ে। নামাজ শেষে যখন বের হয়, তখনি ফয়সাল আকন্দকে বলে, আকন্দ ভাই! আপনাকে একটা উপহার দিতে চাই।
-কাউকে উপহার দিলে, বলে দিতে হয় নাকি?
-তা না অবশ্য। তবে উপহারটা গতানুগতিক নয় তো, এ জন্যই জিজ্ঞেস করা।
-এমন কী উপহার দিতে চান যে, আগেই আলোচনা করা দরকার…!
-ঈদ উপলক্ষে বঙ্গানুবাদসহ পবিত্র কোরআন উপহার দিতে চাই!
ফয়সালের একথা শুনেই কবি আকন্দ অকস্মাৎ আবেগান্বিত হয়। ধরে আসা গলায় বলে, এ কী বলছেন আপনি! এত ভারী একটা জিনিস আমাকে উপহার দিতে চান? পবিত্র কোরআনের মত বোঝা কী আমার মত অধম মানুষ বইতে পারবে?
-যতটুকু বললেন, ততটুকু শ্রদ্ধাবোধ থাকলে পারবেন নিশ্চয়ই। যদি এখনই কিনে দিতে চাই!
-আপনার এমন মহার্ঘ উপহারকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা এবং ইচ্ছা কোনটাই আমার নাই। তবে ভাবছি, এর যথাযথ মর্যাদা আমি দিতে পারবো কী?
এ পর্যন্ত বলেই কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে যায় কবি আকন্দের। ছলছল দু’চোখ উপচে গড়িয়ে পড়তে থাকে ফোঁটা ফোঁটা জল। ফয়সাল তার বাহু ধরে নিয়ে চলে বড় মসজিদ সংলগ্ন কুতুবখানায়। সেখান থেকে কিনে নেয় মহাপবিত্র সেই গ্রন্থ। ফয়সাল গ্রন্থটি তুলে দেয় কবি আকন্দের হাতে। এত ভারী গ্রন্থটি গ্রহণের মত শক্তি ততক্ষণে সঞ্চয় করে ফেলেছে কবি আকন্দ। সশ্রদ্ধায় হাত দু’টি বাড়িয়ে কবি আকন্দ গ্রহণ করে সেই উপহার। অতঃপর পরস্পরের কাছ থেকে উভয়ই বিদায় নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের পথে হাঁটে।

লেখক পরিচিতি: কথাসাহিত্যিক আবু সাইদ কামাল (জন্ম  ৫ জানুয়ারি ১৯৫৯ সালে ময়মনসিংহ জেলায়) লিখছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। সত্তর দশকে কবিতা দিয়ে শুরু করলেও লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ নব্বইয়ের দশকে। নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন গল্প, উপন্যাস,  প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুতোষ গল্প ও ছড়া। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩০ টি। সম্পাদনা করছেন ‘পাদদেশ’, ‘ছোটদের সাহিত্য’ ও ‘ছড়াপাতা’ ও ‘বাকবাকুম’ নামে চারটি ছোট কাগজ। এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, একজন নিষ্ঠাবান এবং নিরলস সাহিত্যকর্মী ও সাহিত্যসেবী হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি নিজস্ব স্থান করে নিয়েছেন। এ লেখকের বিশেষ পরিচিতি কথাসাহিত্যিক ও ছড়াকার হিসেবে। গত তিন যুগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিল্পোত্তীর্ণ ছোটগল্প লিখেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাহিত্যের ম্যাগাজিন ও ছোট কাগজে। বিশেষ করে গারো পাহাড়ের পাদদেশ এলাকার সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠী নিয়ে তার ছোট গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ সুধীমহলে প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়াও ‘মাতৃকুলভিত্তিক গারো সমাজ’ ও ‘হাজংদের অতীত বর্তমান’নামে প্রকাশিত তার গবেষণাধর্মী দুটি প্রবন্ধগ্রন্থ বেশ তথ্যসমৃদ্ধ।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/