রোজিনার মুক্তির দাবিতে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির অনলাইন সংবাদ সম্মেলন

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আজ বুধবার ( ১৯ মে) সকাল ১১:০০ টায় ৬৭ টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়নের প্ল্যাটফরম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মডারেটরের দায়িত্ব পালন  করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।  লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী প্রগতি সংঘের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমি। সভায়  বক্তব্য রাখেন নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, স্টেপস টু্ওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার; ব্লাস্ট এর সিনিয়র স্টাফ ল ইয়ার ব্যারিস্টার  শারমিন আক্তার; আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক নিনা গোস্বামী, দীপ্ত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতির  সভাপতি অ্যাড.সালমা আলী, মাননীয় সংসদ সদস্য এবং কর্মজীবি নারীর উপদেষ্টা শিরীন আক্তার, এডাবের কাউসার আলম কনক, কর্মজীবি নারীর সানজিদা সুলতানা।

লিখিত বক্তব্যে  বলা হয় সম্প্রতি রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বানিজ্য নিয়ে অনিয়ম, দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন করেছেন। এইআক্রমণ এই ঘটনারই প্রতিহিংসা কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ক্ষমতা ও আইনের অপব্যবহার করার মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকেই শুধু লঙ্ঘিত করা হয়নি, এই ঘটনা প্রশাসনের সুশাসনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নারী সমাজ যখন প্রশাসন, সাংবাদিকতা-সহ সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে তখন একজন উচ্চ পদস্থ নারী কর্মকর্তার রোজিনা ইসলামের উপর এহেন বর্বর আচরণ  সুষ্ঠু তদন্তের দাবি রাখে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা সাংবাদিক রোজিনা  ইসলামের  উপর নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন একজন সাংবাদিক হিসেবে এবং একজন নারী হিসেবে তার মৌলিক অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। এই ঘটনা জেনে শুনে বুঝে করা হয়েছে। সাংবাদিক রোজিনার উপর শারীরিক ও মানসিকভাবে  যে নির্যাতন করা হয়েছে সেগুলো অপরাধ।  যারা এই নির্যাতনগুলো করেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।  জনগণের স্বার্থ রক্ষায় যে অধিকার সংক্রান্ত তথ্য উন্মোচন করার কাজ সাংবাদিকরা করছেন তার জন্য সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ১৯২৩ এর ঔপনিবেশিক আইনের আওতায় মামলা করা হয়েছে যা সংঘটিত ঘটনার সাথে কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট নয়, এতে ধিক্কার জানাই।  এখানে ২০০৯ ও ২০১১ এর তথ্য অধিকার আইন কেন আমলে নেয়া হবে না সেটি দেখতে হবে, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির নেতৃবৃন্দ  বিনাকারণে  রোজিনা ইসলাম কেন তিনদিন জেলে থাকলেন এ বিষয়ে তারা সরকারের কাছে প্রশ্ন তোলেন। সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দৃশ্যমান করার দাবি তোলা হয়।

আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে  মডারেটরের বক্তব্যে  ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলন। একজন সাংবাদিককে এভাবে হেনস্তা করার ঘটনা নজিরবিহীন। সাংবাদিক রোজিনার প্রতি হেনস্তা ও নির্যাতনের ঘটনা শুধু মূল্যবোধের ক্ষয় নয়। এটি একটি ষড়যন্ত্র।

তিনি আরও বলেন রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে অপরাধগুলো করা হয়েছে তার সবগুলোই ফৌজদারি অপরাধ। একজন সাংবাদিককে প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক। তিনি এই ঘটনায়  যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে সেটি প্রত্যাখান করে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, নারী নেত্রীবৃন্দ, সাংবাদিক এবং কর্মকর্তাসহ ৫৪ জন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন  বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের  এডভোকেসি ও লবি পরিচালক  জনা গোস্বামী।

রোজিনা ইস্যুতে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি যেসব দাবি তুলেছে সেগুলো হচ্ছে-

১.এই ঘটনায় অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
২.অবিলম্বে  সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও শাস্তির  দাবি জানাচ্ছে;
৩. অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে  রোজিনা ইসলামের নি:শর্ত মুক্তি ও তাঁর সুচিকিৎসার দাবী জানাচ্ছে ;
৪.গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কোন রকম হয়রানি, ভয় ভীতি ছাড়া নিরপেক্ষ ভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের  পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য  সরকার সহ সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে;
৫.স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব, অতিরিক্ত সচিব সহ এই নির্যাতনের  ঘটনার সাথে জড়িত  সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের  বিচার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।
৬.রোজিনা  ইসলামের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছে।
৭.স্বাস্থ্য বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি, নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ, দুর্নীতির সিন্ডকেটের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুর্নীতির সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/