শুভ জন্মদিন প্রিয় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন

সেলিনা হোসেন

আজ ১৪ জুন, বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের জন্মদিন। বহু সফল ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও শিশু সাহিত্যের রচয়িতা এই লেখক। এছাড়া বহু আলোচিত গ্রন্থের সম্পাদক হিসাবেও সুনাম রয়েছে তার।  তার উপন্যাস প্রতিফলিত হয়েছে সমকালীন সমাজ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সংকটের সামগ্রিকতা। তার লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ দুটি । তার একাধিক গল্প ও উপন্যাস ইংরেজি, রুশ ও কানাড়ি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার।

প্রাথমিক ও কর্মজীবন
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহী শহরে। তবে তার পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর জেলার হাজিরপাড়া গ্রামে। বাবা এ কে মোশাররফ হোসেন সরকারি চাকরিজীবী এবং মা মরিয়ম-উন-নিসা বকুল ছিলেন গৃহিনী। নয় ভাইবোনদের মধ্যে সেলিনা ছিলেন চতুর্থ।

১৯৫৪ সালে বগুড়ার লতিফপুর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু হয় সেলিনা হোসেনের। পরে ১৯৫৯ সালে রাজশাহীর নাথ গালর্স স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে এই স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পাস করার করেন, ভর্তি হন রাজশাহী মহিলা কলেজে। এখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর  ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। পরবর্তীতে এখান থেকেই কৃতিত্বের সাথে বি.এ. অনার্স ও এম.এ. সম্পন্ন করেন সেলিনা হোসেন।

প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষ করার পর ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমিতে গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন সেলিনা হোসেন। পরবর্তীতে বাংলা একাডেমির প্রথম মহিলা পরিচালক পদে উন্নীত হন ১৯৯৭ সালে। তিনি ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের  প্রথম নারী পরিচালক। চাকরির পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন সম্পাদনার কাজেও। তিনি বাংলা একাডেমির 'অভিধান প্রকল্প', 'বিজ্ঞান বিশ্বকোষ প্রকল্প', 'বিখ্যাত লেখকদের রচনাবলী প্রকাশ', 'লেখক অভিধান', 'চরিতাভিধান' এবং 'একশত এক সিরিজের' গ্রন্থগুলো প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে 'ধান শালিকের দেশ' পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকুরি থেকে অবসর নেন সেলিনা হোসেন।

পরবর্তীতে  বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবেও বেশ কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন এই লেখক।

সাহিত্যে অবদান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময়ই লেখালেখিতে নিযুক্ত হন সেলিনা হোসেন। তিনি তখন বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত, গল্প, প্রবন্ধ ও উপসম্পাদকীয় লিখতেন। তার প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। অর্থাৎ বাংলা একাডেমিতে যোগ দেয়ার আগে থেকেই লেখক হিসাবে পরিচিতি পান তিনি। শিল্প সাহিত্যের প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিতে যোগ দেয়ার পর আরও গতি পেয়েছে তার লেখনি। এ পর্যন্ত তার ৩৫টি উপন্যাস, ১৩টি গল্প গ্রন্থ , ২২টি শিশু-কিশোর গ্রন্থ এবং ১০টি প্রবন্ধের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ১৩টি সম্পাদনা গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তিনি।

সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও উপন্যাসিক হিসাবেই সবচেয়ে বেশি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এই লেখক।  তার লেখা উপন্যাসের মধ্যে হাঙর নদী গ্রেনেড, মগ্ন চৈতন্যে শিস,  যাপিত জীবন, নীল ময়ূরের যৌবন, চাঁদবেনে, পোকা মাকড়ের ঘরবসতি, গায়ত্রী সন্ধ্যা (৩ খণ্ড), যমুনা নদীর মুশায়রা, কাঁটাতারে প্রজাপতি, নারীর রূপকথা, কাঠ কয়লার ছবি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

পুরস্কার ও সম্মাননা
মননশীল সাহিত্য রচনার স্বীকৃতি হিসাবে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার, সার্ক সাহিত্য পুরস্কার, আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার, জাতীয়  চলচ্চিত্র পুরস্কার  ও একুশে পদক উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ২০১৮ সালে তাকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

আজ এই লেখকের ৭৫তম জন্মদিবসে ওমেন্স নিউজের পক্ষ থেকে জানাই অশেষ শ্রদ্ধা ও অভিবাদন। শুভ জন্মদিন প্রিয় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। আমরা আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/