জ্বর-কাশির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে লালমনিরহাটে

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটে কয়েক দিনের ব্যবধানে জ্বর, সর্দ্দি ও কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যাও। জানা যায়, প্রচণ্ড রোদ আবার কখনও বৃষ্টিতে ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে  লালমনিরহাটে। আবহাওয়ার এই বিরূপ প্রভাবে জ্বর, সর্দ্দি, কাশি ও নিউমেনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।

প্রতিটি বাড়িতে এক বা দুইজন করে সদস্য জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকেই করোনা আক্রান্তের ভয়ে পল্লী চিকিৎসকদের পরামর্শে গোপনে চিকিৎসা করছেন। এরপরও জেলা সদর হাসপাতালসহ সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যাদের অধিকাংশ জ্বর, সর্দি, কাশি ও নিউমেনিয়ায় ভুগছেন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।

জ্বর, সর্দ্দি ও কাশিতে আক্রান্তরা জানান, আগের তুলনায় এ জ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি। জ্বরের সঙ্গে সমস্ত শরীরের মাংসপেশী ও হাড়ের জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়। কাশিতে বুকে ব্যথা হচ্ছে। অনেকের শ্বাসকষ্টও দেখা দিচ্ছে। যা প্রাথমিকভাবে করোনার লক্ষণ ভেবে অনেকেই আইসলোশনের ভয়ে গোপনে পল্লী চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া রোগীদের সংখ্যা গ্রামেই বেশি। তবে শহরের লোকজন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে গেলে কেউ কেউ করোনা পরীক্ষা করে আইসলোশন থাকছেন। তবে তার সংখ্যা অনেক কম। আইসলোশনের ভয়ে করোনা পরীক্ষা কারাচ্ছেন না অনেক রোগী। যদিও সরকারিভাবে ফ্রিতে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রমিজ উদ্দিন (৪৮) বলেন, জ্বরে শরীরে এমন ব্যথা আমার জীবনে কখনই দেখি নাই। পুরো শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, কাশির কারণে বুকেও ব্যথা অনুভব হচ্ছে। দীর্ঘ ১০ দিন জ্বরে ভোগার পর সদ্যই সুস্থ হয়েছেন তিনি। তবে এখনও তার কাশি বন্ধ হয়নি।

আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ মাসের শিশুর চিকিৎসা নিতে এসেছেন ভগবতী রানী। তিনি বলেন, তার সন্তান দীর্ঘ এক সপ্তাহ থেকে জ্বর, সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে ওষুধ নিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই আবারও চিকিৎসককে দেখাতে এসেছেন তিনি। তবে তার বাড়ির অন্য সদস্যরা জ্বরে আক্রান্ত না হলেও পাশের বাড়ির লোকজনেরও জ্বর সর্দি রয়েছে।

সীমান্ত ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সংযুক্ত। অধিকাংশ সীমান্তই কাটাতারের বেড়াহীন। এ জেলায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ জনে পৌঁছেছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর ও অবৈধভাবে ভারত ফেরত ১৩ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের ১০ জনের নমুনা আইইডিসিআর ল্যাবে পাঠানো হলোও ভারতীয় ভ্যারেয়েন্ট কিনা তার রিপোর্ট এখনও পৌঁছায়নি। তবে স্থানীয় সুশীল সমাজের ধারণা, সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারতে যাতায়াত করায় এ জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থাকতে পারে।

জ্বর, সর্দি ও কাশির প্রাদুর্ভাব বাড়লেও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়েনি। শহরের কিছু মানুষ মাস্ক ব্যবহার করলেও গ্রামীণ হাট-বাজার ও পথ-ঘাটে মাস্কহীন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। করোনা স্বাস্থ্যবিধির প্রথম ধাপ হচ্ছে মাস্ক। তবে এ ব্যাপারে গ্রামীণ জনপদে সচেতনতা তৈরি হয়নি বললেই চলে । স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং প্রকাশ্যে মাস্কহীন ঘুরাঘুরি বন্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও কাজে আসছে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এ জেলায় করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে বলেও ধারণা করছেন সুশীল সমাজের।

লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, সদর হাসপাতালসহ জেলার সকল হাসপাতালে জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ফ্রিতে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করা হলেও মানুষ আইসলোশনের ভয়ে  করোনার নমুনা দিচ্ছে না। করোনায় এ পর্যন্ত জেলায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ১৭৯ জনের। এদের মধ্যে ১৩ জনই ভারত ফেরত। তাদের ১০ জনের নমুনা আইইডিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট না আসায় বলা যাচ্ছে না সীমান্তবর্তী এ জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এসেছে কিনা। জেলার মধ্যে লালমনিরহাট পৌরসভায় করোনা সংক্রামণের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। করোনামুক্ত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও জনসচেতনতার বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/