আবু সাইদ কামালের বর্ষার কবিতা ‘ঢল’

Abu shayed Kamal

ঢল
সন্ধ্যা থেকেই বৃষ্টির শুরু,
সারারাত অঘোর বর্ষণ,
নানা ছন্দের মায়াবী বৃষ্টির বাজনা শুনে
বিভোর ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়
পাহাড়-পাদদেশের জনপদ।

শেষরাতে গারো পাহাড়ের বুকের গহিনে
পৃথিবীর সবকটি জলপ্রপাত এসে
নদীগুলোর উৎসমুখে
একীভূত হয়ে ভয়াবহ গর্জন তুললো;

নানা ঝর্নাপথে পাহাড়-স্নানের জল
আছড়ে পড়তে থাকে মঙ্গলেশ্বরী নদীর বুকে।
প্রবল স্রোতের তোড়ে ধেয়ে আসা
মুহূর্তে ঢলের জলে টইটুম্বুর নদী
ফেণিল উচ্ছ্বাসে ছুটে চলে পাহাড়-পাদদেশের সমতলে;
জলের সম্ভারে ফুঁসে ওঠা
কুলোপচানো নদী মানেনি পাড় কিংবা বাঁকের শাসন।
লুথার সাংমার বাড়ির পাশের গোপাট ধরে স্রোতের উপোরাংশ
ফসলি মাঠের মাঝ বরাবর দুর্দান্ত দাপটে
বেলাশেষের খেলুড়ে বালকদের মতো
ধেয়ে চলেছে ভাঁটির টানে।

ঢলের প্রবল স্রোতে ভেঙে ছিন্নভিন্ন করে রাস্তা-ঘাট
বালি-ভরাট করলো উর্বর ফসলি ক্ষেত
ঢলের উড়–ক্কু জল হানা দিতে থাকে গ্রামে,
বসত-ভিটায় ঢুকে ভাঙে মাটির দেয়াল, কাঁচা ঘর;
বন্যার পানিতে একাকার হয় মাছ-চাষের পুকুর।
পাদদেশ অঞ্চলে এমনি ঢলে একযুগে ফুঁসে উঠে
সোমেশ^রী, মহাদেও, গণেশ^রী নিতাইসহ পাহাড়ি সবক’টি নদী:
ঢলের প্লাবন-জলে একাকার হয়ে গেলে
 এখানো কোনো সমতলভূমি  আছে বলে মনে হয়না।

চেরাপুঞ্জির কাছাকাছি বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে
এমন পাহাড়ি ঢল নতুন কিছু নয়,
শত বছর আগে থেকে অনেক গল্পই
রচনা করেছে বর্ষার ঢল।

ফসলহানীর কারণে কর দিতে না পারায়
সুসংরাজ পরিবারের কিশোর দুই ভাই:
কিশোরসিংহ ও রাজসিংহ ঢাকার শাসকের অধীন
কারাভোগ করেছিল দীর্ঘদিন,
ফসলহানীর জন্য-
 সুসং এলাকায় প্রজাদের ভূমিকর আদায় হতো না বলে
দানা বেঁধেছিল টংক আন্দোলন;
কালের প্রবাহে আজ কিশোরসিংহ ও
রাজসিংহকে ভুলতে বসেছে অনেকে।

পলিমাটি দ্বারা জমি উর্বর হলেও
এখনও প্রতিটি ভয়াল ঢল
রেখে যায় কিছু না কিছু ধ্বংসের হাহাকার…
তবু এই জনপদ লড়াকু মানুষের জীবন-সংগ্রামের
পূণ্যময় এক অনন্য চারণভূমি।

কবি পরিচিতি: কথাসাহিত্যিক ও কবি আবু সাইদ কামাল (জন্ম  ৫ জানুয়ারি ১৯৫৯ সালে ময়মনসিংহ জেলায়) লিখছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। সত্তর দশকে কবিতা দিয়ে শুরু করলেও লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ নব্বইয়ের দশকে। নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুতোষ গল্প ও ছড়া। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩০ টি। সম্পাদনা করছেন ‘পাদদেশ’,‘ছোটদের সাহিত্য’ ও ‘ছড়াপাতা’ ও ‘বাকবাকুম’ নামে চারটি ছোট কাগজ। এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, একজন নিষ্ঠাবান এবং নিরলস সাহিত্যকর্মী ও সাহিত্যসেবী হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি নিজস্ব স্থান করে নিয়েছেন। এ লেখকের বিশেষ পরিচিতি কথাসাহিত্যিক ও ছড়াকার হিসেবে। গত তিন যুগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিল্পোত্তীর্ণ ছোটগল্প লিখেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাহিত্যের ম্যাগাজিন ও ছোট কাগজে। বিশেষ করে গারো পাহাড়ের পাদদেশ এলাকার সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠী নিয়ে তার ছোট গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ সুধীমহলে প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়াও ‘মাতৃকুলভিত্তিক গারো সমাজ’ ও ‘হাজংদের অতীত বর্তমান’নামে প্রকাশিত তার গবেষণাধর্মী দুটি প্রবন্ধগ্রন্থ বেশ তথ্যসমৃদ্ধ।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/