পিরিয়ডের জন্য যেভাবে প্রস্তুত করবেন নিজের কিশোরী মেয়েটিকে

প্রতীকী ছবি

পিরিয়ড বা ঋতুচক্র নারী জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ১১-১২ বছর থেকে শুরু করে ৪০-৪৫ বছর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি অব্যাহত থাকে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য এটি অতি সাধারণ হলেও একজন কিশোরী মেয়ের জন্য এটি খুবই অস্বস্তিকর বিষয়। হঠাৎ করেই নিজের জীবনযাত্রায় আকস্মিক পরিবর্তন আসায় সে ঘাবড়ে যায়। কোনও কোনও বাচ্চা মানসিকভাবেও কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েত পারে। তাই কিশোরী মেয়েদের এই সময়টিতে মাকেই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করতে হয়।

কিছু কিছু মাকে দেখা যায় মেয়ে বাচ্চারা বড় হতে থাকলে তাদের চিন্তা বাড়তে থাকে। কদিন পরেই যে মেয়েটার পিরিয়ড হবে! কিন্তু আপনি নিজেই যদি দুশ্চিন্তায় থাকেন তাহলে তাকে সাহস জোগাবে কে? তাই এ নিয়ে কোনওরকম দুশ্চিন্তা বা ট্যাবুতে ভোগার কিছু নেই। কেননা পিরিয়ড বা ঋতুচক্র কোনও রোগ নয়, নারী জীবনের অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে পূর্ণতা পায় একজন মেয়ে- কিশোরী থেকে পরিণত হয় নারীতে। তাই প্রতিটা মেয়ে যাতে মাসিক বিষয়টিকে জীবনযাপনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসাবে  দেখতে শেখে এবং সচেতন হয়- মায়েদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা কিশোরী মেয়েদের এই বিশেষ সময়টিতে মা তাকে যতটা সাহায্য করতে পারবেন-আর কারো পক্ষে ততটা নয়।

মেয়েকে প্রস্তুত করুন
একটি মেয়ে যখন ১০-১১ বছরে পড়বে তখন থেকেই তার শারীরিক পরিবর্তন আসতে থাকে। গ্রোথ ভালো থাকলে ১২ বছর বয়সেই ঋতুবতী হয়ে থাকে কোনও কোনও মেয়ে। সাধারণত: ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই শুরু হয় মাসিক। এজন্য আপনার মেয়েটি যখন ১০ বছরে পড়বে তখনই তাকে পিরিয়ড সম্পর্কে সচেতন ও প্রস্তুত করতে থাকুন। গল্পচ্ছলে তাকে বুঝিয়ে বলুন-এই প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে। তাহলে একদিন হঠাৎ করে ঋতুবতী হলে সে আতঙ্কে থাকবে না।

পিরিয়ড কোনও লজ্জার বিষয় নয়
মেয়েকে বলুন- পিরিয়ড নিয়ে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। এটা কোনও রোগ নয়, নারী জীবনেরই একটি অংশ। তাই তাকে এ সংক্রান্ত কিছু টিপস আগেই দিয়ে রাখুন যাতে হঠাৎ করে ঋতুস্রাব হলে সে ঘাবড়ে না যায়। এভাবে প্রস্তত করে তুললে সে যে কোনও পরিস্থিতিতেই নিজেকে সামলে নিতে পারবে। এমনকি স্কুলে থাকা অবস্থায় পিরিয়ড হলেও সে লজ্জিত বা আতঙ্কিত না হয়ে কোনও নারী শিক্ষকের সাথে বিষয়টি শেয়ার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।

পিরিয়ডের সময় যা যা প্রয়োজন
যখন তার সত্যি সত্যি একদিন পিরিয়ড হবে তখন তাকে প্যাড ব্যবহার, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় বুঝিয়ে বলুন। প্রয়োজনে হাতে কলমে শিখিয়ে দিন। পিরিয়ডের সময় অল্প ব্যাথা থাকলে তার পেটে হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে সেক দিতে পারেন। এসময় গরম পানি দিয়ে গোসল করলেও আরাম বোধ হয়। ব্যাথা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপণ্ণ হতে হবে।

আপনার মেয়ে প্রথম পিরিয়ড হলে তাকে ওই কয়েকটা দিন ঘরে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। প্রয়োজনে স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে নিন। কিছু কিছু বাচ্চা মেয়ে এসময় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই একজন মায়ের উচিত মেয়েটিকে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দেয়া। এসময় সে যাতে মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকে সে দিকটাও দেখতে হবে।

পিরিয়ডকালীন সময়ে খাওয়া দাওয়া
আগের দিনে পিরিয়ড হলে অনেক পরিবারে কিশোরী মেয়েদের পুষ্টিকর খাবার দেয়া হতো না। তাকে নানারকম নিরামিষ বিশেষ করে হলুদ ছাড়া খাবার খেতে বাধ্য করা হতো। কিন্তু এসব নিয়ম এখন আর চলে না। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শরীরে আয়রন কমে যায়। এজন্য মেয়েটিকে নানারকম পুষ্টিকর খাবার যেমন-দুধ, ডিম, মাংস খেতে দিতে হবে। আর পিরিয়ডের সময় পুষ্টি চাহিদা পূরণ না হলে তাতে রক্তশূন্যতা থেকে আরও গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

মোট কথা এই সময় নিজের মেয়েটিকে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক সবদিক থেকে সহায়তা করতে হবে। পিরিয়ড বা মাসিক সম্পর্কে একজন মা তার মেয়েকে যা যা শেখাবেন সেগুলো পরবর্তীতে তার জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে। তাই এসময় নিজের কিশোরী মেয়েটিকে বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসম্মত পরামর্শ দিন। তাকে সব ধরনের সামাজিক ট্যাবু থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব কিন্তু আপনার।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/