ফারুক সৈয়দের কবিতা ‘ঘুমহারা চোখে’

ফারুক সৈয়দ

ঘুমহারা চোখে

নদীর তীরে বসে মাঝ রাতে গানের
চর্চা বা কবিতার আবেগ যেন অবৈধ
আজকাল, সব সময়ই লোকারণ্য, ভিড় দঙ্গল।
 
দোকানীরা নিরত ব্যস্ত কে চায় সিগারেট, কোক।
নাকি অন্য কিছু, ময়না আর শালিকের
চলন, চালান আর বাজারদর।
হকাররা হাঁকে ডাকে,
কচিডাব, ফোচকা, ঝালমুড়ি, চানাচুর
হাস্নাহেনা, বকুল আর শিউলির মালা।
পাওয়া যায় আরো কাটাছাড়া গোলাপ,  
গন্ধ নেই কেন, প্রশ্ন করে মাস্তানের গোফ।
 
গোধূলির আকাশ লাল হওয়া মানেই
নিরন্তর সান্নিধ্য, আর সাঁঝের সূর্যডোবা
আকাশ কালো-চাদরে ঢেকে রাখে
কামনায় পাওয়া না-জানার ইতিহাস।
অথবা না-পাওয়া জানাজানির গপ্প গুজব এলোমেলো।
সবাই ঘুরে বেড়ায়, হয়তো হাতে হাত রাখে।
কখনো স্বভাবের লাগাম ছেড়ে হাত বাড়ায়,
ফিসফিস, যদি মিলে যায় স্বর্গের খনি।
 
কেউ খুঁজে মহুয়ারে প্রেমের সাঁতারে,
সাপুড়ের অলংকারে বাঁধা অপরোক্ষ ঘেঁষাঘেঁষি।
কেউ চায় পরীমনির নাদুসনুদুস আবদার
আর শুষে নেয় সমস্ত বকেয়া প্রাপ্য।

 কেউ পায় না-হারানোর মূল অঙ্গীকার
বিনিময়ে দিয়ে দেয় আগাম স্বপ্নের ভাণ্ডার।
কেউ ডাকে, পেতে চায় যৌবনের সুস্বাদু ফসল,
সপ্তদর্শীর মন কেঁদে মরে, চায় না সে পার্শ্ববর্তী আঁচল।
কেউ দেয় ঝরে যাওয়া নবমীর তারা উপহার,
রূপসীর মন কাঁদে, তবু ভাঙ্গে না সে অন্তর সঙ্গীটার।
কেউ হাঁকে যৌবনের জ্যোৎস্নায় অবিরাম রূপকথা,
জমানো ফেনার কল্পনায় ঢেউয়ের সাগরে গাঁথা।
কেউ নেয় অগ্রিম, বিয়ের পালঙ্কে রাখা ফুলের সুবাস,
বাসি কিনা সতেজ কাঁকড়ার লহু ঝলকিত আভাস।
কেউ চায় মায়াবী নদীর আরক্ত বাসনা, মনভুলানো মিষ্টিকথা,
চাঁদ দেখনোর ভুমিকা আর শুধু নির্মল অফুরন্ত স্নিগ্ধতা।

আমি চাইনা কিছুই আজ।  

বকেয়া, অগ্রিম, বৈধ, অবৈধ, জ্যোৎস্না, অমাবস্যা,
আর গোধূলি, সূর্যাদয় রেখে দাও সিন্দুকের অতলে।  
সান্নিধ্য, দূরত্ব, স্বর্গের খনি বা ঝরে যাওয়া নবমীর তারা,
রূপসীর রূপকথা আর সপ্তদর্শীর আঁচলের সুবাস
সবই যেন নদীতে স্নানে ডোবা কাপুরুষের ত্রাস।
 
আমি ঘুমহারা ঝিমানো চোখ বুজি,
ভাবি নদীর তীরেই রয়ে যাব সারা রাত আজ।

কবি পরিচিতি: পাঁচ দশক আগে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে সুদূর ডেনমার্কে পাড়ি জমিয়েছিলেন ফারুক সৈয়দ। দেশ ত্যাগ করলেও মাতৃভাষা সবসময়ই লালন করেছেন হৃদয়ে। তাই প্রবাসে বসেও চলছে তার সাহিত্য চর্চা।

১৯৬৯ – ১৯৭৩ সনে ফারুক সৈয়দ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস জীবনে ইংরেজী দৈনিক দ্যা পিপলসে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। একই সময়ে সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও দৈনিক ইত্তেফাকে রম্যরচনা, কবিতা প্রকাশ করেন। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি ডেনমার্কেই বসবাস করছেন। সুদূর প্রবাসে থেকেও বাংলায় কবিতা, প্রবন্ধ ও গল্প লিখে মানসিক প্রশান্তি ফিরে পাওয়ার এক নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা এই সাহিত্যিকের মাঝে জীবন্ত রয়েছে। কেবল বাংলা নয়, নিয়মিত ইংরেজি ও ড্যানিশ ভাষায় রম্যরচনা ও কবিতা লিখছেন কবি ফারুক সৈয়দ।

ওমেন্স নিউজ সাহিত্য/