গরাদের ওপারের জীবন

এ এক আলাদা জগত, অন্যরকম জীবন। আমরা যারা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করছি তারা কল্পনাও করতে পারবো না আমাদেরই মতো কিছু মানুষ কতটা অমানবিক জীবনযাপন করছেন। কারণ তারা আমাদের মতো স্বাভাবিক নন-কারো ভাষায় তারা পাগল, কারো কাছে মানসিক রোগী। এইসব অন্যরকম মানুষদের কাছ থেকে দেখতে গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালে। সরকারি এই হাসপাতালে রয়েছে মানসিক রোগীদের সুস্থ করে তোলার নানা ব্যবস্থা। তবে আমি সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থার মান খতিয়ে দেখতে যাইনি। তাই সেখানকার চিকিৎসক, নার্স বা অন্য কারো সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করিনি। আমি কেবল ওয়ার্ডগুলোতে ঘুরে ঘুরে রোগীদের অবস্থা দেখেছি, কথা বলেছি তাদের আপনজনদের সঙ্গে। এখানে তারই কিছু বাস্তব চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

এখানে যাওয়ার আগে আমার ধারণা ছিলো সাধারণত ছেলেরাই নানা মানসিক সঙ্কটে ভোগেন। এই সমস্যায় মেয়েরা তেমন আক্রান্ত হয় না, হলেও তাদের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু এই হাসপাতালে গিয়ে আমি চমকিত হলাম। কেননা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত  মেয়েদের সংখ্যা কম না। এছাড়া ভাবার মতো আর একটা বিষয় হচ্ছে তাদের বয়স। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের বেশিরভাগই কিশোর উত্তীর্ণ, তা তিনি নারী বা পুরুষ যেই হউক না কেন। এই বয়সে যেসব তরুণ বা তরুণীদের কেরিয়ার তৈরি বা জীবন সাজানো নিয়ে স্বপ্নে বিভোর থাকার কথা, তারা এখন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। আর তাদের নিয়ে পরিবারগুলোর যে কি দুরবস্থা তা চোখে না দেখলে অনুমান করা কঠিন। সত্যি কথা বলতে কি- কোনও পরিবারের একজন সদস্য যদি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হন তাহলে সেই পরিবার পথে বসে যেতে বাধ্য। একজন মানসিক রোগীকে সঠিকভাবে দেখভাল করতে গেলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। পাশাপাশি থাকতে হবে সামাজিক নিগ্রহ মোকাবেলা করার মতো মানসিক শক্তি আর অপরিসীম ধৈয্য। কেননা মানসিক চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি সময়সাপেক্ষ। হয়তো একজন রোগীকে ভালো করতে বছরের পর বছর চলে যায়। তারপরও তার মধ্যে তেমন কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। এজন্য দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে সবসময় মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত আপনজনের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না।

সবই ভাগ্যের লিখন
হাসপাতালে চার তলার পুরুষ ওয়ার্ডে আমরা এমনই একজন মধ্যবয়সী রোগীর দেখা পেলাম । দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে এখানে আছেন তিনি। বর্তমানে তার অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে রিলিজ দিয়েছেন এখানকার চিকিৎসকরা।  তার সঙ্গে থাকা স্ত্রী ও ছেলে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার স্ত্রী জানালেন-তার স্বামীকে এ পর্যন্ত পাঁচবার এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতি বছরই একবার করে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান এবং চিকিৎসা দিয়ে তাকে সারিয়ে তুলতে হয়। প্রথমবারের মতো তিনি অসুস্থ হন  ২০১১ সালে। তখন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসার পর এক নাগাড়ে চার বছর ভালো ছিলেন তিনি। কিন্তু ওই একবারই, এরপর থেকে প্রতি বছরই অসুস্থ হচ্ছেন। আর প্রতিবারই জামালপুর থেকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে তাকে। তাহলে এই পরিবারটির অবস্থা যে কতটা করুণ তা সহজেই অনুমেয়। এর মধ্যেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে তার চার ছেলেমেয়ে। স্বামীকে দেখভালের পাশপাশি গোটা সংসারের ভার এখন তার স্ত্রীর কাঁধে। তিনি কিন্তু হাসিমুখেই সব ঝড় ঝাপটা সামাল দিচ্ছেন। এ নিয়ে স্বামী কিংবা অন্য কারো প্রতি কোনও অনুযোগ নেই তার। তিনি মনে করেন-‘দোষ কারে দিমু কন। আমার ভাগ্যে আছিল বইলাই তো আমার স্বামীর এই ব্যারাম হইছে। নাইলে তিনি তো বিয়ার সময় পুরা সুস্থ আছিলো। এ সবই আমার ভাগ্যের লিখন।

সবাই ফালায় দিলেও আমিতো পারিনা
ঘুমন্ত ছেলে জয়নুলের (ছদ্ম নাম) পাশে বসে আছেন মা। জানতে চাইলাম কি সমস্যা? বললেন-ছেলের মাথায় সমস্যা, যার তার কাছে চেয়ে খায়। দীর্ঘদিন ধরে গোসল করে না। বাড়িতে থাকতে চায় না। কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা। ইতিমধ্যে জায়গা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছেন। শেষে বড় তিন ছেলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের ভাষ্য- ‘ও আর কোনদিন ভালো হবে না। ওকে রাস্তায় বের করে দাও। কিন্তু আমি তো মা। সবাই ফেলে দিলেও আমি তো ফেলতে পারি না।’ শেষে মানসিক হাসপাতালের খোঁজ পেয়ে সেই বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছেন। এটা তার শেষ চেষ্টা। ‘এখানকার চিকিৎসায় ভালো না হলে, আর কোনও উপায় নেই আমার কাছে।’ বলছিলেন ওর মা।

স্বামীর আত্মহত্যার পর মানসিক ভারসাম্য হারায় সোনিয়া
কি মিষ্টি একটা মেয়ে! বয়স বড়জোড় ১৮/১৯। দেখলে মনে হয়, যেন রোগী দেখতে এসেছে। আসলে সে নিজেই রোগী। মানিকগঞ্জের মেয়ে সোনিয়া। অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পর শাশুড়ি মায়ের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করেন স্বামী। এই ঘটনার পর থেকেই অসুস্থ সোনিয়া। এখন মেয়েকে সারিয়ে তুলতে এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে বাড়ির লোকজন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হয়েও তার টেনশন কমে না। শাশুড়ি জানি বাড়িতে একা একা কি করছে! এদিকে মেয়ের চিন্তায় অস্থির মা। মেয়ে ভালো হলেও তার ভবিষ্যৎ কি হবে, সেই চিন্তায় তার ঘুম হয় না। যদিও শাশুড়ি মাঝে মধ্যে বউমাকে দেখতে আসেন। তার মাকে বল ভরসা দেন। কিন্তু এতে দুশ্চিন্তা একটুও কমে না সোনিয়ার মায়ের।

স্বামীর জন্য পাগল রোকেয়া
বেডের সঙ্গে তার হাত-পা বাঁধা। সারাক্ষণ অস্থির অস্থির করছে। দু চোখে আকুতি। কাকে যেন খুঁজেই চলেছে সে। বার বার বিছানা থেকে ওঠে পড়তে চায়। এজন্য বেডের সঙ্গে কাপড় দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মা জানায়-‘আজ স্বামী আসে নাই। এজন্য এমন করতাছে। স্বামী কাছে থাকলে একটু নড়তো না। স্বামীর জন্য পাগল সে।’
রোকেয়ার বিয়ে হয়েছে আজ থেকে ১০ বছর আগে। কিন্তু এত বছরেও মা হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তার। এজন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুব কথা শোনাতো। এসময় বাচ্চা না হওয়ার অজুহাতে আরেকটা বিয়ে করার চেষ্টা চালাতে থাকে স্বামী। এত বড় মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেনি রোকেয়া। কেননা স্বামীকে সে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো। স্বামীকে হারানোর আতঙ্কে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে রোকেয়া। এমনকি মুখ দিয়ে কোনও শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না সে। এখন ওর এই অবস্থা দেখে স্বামীর হুঁশ ফিরেছে। ‘-এখন তো জামাই অরে খুব ভালোবাসে। ওর চিকিৎসার জন্য চাকরি পর্যন্ত ছাইড় দিছিলো। কয়েকদিন হয় আবার চাকরিতে যোগ দিছে। অথচ আগে যদি একটু ভালো ব্যবহার করতো, তাইলে তো আমার মেয়েটার এই অবস্থা হইতো না।’

বার বার আত্মহত্যা করতে চায় রুবি
রুবি নারায়ণগঞ্জের এক টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতো। হঠাৎ করেই তার মাথায় আত্মহত্যার ভূত চেপে বসে। এটাও একটা মানসিক রোগ। এই আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে ওকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখন ওর অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।

আমার মেয়েটার সর্বনাশ করেছে ওর মামা
হাসপাতালের বারান্দায় কথা হচ্ছিলো শিউলির বাবার সঙ্গে। মাত্র কয়েকদিন আগেই এখানে ভর্তি করেছেন অপ্রকৃতস্থ মেয়েকে। তিনি মনে করেন, মেয়ের এই অবস্থার জন্য তার শ্যালক দায়ী। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। শিউলি তখন ক্লাস টেনের ছাত্রী। তার নিজের মামা এলেন বোনের বাড়িতে-বেড়াতে নয় কিছুদিন থাকতে। কেননা তার চাকরি ক্ষেত্র শিউলিদের বাড়ির কাছে। বোনের বাড়িতে থাকতে এসেই বোনের মেয়ের চরম সর্বনাশ করলেন ওই ভদ্রলোক। যদিও তিনি তখন বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। ঘটনা জানার পর তাকে বিতাড়িত করা হলো। কিন্তু এই ঘটনা শিউলির জীবনকে কতটা পাল্টে দিয়েছে সেটা তখনও উপলব্ধি করতে সক্ষম হননি তার বাবা-মা। ভালো ছাত্রী শিউলি এরপর কৃতিত্বের সাথে এসএসসি, এইচএসসি, বিএসসি অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করে। তার দুই ভাইও উচ্চশিক্ষিত । একজন ডাক্তার, অন্যজন ইঞ্জিনিয়ার এবং তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করছেন।
এদিকে শিউলির বিয়ের তোড়জোড় শুরু করলেন তার বাবা। কিন্তু মেয়ে এতে রাজি নয়। কোনওভাবেই তাকে পাত্রপক্ষের কাছে নেয়া যাচ্ছিলো না। এক পর্যায়ে নিজেকে ঘরে বন্দি করে ফেলে শিউলি। তাকে কিছুতেই ঘর থেকে বের করতে পারছিলো না তার পরিবারের সদস্যরা। শেষে বাধ্য হয়ে দমকল বাহিনীর লোকজনকে খবর দেন তার বাবা। তারা এসে দরজার ছিটকানি ভেঙে শিউলিকে ঘর থেকে বের করতে সক্ষম হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে মেয়েকে সোজা ঢাকায় নিয়ে এসে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেন তার বাবা। তিনি মনে করেন-মেয়ের এই অবস্থার জন্য তার মামাই দায়ী। একই সঙ্গে তিনি স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ। তার ভাষ্য-‘ওর নিজের ভাই মেয়ের এতবড় সর্বনাশ করলো তার তো সেটা দেখা উচিত ছিলো। আমি না হয় কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে ছিলাম!’

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না তার। বর্তমানে তিনি ঢাকায় আলাদা বাসা নিয়ে থাকছেন। দিনে মানে মেয়েকে দেখভাল করতে হাসপাতালে আসেন। রাতে একাই থাকে শিউলি। দিনের বেশিরভাগ সময় ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে শুয়ে থাকে। আর প্রায়ই স্বামীর কাছে যাওয়ার বায়না ধরে। -‘আমাকে স্বামীর কাছে রেখে আস। আমি স্বামীর সাথে বিছানায় যাব।’ যদিও তার বিয়েই হয়নি।

ওর মাইর খাইয়াই মরমু আমি
মহিলা ওয়ার্ড থেকে বেরিযে লিফট দিয়ে তিন তলায় নামলাম। বেরিয়ে আসছি। হঠাৎ হৈচৈ শুনে এগিয়ে গেলাম পুরুষ ওয়ার্ডের দিকে। সেখানে লোহার কলাপসেবল গেইটের ভিতরে পড়ে আছেন বোরখা পড়া এক ভদ্রমহিলা। তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিলো। দুজন নার্স ধরাধরি করে তাকে গেইটের বাইরে এনে বেঞ্চিতে শুইয়ে দেয়। তার মাথায় বোতল দিয়ে কিছুটা পানি ঢালা হলে তিনি আস্তে আস্তে শ্বাস নিতে থাকেন। এরই মধ্যে তাকে ঘিরে ছোট খাট একটা জটলা জমে গেছে। এরপর আস্তে আস্তে তিনি স্বাভাবিক হন। আস্তে আস্তে ভিড় পাতলা হয়। এসময় তার হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান- হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলে মাথায় আঘাত করায় তার এই অবস্থা। অসুস্থ ছেলেকে দেখভালো করতে রোজ বাড়ি থেকে হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি। আর ছেলের হাতে মার খান। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় মানসিক সমস্যায় পড়ে তার একমাত্র ছেলে। তখন ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতো, পরিবারের লোকজনকে পেটাতো। এরপর থেকে ছেলেকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছে তার পরিবার। -‘কত ডাক্তার যে দেখাইছি, কোনও লাভ হয় নাই। শেষে এই হাসপাতালের খোঁজ পাইয়া এইখানে ভর্তি করছি।’ গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ছেলে। তবে এখনও কোনও উন্নতি চোখে পড়ছে না। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন- ‘আমার মনে হয় ওর মাইর খাইয়াই আমি একদিন মরমু।’
-তাহলে আপনি রোজ রোজ হাসপাতালে কেন আসেন, ওর বাবারে পাঠাতে পারেন না!
-ওর বাবা আসে তো। ও তো ওর বাবারেও মারে। আমরা এখন কি করমু কন!

গরাদের ওপাশে
মহিলার সঙ্গে কথা শেষ করে পুরুষ ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে আসার সময় দেখি একটা ১৭/১৮ বছরের ছেলে গরাদের রড ধরে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। – ছেলেটা কে? আমি গার্ডের কাছে জানতে চাই।
-একটু আগে মায়েরে যে মারলো না এই সেই ছেলে।
অথচ দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগেই এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড করেছে সে। এখন সে ধীরস্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যেন একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। একবার বাইরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলে একজন এসে তাকে রুমের ভিতর নিয়ে যায়। আমরাও আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে থাকি একরাশ দীর্ঘশ্বাস পিছনে ফেলে।

ছবি ও লেখা মাহমুদা আকতার

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/