কাজী দিলরুবা রহমানের কবিতা ‘অস্তিত্বে বাংলাদেশ’

কাজী দিলরুবা রহমান

অস্তিত্বে বাংলাদেশ

এ দেশের মা বন্ধ্যা ছিল বহুকাল
ডাচ ডেনিস ফরাসী পূর্তগীজ বিট্রিশ
আর পাকিস্তানের কাছে।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর দিয়েছে ঔপনিবেশবাদ
সামাজিকতায়  কষ্টভোগ নিদারুণ
মাথা না তুলে দাঁড়ানোর অপমান,
ক্রিতদাসের জীবন তার।
বুকের কান্না জমা অপমান হলো ডোবা
কালে কালে সেই ডোবা সিপাহী আন্দোলন,বঙ্গভঙ্গ,কৃষক আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলন,ভাষা আন্দোলন এবং সর্বশেষ মা দুর্গা রূপে দশভুজী আন্দোলন  পুকুর, খাল-বিল,
নদী-নালা ছাপিয়ে সমুদ্র হয়ে ভয়াল
ঢেউয়ে আছড়ে পরে ১৯৭১ সালে।
ঝড় উঠে সমুদ্রে অসুরের বিনাশ হয়
বন্ধ্যাত্ব ঘুচে যায় বাংলার।
অতঃপর বাংলা গর্ভবতী হয়
জন্ম দেয় নবীন বাংলা।
আমিও তখন জন্ম নেই বাংলার
সাথে সাথে।
বেড়ে উঠি শকুনের চেটে পুটে খাওয়া
শুস্ক মাটির বুকে
তখন সে বুকে কেবল হাহাকার খাদ্য, বস্ত্র,
আশ্রয়ের এমন কি মায়ের বুকের দুধের।
বাংলা মা তার শীর্ণ শরীর টেনে টেনে দশ হাতে সন্তানদের বুকে রেখেছিলেন।
আশ্বাস দিয়েছিলেন সুদিনের কিন্তু তখনও নরম অস্থি আমার শরীরের মত এই বাংলা
সেই থেকে জীবনের যুদ্ধ বাংলাদেশ আর আমার, বেড়ে উঠা একই সাথে।
দেখতে দেখতে ভরে গেছে
ডোবা-নালা, পাল্টেছে জীবন-জীবিকা, শিক্ষা, আশ্রয়, কর্ম সংস্থান।
এ যুদ্ধ সহজ ছিল না
রোগ -শোক, মহামারী, ক্ষুধা -দারিদ্র, কঠিন
এক যাপিত যাপন।
আজ শক্ত অস্থির অস্তিত্ব
শৈশব কৈশোর তারুণ্য পেরিয়ে বাংলার
সাথে জীবনের অভিজ্ঞতায় অনেক পথ দিয়েছি পাড়ি এই আমি।
একদিন চলে যাবো, দেহের মেশিন ক্ষয়ে যাবে, মরে গিয়ে মিশে যাবে এই দেশ মা-মাটির শরীরের সাথে সেভাবে অমর হয়ে থাকবে আমার অস্তিত্ব, দেশের সাথে বাংলা ভূমি বক্ষে ধারণ করে নির্ঘুম জেগে থাকবে যুগ যুগ পৃথিবী বেঁচে রবে যত।

কবি পরিচিতি: কাজী দিলরুবা রহমান একজন সার্বক্ষণিক লেখক। তিনি একাধারে কবি, গল্পকার এবং প্রাবন্ধিক। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিনটি।

ওমেন্স নিউজ/