বাসচাপায় নিহত মাঈনুদ্দিন পেয়েছে জিপিএ–৪

মাঈনুদ্দিন ইসলাম

দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ফল প্রকাশ হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়া সোয়া ২২ লাখ শিক্ষার্থীর। এদিন সকাল পৌনে ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পরীক্ষায় জিপিএ–৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে মাঈনুদ্দিন ইসলাম।

যদিও এই ফলাফল স্বচোখে দেখার সুযোগ নেই তার। কেননা গত দু মাস আগে রামপুরায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে মাঈনুদ্দিন। সে রামপুরার একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

রাজধানীর রামপুরার তিতাস রোডে নিজের চায়ের দোকানে বসে ছেলের জন্য বিলাপ করছিলেন তার বাবা আবদুর রহমান। মাঈনুদ্দিন ইসলামের স্বপ্ন ছিলো- পড়াশোনা শেষ করে ব্যাংকে চাকরি করার। সে তার বাবাকে বলতো -‘চাকরি পেলে তোমাকে আর কষ্ট করে চায়ের দোকান করতে হবে না’—।  কিন্তু আজ এসব কেবলই স্মৃতি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবদুর রহমান বলছিলেন, ‘পুত (ছেলে), তোরে আমি ভিক্ষা করে হলেও পড়াইতাম। তোরে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করবি, অভাবের সংসারে হাল ধরবি। কিন্তু আমার সব স্বপ্ন শেষ করে চলে গেলি।’

মাঈনুদ্দিনের মা রাশিদা বেগম জানান, তার ছেলে খুবই সমঝদার ছিল। অভাবের সংসারে কোনও  কিছুর জন্য আবদার করত না সে। স্কুলে যাতায়াতে ৮০ টাকার মতো রিকশা ভাড়া লাগত। তাই হেঁটেই যাতায়াত করত মাঈনুদ্দিন। এ নিয়ে কোনও অভিযোগ ছিলো না তার।

সংসারের অভাব মেটাতে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করতো সে। পড়ালেখাতেও ভালো ছিল সে। তাকে হারিয়ে এখন দিশেহারা তার পরিবার।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাঈনুদ্দিনের বাবা আবদুর রহমান ১৫ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় চলে আসেন। বিভিন্ন কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। অভাবের কারণে বড় ছেলে মনির হোসেনকে পড়াশোনা করাতে পারেননি। তাই ছোট ছেলে মাঈনুদ্দিনকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন তার বাবা। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। গত ২৯ নভেম্বর রামপুরায় বাসচাপায় মারা যায় মাঈনুদ্দিন।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/