না ফেরার দেশে জনপ্রিয় সুরকার ও গায়ক বাপ্পি লাহিড়ি

বাপ্পি লাহিড়ি

কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পথ ধরে পরপারে পাড়ি জমালেন ভারতের জনপ্রিয় গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ী। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর দেয়া তথ্যমতে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এই গায়ক।

গত কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। সোমবার ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু মঙ্গলবার ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ওই হাসপাতালেরই আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতের জনপ্রিয় এই সংগীত ব্যক্তিত্ব।

'ডিস্কো কিং' খ্যাত বাপ্পি লাহিড়ীর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গোটা ভারত। তার প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি  টুইট করে লিখেছেন, 'বাপ্পি লাহিড়ীর মিউজিকে অনন্য জাদু ছিল। কতরকমের অভিব্যক্তি ছিল। সব প্রজন্মের মানুষের কাছেই তার গান সুপারহিট। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রাণোবন্ত। গোটা দেশ তাঁর প্রয়াণে শোকাহত। বাপ্পি লাহিড়ীর পরিবারের প্রতি সহানুভূতি রইল। ওম শান্তি।'

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ীর অকস্মাৎ প্রয়াণে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। উত্তরবঙ্গের ছোট্ট ছেলেটি নিজের প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়েই গোটা দেশে খ্যাতি, যশ অর্জন করেছিল। সংগীত দুনিয়ায় তার অবদান আমাদের চিরকাল গর্বিত করে। আমরা তাকে বঙ্গবিভূষণে সম্মানিত করেছিলাম। তাকে চিরকাল এভাবেই মনে রাখব আমরা।’

বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

বাপ্পি লাহিড়ীর জন্ম ১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায়। তার আসল নাম অলোকেশ। ভারতের এক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা তার। বাবা ও মা দু’জনেই ছিলেন সংগীত জগতের মানুষ। ৩ বছর বয়সে তবলা বাদক হিসেবে কেরিয়ার শুরু। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ভারতের সংগীত জগতকে করে রেখেছিলেন আলোকিত। বিশেষ করে বলিউডের গানকে গোটা উপমহাদেশে জনপ্রিয় করে তুলতে তার অবদান অনেক।

গত শতাব্দির আশির দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের জগতে পপ-ডিস্কো গানের যে জোয়ার এসেছিল তার অন্যতম পুরোধা ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। ‘ডিস্কো ডান্সার’ (১৯৮২), ‘ডান্স ডান্স’ (১৯৮৭) হয়ে একের পর এক ছবিতে করা তার সুর সেই সময়ের তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলিত করেছিল। সংগীতের সমসাময়িকতা যে তার নাড়ির স্পন্দনে তা নতুন করে প্রমাণিত হয়েছিল ২০১১ সালে ‘ডার্টি পিকচার’ ছবিতে ‘উ লা লা’ গানের মধ্যে দিয়ে। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বুঁদ করে রাখার কোন জাদুক্ষমতায় বলীয়ান তিনি। তবে কেবল পপ বা ডিস্কো নয়, নরম রোম্যান্টিক গানেও যে তিনি অনন্য তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল কেরিয়ারের শুরুতে ‘চলতে চলতে’ (১৯৭৬) ছবিতে বাপির করা সুর থেকেই। ২০২০ সালে ‘বাগী ৩’ ছবিতে ‘ভাঙ্কাস’ গানটিই ছিল বলিউডে তার শেষ কাজ।

কেবল হিন্দি নয়, অনেক জনপ্রিয় বাংলা গানেরও স্রষ্ঠা ছিলেন বাপ্পি। তার গাওয়া চিরদিনই তুমি যে আমার, বলছি তোমার কানে কানে, সোনার আখরে লেখা, মনে পড়ে তুমি ছিলে, বালিতে তোমার নাম লিখে দিলাম, জীবনের এতগুলো দিন গানগুলি তাকে স্মরণীয় করে রাখবে চিরদিন ধরে।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/