মাহমুদা আকতারের গল্প ‘ফুল নেবো না, অশ্রু নেবো’

মাহমুদা আকতার

ফুল নেবো না, অশ্রু নেব

-কি রে শিখারানী, এত রাতে ছাদে বসে আছিস, কি ব্যাপার? ভাগ্যিস জোসনা আছে, নইলে তোকে তো চোখেই পড়তো না। টিপ্পনি শুনে গা জ্বলে যায়।
-আমাকে অন্ধকরে দেখা যাক বা না যাক তাতে তোমার কি? তুমি কেন এসেছ এখানে জ্বালাতে।
-আরে জ্বালাতে নয় রে, জানাতে আসলাম। কাল ফিরছি ঢাকায়। তুইতো তো আর রাজধানীতে যেতে পারলি না, মফস্বলেই পচে মর সারাজীবন।
-আমাকে নিয়ে অত ভাবতে হবে না। আমি বেশ আছি।
-আরে আমার অত সময় আছে নাকি তোকে নিয়ে ভাববো। জাস্ট শুভাকাঙ্খী হিসাবে কিছু পরামর্শ দেই। জীবন যে কত চমৎকার, কত আনন্দের তুই তো তার কোনও স্বাদ পেলিনা। তোর জন্য আমার সত্যি আফসোস হয়। এইসব কথা শুনলে কার না রাগ হয়! আমারও হচ্ছে। কিন্তু সে রাগ চেপে কেবল বলি
-তোমার আনন্দের জীবন। আমার কথা ভেবে তুমি না হয় আরেকটু বেশি আনন্দ করে নিও।
-তুই চাইলে এখনও যেতে পারিস। আমি তোকে নিয়ে যাব, কাক পাখিটিও টের পাবে না।
-তোমার কি লজ্জা শরম বলে কিছু নাই! এসব কথা মুখে আসে কি করে?
আমার কথায় কোনওই ভাবান্তর নেই তার। বরং দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলে- আরে লজ্জা আছে বলেই তো রাতে আসলাম। নইলে দিনে দুপুরে বুক ফুলিয়ে তোর কাছে আসতাম।

কথা শুনে রাগে গা জ্বলে যায়। কিন্তু কী যন্ত্রণা-সেই রাগ আমি প্রকাশ করতে পারছি না। আমি খুব শান্ত একটা মেয়ে, কবির ভাষায় যাদের বলা হয় ‘দীঘির মতো শান্ত’। সবাই তো কবি না। তাই অনেকের কাছে আমি বোকা, আনস্মার্ট আর অসামাজিক। স্পষ্ট করে বললে- বলদা টাইপের মেয়ে। ছোটবেলায় মা কানের কাছে সারাক্ষণ মন্ত্র পড়ার মতো বলতেন- ‘মেয়ে হইছো, এই কথাটা সবসময় মাথায় রাখবা, সাত চড়েও রা করবা না।’ সাত না, কেউ এখন আমার দু গালে গুণে গুণে চৌদ্দ থাপ্পড় দিলেও আমি ঠিক মাথা নিচু করে ঘরে চলে আসবো। কষ্ট, কান্না, দুঃখ সব এক এক করে গিলে নিবো। মানুষ তো দূরের কথা, কাক পক্ষীটি পর্যন্ত টের পাবে না। এতটাই নির্বিবাদী আমি। শরীরে-মনে কোথাও এক ফোঁটা তেজ নাই, ঢোড়া সাপের চাইতেও নির্বীষ আমি। এই ঢ্যাবঢ্যাবা সাপটার দাঁতে ফাঁকে কিছু সুপ্ত বিষ থাকলে থাকতেও পারে। কিন্তু আমার সেটুকুও নাই। কারো সঙ্গে তর্ক বা প্রতিবাদ করার কথা তো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি না। যদিও একারণেও লোকসমাজে ভালো মেয়ে হিসাবে আমার খুব সুনাম। আমি এই সুনামের ভারে ভারাক্রান্ত। কি করবো আমি এত সুনাম দিয়ে, যদি নিজের ভিতরের রাগ, দুঃখ, কষ্ট এমনকি ভালো লাগার কথাও মুখ ফুটে  বলতে না পারি।  এইজন্য তো আজকাল নিজের প্রতি খুব রাগ হয় আমার। বিশেষ করে যখন ওই মানুষটা আসে, আর আমারে কথার প্যাঁচে ফেলে মজা নেয়। তখন তো আমি তার কোনও কথারই উত্তর দিতে পারি না। এজন্য নিজের ওপর যে কী অসহ্য রাগ হয়! যেমন এখন হচ্ছে। হ্যা খুব রাগ হচ্ছে আমার! কিন্তু সেই রাগ প্রকাশ করতে পারছি না। এই মানুষটা কি কখনও আমার এই কষ্টটা বোঝে! আমি স্পষ্ট জানি, সে আমার কোনও কষ্টই বোঝে না সে। অথবা হতে পারে আমাকে কষ্ট দিয়েই মজা পায় সে। আমি কি তোমার একমাত্র গিনিপিগ? নাকি পোষা বেড়ালছানা। ইচ্ছা হলে কাছে এসে হাসি মুখে দুটো কথা কইবে, কখনও বা ভীমরুলের মতো হুল ফোটাবে, কথার হুল। কই যাওতো, তোমার প্রিয় বান্ধবীদের কাছে গিয়ে এরকম কিছু বলো দেখি। না, সে সাহস যে তোমার কোনও দিনও হবে না সে আমি জানি! তোমার সব বীরত্ব কেবল আমার সাথে।

এইসব কথা আমি কেবল মনে মনে বলি, প্রকাশ করার কথা চিন্তাও করতে পারি না। নিজের সঙ্গে খুব কথা বলছি আজকাল। হয়তো প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস হয় না বলেই নিজের সঙ্গে কথা বলার স্বভাবটা স্থায়ী রূপ পাচ্ছে।

বাবা সেদিন ডেকে বললেন- মা, শোভারানী তোমার কি কোনও পছন্দ আছে? থাকলি মুখ ফুটে বলো মা, লজ্জার কিছু নেই।
আমার ভালো নাম জান্নতুল ফাতিমা, ডাক নাম শোভা। কী আমার শোভা! ওই যে কথায় বলে না-কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন! আমার হয়েছে সেই অবস্থা। কালো-মোটা বদসুরতে একটা মেয়ের নাম কিনা শোভা। আর বাবা কেন যেন আমায় ডাকবে শোভারাণী। শোভা পযন্ত না হয় ঠিক আছে, তাই বলে এর সঙ্গে জুড়ে দেয়া অংশটুকু আমার মোটেও ভালো লাগে না। বাবা যে আমাকে আদর করে এই নামে ডাকে সে আমি বুঝি! তাই বাবা ছাড়া আর কেউ আমাকে এ নামে ডাকলে রাগ হয়। কিন্তু সেই মানুষটা আমাকে খেপানোর জন্য সারাক্ষণ শোভারানী, শোভারাণী করবে। কিছু বলাও যায় না, সহাও যায় না।
এ নাম রেখেছিলেন আমার দাদু। এ নিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে কতদিন তাকে বলেছি-‘কালো মেয়ের নাম হবে কাজল, শ্যামা-তার বদলে শোভা। এ কেমন কাণ্ড করিছ তুমি দাদু।’
দাদু তখন ছড়া কেটে বলতেন- কালা গলার মালা, ধলা পায়ের তলা। তুমি আমার ঘরের শোভা-যেভাবে বাড়ির শোভা ছড়ায় ফুটন্ত গোলাপ, গাঁদা, কসমস-সেভাবে তুমিও শোভা বাড়াচ্ছ। বড় হলে কেবল বাড়ি নয়, তোমার গুণের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে গোটা অঞ্চল। এসব কথা শুনলে তখন দাদুর সঙ্গে খুব রাগ দেখাতাম। এই একটা মানুষের সঙ্গেই কেবল আমি রাগ দেখাতে পারতাম। যদিও খুব সে সুযোগ পাইনি। আমার স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার আগেই আল্লাহ তাকে আদর করে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে গেছেন। কারো মৃত্যুর খবর শুনলে দাদু বলতেন-‘ আল্লাহ আদর করে তার প্রিয় বান্দাকে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে গেছেন। তোমরা খামোখা চোখের জল ফেলে তার কষ্টের পাল্লা ভারি করছো কেন।’ আমার দাদু এভাবেই প্রিয়জন হােরানো শোকাতুর স্বজনদের সান্ত্বনা দিতেন।

মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তার মধ্যেই কোথায় ছুটে গেছে মন, কত কিছু ভেবে নিয়েছে। বাবা আবার তাড়া দেয়। ‘কিরে মা, কিছু বলছিস না যে! খুব ভালো একটা সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে সরকারি কলেজের মাস্টার। বাগেরহাট বাড়ি, এক মায়ের এক ছেলে। ছবি দেখে তোকে পছন্দ করেছে। তোর চাকরি করার শখ শুনেও তারা রাজি। তুই কি বলিস মা!’ আমার হয়ে উত্তর দিলেন মা
-ওর আবার কি বলার আছে। আমরা যেটা ভালো বুঝবো সেটাতেই ওর ভালো।
-বীনা এটা কি তোমার আমার সময়, এখন ছেলেমেয়েদের পছন্দ পছন্দ থাকতেই পারে। মোটের ওপর মেয়ের মত না নিয়ে আমি এগুতে চাইনে।
কিন্তু আমি বাবাকে কি বলবো! সেই মানুষটা কি কখনও আমাকে কিছু বলেছে। কেন বলবে সে? তার কি ভালোবাসার মানুষে আকাল পড়েছে কিছু? ঢাকা শহরে তার কত বান্ধবী! আমি তো আর ন্যান্সি, মিলা,আলিফ কিংবা শর্মি নই। আমি হলাম লেবেনডিস এক মফস্বলের মেয়ে, তারওপর কৃষ্ণকলি। আমাকে তার কেন ভালো লাগবে!
কথায় বলে মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। আমিও নিশ্চুপ থেকে সে কথার প্রমাণ দিলাম। দ্রুত এগোলো কথাবার্তা। শেষে মাস্টারমশাইয়ের সাথে বিয়ে হচ্ছে আমার। যার একান্ত বাধ্যগত ছাত্রী হওয়াই আমার ভবিতব্য। এর বেশি আর কি হতে পারে! আমার এ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই যতটা ছোট বোন শিমুলের। সে ছবি এনে আমার টেবিলে বইয়ের তলায় রেখে গেছে। আমি এক ঝলক দেখে উল্টে রেখে দিয়েছি। এভাবে দেখে কি মানুষকে বোঝা যায়! তাছাড়া সারাজীবন একসঙ্গে থেকেই বা কাকে কে বোঝে। অতএব তিনবার কবুল বলা ছাড়া এই বিয়েতে আমায় আর তেমন কোনও ভূমিকাই পালন করতে হচ্ছে না। কিন্তু একদিন বাবা এসে বললেন-রাজীব তো তোর সাথে দেখা করতে চায়? কোথায় দেখা করবি? বাসায় না রেস্টুরেন্টে? আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মা বললেন
-এ আবার কেমন কথা হোটেলে দেখা করবে, বাড়িতে আসতে বলো।
সেদিনই আমি তাকে প্রথমবারের মতো ভালো করে দেখলাম। ধবধবে সাদা, রোগাটে একটা মানুষ। হয়তো ঢোলা শার্ট পড়েছে বলেই আরো বেশি ঢ্যাঙা লাগছে দেখতে। নাকের নিচে রাজকাপুরের মত একটুখানি মোচ। আমি এ সময়ের মেয়ে-রণবীর, হৃতিকদের বারান্দা ছাড়িয়ে বড়জোর শাহরুখ, সালমানদের চিনতে পারি। কিন্তু  রাজকাপুরকে তো আমার চেনার কথা নয়, চিনি দাদুর কারণে। দাদু খুব পুরনো দিনের সিনেমা দেখতেন। তবে তার প্রিয় ছিল দিলীপ কুমার। আমরা ডিভিডিতে কেউ ছবি দেখতে থাকলেই তিনি বলতেন-ওই দিদার সিনেমাটা দে তো। তাপর গুনগুন করে গেয়ে উঠতেন- ‘বাচ পান কে দিল বোলা না দেনা।’
তো দাদুর সাথে থেকে থেকে আমি বোম্বের পুরনো দিনের প্রায় সব নায়ককেই চিনি। যে কারণে লোকটাকে দেখা মাত্র রাজকাপুরের মোচের কথা মনে পড়েলো। যদিও রাজকাপুরের মতো সুদর্শন সে না। তারপরও আমার বেশ লাগছিলো। বিকেলের পড়ন্ত আলোয় পাযরার উড়াউড়ি দেখতে দেখতে ভাবছিলাম-এ যেন কোনও এক সিনেমার দৃশ্য। আমি যেন এখানে শশরীরে উপস্থিত নই, দূর থেকে দেখছি। কোথাও থেকে ভেসে আসছিলো মিষ্টি কাঁঠালচাপার গন্ধ। এই বিকালটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে প্রচেষ্টারই কোনোই কমতি রাখেননি আমার মা। নিজের অসুন্দর মেয়েটিকে পাত্রপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এতসব আয়োজন তো তাকে করতেই হতো, এ আর নতুন কি! কিন্তু এবার প্রকৃতিও যেন তাকে সহায়তা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। নইলে কাঁঠাঠালিচাপা কেন ফুটবে এ অসময়ে। আমাদের বাগানে তো এই গাছ নেই-ই। তারপরও কাঁঠালচাপার সুগন্ধে ভরপুর চারপাশ, যার অস্তিত্ব আমি এই ছাদে বসেই টের পাচ্ছি। আমরা দু’জন অপরিচিত নারী পুরুষ টেবিলের দুপাশে বসে আছি। কারো মুখে কোনও কথা নেই। আমি তো লাজুকলতা, এমনিতেই কথা কম বলি। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে-তারও যেন কোনও তাড়া নেই। আমারও খারাপ লাগছে না বসে থাকতে। এভাবে কত সময় কেটে গেছে ঠিক নেই। মানুষটা ধূমায়িত চায়ের কাপখানা টেবিলে রেখে হঠাৎ করে বলে উঠলেন-আমি কিন্তু একটা কথা জানতেই এসেছি। আচ্ছা আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে? আমি মাথা নাড়তেই তিনি হেসে উঠলেন, একই সঙ্গে নেচে উঠলো তার বাম গালের ডিম্পলটি। -ওমা লোকটার দেখি গাল হাসে। আমার দাদু থাকলে বলতেন-‘এই ব্যাটার বউ মরবে আগে। আমার শিখারাণীকে ওর কাছে বিয়ে দেয়া যাবে না!’বেশিক্ষণ অতীত মন্থোরনের সুযোগ পেলাম না। তার আগেই ওপক্ষের ব্যাকুল জিজ্ঞাসা
-কি হলো, কথা বলছোনা কেন,মনে ধরেনি আমায়?
আমি সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিঃসঙ্কোচে জানতে চাইলাম-আচ্ছা, আমি তো দেখতে কালো। আমাকে কি করে পছন্দ করলেন?
-এজন্য তো করেছি। তুমি শ্রাবণের কালো মেঘ, আমি শরৎ শশী। কী দারুণ কম্বিনেশন। আজীবন দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে ভেসে থাকবো মনের আকাশে। ব্যস, মাত্র একটি কথা। আর একটি কথা শুনেই আমার রাজকাপুরকে থুড়ি মানুষটাকে ভালো লেগে গেলো। সে চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার অনামিকায় আংটিটা পরিয়ে দিলেন।
এখানে গল্পটা শেষ করতে পারলে বেশ হতো। যাকে বলে একেবারে মধুরেণু সমাপন। কিন্তু আমার ভাগ্যে কি এতই ভালো! বিয়ের দুদিন আগে তিনি এসে হাজির। বাবা-চাচারেদ কাছে গিয়ে কি তদবির করেছে কে জানে! আমাদেরই বৈঠকখানায় বসেছে জরুরি সভা। সেই সভায় আমাকেও তলব করা হলো। আর করবে নাই বা কেন, এত আয়োজন যে আমাকে ঘিরেই। বাবা আর চাচারা তো রেগে কাঁই। কিন্তু তার কি আর এসবে কিছু যায় আসে! তিনি দিব্যি বলে চলেছেন
-আপনারা এভাবে জোর করে ফাতেমার বিয়ে দিতে পারেন না। আমি ওকে ভালোবাসি, ও আমাকে ভালোবাসে। চেনা যাই জানা নাই হুট করে একটা ছেলেকে ডেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলবেন। তা কি করে হয়!
-কিন্তু শোভা তো কোনও আপত্তি করেনি। সে তো তোর কথা কিছু বলেনি। সে স্বেচ্ছায় এই বিয়েতে রাজি হয়েছে। আমরা কেউ তো ওকে জোর করিনি। বলেনি।
-ও কি কোনওদিন কিছু বলেছে, বলতে পারে? এখন আমি বলছি আমার কথা শুনুন…আমরা একজন অন্যজনকে ভালোবাসি। তাই এ বিয়ে বন্ধ করুন। ফাতেমার বিয়ে আমাকে ছাড়া আর কারো সাথে হতে পারে না।
আমার রাগ হয় খুবই। ইস, এত ভালোবাসা! কই কোনও দিন তো তুমি আমাকে বলোনি। একটিবারের জন্য অনুভব করতেওি দাওনি। আমি নিজেই মনে মনে ভালোবেসেছি আর জ্বলেপুড়ে মরেছি। এখন এসেছো ভালোবাসা জাহির করতে! তোমার কথাই সব না! দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি মজা।
-কীরে শোভা, চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল। হ্যা এবার আমাকে মুখ খুলতেই হবে।
-ভাইডি, কী সব পাগলামি করতিছো। তুমি তো আমার কাজিন। আমরা একসাথে বড় হয়েছি। আমার তো কখনও সেরকম মনে হয়নি। এরপর তার বিস্মিত চোখের সামনে দিয়ে আমি দৃঢ় পায়ে হেঁটে এসেছি। অনেক দিন পর আমার অনেক ভালো লেগেছে। খুব ভালো। প্রতিশোধটা ঠিকঠাক মতো নেয়া গেছে। কে বলে সবসময় চিৎকার চেঁচামেচি করে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। এইভাবে নীরবেও তো হয়।
রাতে ফোন দিলো। ধরলাম।- এটা তুই কি করলি ফাতেমা, কেন করলি এরকম? তুই কি পারবি আমাকে ছাড়া থাকতে?
দেখো, কি অবস্থা! এখনও আমারই দোহাই দেয়া হচ্ছে-আমি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে কেবল বললাম-
-ভালোবাসার পরীক্ষায় তো কোনওদিন উতরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তোমার। আমি তো একাই ভালোবেসেছি, একাই কেঁদেছি। এবার কষ্ট পাওয়ার প্রতিযোগিতায় জিততে পারো কিনা দেখো।

মাহমুদা আকতার: কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও অনূবাদক। প্রকাশিত গ্রন্থ পাঁচটি।

ওমেন্স নিউজ/