লালমনিরহাটে ঐতিহাসিক ‘কান্নাকাটির মেলা’ অনুষ্ঠিত

হাসানুজ্জামান হাসান

দুই দেশের সীমান্তে অনুষ্ঠিত ‘মিলন মেলা’ স্থানীয়দের কাছে 'কান্নাকাটির মেলা' নামেই পরিচিত। মেলায় অংশ নেওয়া মানুষদের দেখলে নামটির তাৎপর্য বুঝতেও যেন বাকি থাকে না।

বুধবার (৩০ মার্চ) দুপুরে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের ঘোঙ্গাগাছ সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে মালদহ নদীর তীরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পাকিস্তান আমল থেকে মেলাটি অনুষ্ঠিত হলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত ২ বছর মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়নি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সিতাই থানায় কাটাতারের বেড়ার পাশে ভেড়ভেড়ি এলাকায় মালদহ নদীর তীরে গঙ্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর চৈত্র মাসে এ মেলার আয়োজন করা হয়।

সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও ভারতীয়রা জানান, উভয় দেশের নাগরিক মালদহ নদীতে পুণ্যস্নান করেন। বিশেষ করে ভারতীয় নাগরিকরা কাঁটাতারের বেড়ার পাশে ভেড়ভেড়ি এলাকায় গঙ্গাপূজা করার পর মালদহ নদীতে পুণ্যস্নান করে থাকেন। করোনা মহামারির কারণে ২ বছর পর সীমান্ত মেলাটির আয়োজন করার ফলে এ বছর দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। দু’দেশের মানুষ অনেক দিন পর একত্রিত হয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করেন বলে এই মেলাকে সবাই কান্নাকাটির মেলা বলেই জানে।

মেলায় আসা রবীন্দ্র নাথ জানান, তার অনেক বয়স হয়েছে। শরীরে নানা রোগ দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় মারা যেতে পারেন। তাই মৃত্যুর আগে ভারতে বসবাসরত বোনকে এ নজর দেখার জন্য এ মেলায় এসেছেন। বোনকে কিছু খাবার দিয়েছেন। বোনও তার জন্য খাবার এনেছিলেন। তিনি আরও জানান, তাদের পাসপোর্ট তৈরি করার সামর্থ্য নেই। তাই সীমান্তে কান্নাকাটির মেলায় এসে ভারতীয় আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা থেকে মেলায় এসে ছিলেন দীলিপ সিংহ। তিনি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। দেখা করেন ভারতে বসবাস করা বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে। প্রায় এক যুগ পর ভাই-বোনের দেখা হলে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। এ সময় দুই ভাই বোন দু’দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেন।

গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, লালমনিরহাটসহ পাশের জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার বাংলাদেশি এসেছিলেন কান্নাকাটির মেলায়। অধিকাংশ মানুষ এসেছিলেন ভারতে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। কঠোর নজরদারিতে মেলাটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। সন্ধ্যা ৫টা পযর্ন্ত সীমান্তে মালদহ নদীর তীরে ভিড় ছিল মানুষজনের। মেলা শেষে দু’দেশের নাগরিকরা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/