বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ১০ পারফিউম

ছবি-সংগৃহীত

শরীরে ঘাম বা এজাতীয় দুর্ঘন্ধ লুকাতে সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করে থাকেন কম বেশি সবাই। তবে কেবল দুর্গন্ধ এড়াতে নয়, কেউ কেউ আবার নামীদামি সংস্থার পারফিউম ব্যবহার করেন শখ করে। দামি পারফিউমগুলির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এর সুদৃশ্য বোতল এবং প্যাকেজিং। বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান পারফিউমগুলির বোতল ক্রিস্টাল, মূল্যবান পাথর এমনকি, হিরে দিয়েও সুসজ্জিত থাকে। এসব পারফিউমের এক একটি বোতল কোটি টাকাতেও বিক্রি হয়। দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ১০টি পারফিউমের নামগুলো।

১. শুমুখ
এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি পারফিউম। এই পারফিউমের বোতলটির দাম প্রায় সাড়ে ন’কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ‘নাবিল পারফিউম’ নামক সংস্থা এই পারফিউম তৈরি করে। কিন্তু কেন এত দাম এই পারফিউমর? চন্দন, কস্তুরী এবং গোলাপের নির্যাস দিয়ে তৈরি এই পারফিউমের একটি বোতল সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি হিরে, ২.৫ কেজির সোনা এবং ৫.৯ কেজি রুপো দিয়ে তৈরি।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এবং প্রায় ৪৯০ বারের চেষ্টার পর প্রস্তুতকারকেরা এই পারফিউম তৈরি করেছিল। শুমুখের বোতলটির দু’টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও রয়েছে। শুমুখই এক মাত্র পারফিউমের বোতল যা এত সংখ্যক হিরে দিয়ে তৈরি। পাশাপাশি এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা রিমোট নিয়ন্ত্রিত সুগন্ধির বোতল।

২. ডিকেএনওয়াই গোল্ডেন ডেলিসিয়াস
বিশ্বের দ্বিতীয় মূল্যবান পারফিউম ডিকেএনওয়াই গোল্ডেন ডেলিসিয়াস। ডিকেএনওয়াই গোল্ডেন ডেলিসিয়াসের বোতলটির দাম প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। বিখ্যাত গহনা ডিজাইনার মার্টিন কাটজ এবং বিখ্যাত ডিজাইনার ডিকেএনওয়াই যৌথ ভাবে এই পারফিউম তৈরি করেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল সর্বকালের সবচেয়ে সুন্দর এবং ব্যয়বহুল পারফিউম তৈরি করা।

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুসারে, ডিকেএনওয়াই গোল্ডেন ডেলিসিয়াসের আপেল আকৃতির বোতলটি বিশ্বের ২,৯০৯টি বাছাই করা মূল্যবান পাথর দিয়ে সজ্জিত। যার মধ্যে ১৮৩টি হলুদ নীলকান্তমণি, দু’হাজার সাতশো সাদা হিরে, অস্ট্রেলিয়ার ১৫টি গোলাপি হিরে ছাড়াও একাধিক দামি পাথর রয়েছে। এই পারফিউমর একটি বোতল তৈরি করতে প্রায় দু’মাস সময় লাগে।

৩. অপেরা প্রাইমা
২০১৪ সালে ইটালির বিলাসবহুল সংস্থা বলগারি ১৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্‌যাপনের সময় পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল পারফিউম ‘অপেরা প্রাইমা’ বাজারে আনে। ‘অপেরা প্রাইমা’-র এক একটি বোতলের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ( ২ কোটি ৩৮ লাখ ১৪ হাজার ৪৬৮ টাকা)। ২৫০ ক্যারাট সিট্রিন, ৪.৪৫ ক্যারাট অ্যামিথিস্ট এবং ২৫ ক্যারাট হিরে দিয়ে এই পারফিউমর বোতল তৈরি করা হয়েছে ৷

 

৪. ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান নম্বর ওয়ান
ক্লাইভ ক্রিশ্চিয়ান পারফিউম সংস্থা ১৮৭২ সালে তৈরি একটি ব্রিটিশ পারফিউম সংস্থা। এটিই একমাত্র সংস্থা যাকে ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার মুকুটের আদল ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান নম্বর ওয়ান এই সংস্থার তৈরি একটি পারফিউম এবং বিশ্বের চতুর্থ মূল্যবান পারফিউম। ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান নম্বর ওয়ান-এর একটি বোতলের দাম প্রায় ১.৬ কোটি টাকা। পাঁচ ক্যারাট সাদা হিরে এবং ১৮ ক্যারাট সোনা দিয়ে এই পারফিউমর বোতল তৈরি করা হয়েছে।
২০০৫ সালে ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান নম্বর ওয়ান-এর মাত্র ১০টি বোতল তৈরি করা হয়। যার মধ্যে সাতটি বোতল বিক্রি হলেও বাকি তিনটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রদর্শনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

 

৫. ভি ওয়ান: পৃথিবীর অন্যতম উৎকৃষ্ট পারফিউম হল জিয়ান্নি ভিভ সুলমানের তৈরি পারফিউম ভি ওয়ান। এক সময় এটি পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনের প্রিয় পারফিউম ছিল এটি। ১৯৯৮ সালে এই পারফিউম প্রথম বাজারে এলে মাইকেল এর বেশ কয়েকটি বোতল একসঙ্গে কিনে নেন। যদিও এই পারফিউমের মোট ১৭৩টি বোতল তৈরি করা হয়েছিল। হিরে, চুনি এবং সোনা দিয়ে তৈরি বোতলে রাখা এই পারফিউমর দাম ৬৮ লক্ষ টাকা।
 

৬. ওয়ান মিলিয়ন
প্যাকো রাবানে-র ওয়ান মিলিয়ন পারফিউম বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের মূল্যবান পারফিউমগুলির অন্যতম। এই পারফিউমের বোতল ১৮ ক্যারাট সোনা এবং একটি ০.৩ ক্যারাট হিরে দিয়ে তৈরি। এ ছাড়াও, পারফিউমের বোতলটি আবার একটি চামড়ার বাক্সে ভরে বিক্রি করা হয়। এই চামড়ার বাক্সটি একটি সোনার তালা দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। এই পারফিউমের অনেকরকমের সেন্ট রয়েছে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এই সীমিত সংস্করণের পারফিউমের প্রতিটি বোতলে আলাদা আলাদা সেন্ট রয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর এক বোতল পারফিউমের দাম ৫২ লক্ষ টাকারও বেশি।

৭. বাক্কারত
অনবদ্য মানের বাক্কারত পারফিউম সংস্থার বিশেষ নাম রয়েছে। এই পারফিউমের তিনটি সীমিত-সংস্করণ রয়েছে। এই পারফিউমর বোতল পিরামিড আকৃতির এবং স্বচ্ছ স্ফটিক দিয়ে তৈরি। এই পারফিউমর একটি ৩০ মিলিলিটার বোতলের দাম প্রায় ৫.২ লক্ষ টাকা।

 

৮.শ্যানেল গ্র্যান্ড এক্সট্রেট এন ফাইভ
শ্যানেলের সীমিত-সংস্করণ এন ৫ পারফিউম সংগ্রাহকদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়। এটিই শ্যানেল সংস্থার সবচেয়ে দামি পারফিউম। এন ফাইভের একটি ২২৫ মিলিলিটার বোতলের দাম প্রায় ২.৭ লক্ষ টাকা। ফুলের তোড়ার গন্ধযুক্ত এই পারফিউমের বোতলটিও দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। জাঁকজমকপূর্ণ এই কাচের বোতল দেখলেই এটি কিনতে ইচ্ছে করবে।

৯. পোয়েভরে
 ১৯০৪ সালে ফরাসি পারফিউম নির্মাতা আর্নেস্ট ডালট্রফ ‘ক্যারন পারফিউমারি’ নামে পারফিউম সংস্থা তৈরি করেন। বর্তমানে এটি ফ্রান্সের অন্যতম বিখ্যাত এবং একচেটিয়া বিলাসবহুল পারফিউম সংস্থা। ক্যারন পারফিউম সংস্থার পোয়েভরে পারফিউম বিশ্বের সব থেকে দামি পারফিউমগুলির একটি। পোয়েভরে-র বোতলটি স্বচ্ছ স্ফটিকের তৈরি এবং এই বোতলের ঢাকনা সোনার তৈরি। এ ছাড়াও বোতলের বাইরের অংশ ছোট ছোট একাধিক স্ফটিক দিয়ে সুসজ্জিত। ১৯৫৪ সালে এই পারফিউম নারীদের ব্যবহারের জন্য চালু করা হয়েছিল। পোয়েভরে-র ৯০ মিলিলিটার বোতলের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আড়াই লাখ টাকা (২ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৪ টাকা)।

১০. জয়
 বিশ্বের সেরা পারফিউমের তালিকায় ফরাসি পারফিউম জয়-এর সুনাম আছে। বিখ্যাত ফরাসি ডিজাইনার জিন পাতু এই পারফিউম তৈরি করেন। ২০০০ সালে জয় ‘শতাব্দীর সেরা পারফিউম’-র তকমা পায়। বিভিন্ন ধরনের গোলাপ এবং দশ হাজার জুঁই ফুলের নির্যাস দিয়ে এই পারফিউমটি তৈরি করা হয়েছে। জয়-এর প্রতি আউন্স পারফিউম-র দাম প্রায় ৬৫ হাজার টাকা।

ছবি ও লেখা-ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/