শুভ জন্মদিন মানুষ গড়ার কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

আজ ২৫ জুলাই, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন। শিক্ষকতা এবং শিল্প-সাংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে তিনি সফলতা দেখিয়েছেন।  কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক, সাহিত্য-সম্পাদক ও টিভি ব্যক্তিত্ব হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করলেও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তার জীবনের সেরা কাজ হিসাবে বিবেচিত। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছে তার এই প্রতিষ্ঠানটি।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৩৯ সালের এই দিনে কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার কামারগাতি গ্রামে। তার বাবা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন কলেজ শিক্ষক । ১৯৫৫ সালে তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ১৯৬০ সালে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

আনুষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে ১৯৬১ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে সিলেট মহিলা কলেজ, রাজশাহী কলেজ এবং ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে (বর্তমানে সরকারী বিজ্ঞান কলেজ) এবং সর্বশেষ ঢাকা কলেঝে শিক্ষকতা করেন তিনি। মাত্র ২৩ বছর বয়সে ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে দু' বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে বাংলা পড়ান।

কেবল শিক্ষকতা নয়, কবি ও প্রাবন্ধিক হিসাবেও তিনি সফল। ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয়, তিনি ছিলেন তার নেতৃত্বে। সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বেগবান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে। এ সময় কিছুকাল বাংলাদেশে টেলিভিশনে উপস্থাপনাও করেন।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
কিশোর ও যুব সমাজকে আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৮ সালে বিশ্বসাহিত্য প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। এর মূল্য ছিলো  গ্রন্থপাঠের মাধ্যমে তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করা। আলোকিত মানুষ চাই -এই শ্লোগানের উপর ভিত্তি করে সংগঠনটি বাংলাদেশে বই পড়া ও সৎ চিন্তা বিকাশ ঘটানোর জন্য কাজ করে থাকে। এর মূল কার্যালয় ঢাকার বাংলামটর এলাকায় অবস্থিত। তবে দেশব্যাপী শাখা রয়েছে।

"মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়" এই স্বপ্ন নিয়েই বর্তমানে সারা দেশের প্রায় ১৭ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী বই পড়া কর্মসূচির সাথে জড়িত। এছাড়াও জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আনন্দময় চর্চা ও উৎকর্ষের ভিতর দিয়ে উদার দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার জন্য ২০১৩ সাল থেকে চালু হয়েছে আলোর ইশকুল ও অনলাইনে বইপড়া কর্মসূচি আলোর পাঠশালা। কেন্দ্রে রয়েছে সুবিশাল গ্রন্থাগার, চিত্রকলা প্রদর্শনী কক্ষ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কক্ষ, গান ও সঙ্গীতের আর্কাইভ সহ আরও অনেক কিছু। ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার প্রকল্পের অধীনে সংগঠনটি বাসে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন বই প্রেরণের কাজও করে থাকে। সারাদেশব্যপী এ লাইব্রেরীর প্রায় ৫৬টি ভ্রাম্যমাণ গাড়ি আছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ২০০৪ সালে রেমন মেগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন তার এই অসাধারণ সংগঠনটির জন্য।

এছাড়া শিক্ষায় অবদানের জন্য একুশে পদক (২০০৫), প্রবন্ধে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ (২০১২) আরও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

আজ তার ৮৪তম জন্মদিনে ওমেন্স নিউজের পক্ষ থেকে তাকে জানাই অশেষ শ্রদ্ধা ও অভিবাদন। শুভ জন্মদিন আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। আমরা আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/