যখন তখন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং কিছু তিতা কথা

বাজারে দুই দামে বিকাচ্ছে আড়ংয়ের তরল দুধ

মাহমুদা আকতার

অকস্মাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়া আমাদের দেশের একটি কমন সমস্যা। আমরা সবাই এই সমস্যার সঙ্গে সুপরিচিত ও ভুক্তভোগী। দাম বৃদ্ধি নিয়ে হৈচৈ করলেও আমরা কিন্তু কম লোকজনই এর কারণ নিয়ে আলোচনা করি। আমার মতে মূল্য বৃদ্ধির পিছনে যে দুটি কারণ বেশি প্রভাব ফেলে সেগুলো হচ্ছে অস্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থা। আমার কেন যেন মনে বাজারের ওপর আমাদের কর্তাব্যক্তিদের যথাযথ নজরদারি নেই। নইলে যেই কাঁচামরিচ ৮০ টাকা কেজি দরে কিনলাম মাত্র একদিনের ব্যবধানে সেটা ২০০ টাকা কেজি হয় কীভাবে? হয়তো আপনারা বলতে পারেন কাঁচাবাজারের ক্ষেত্রে এমনটা হতেই পারে। তাহলে চলুন প্যাকেটজাত পণ্য নিয়ে আলোচনা করি। আজকাল বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, লবন এমনকি তেলও প্যাকেটে করে বিক্রি হচ্ছে, অনেকদিন ধরেই। আপনি চাইলেও এসব পণ্য আর খোলা কিনতে পারবেন না। অবশ্য বড় কোনও দোকান বা আড়তের কথা আলাদা। তো যে কোনও কারণে দাম বাড়লে রাতারাতি সেইসব প্যাকেটজাত দ্রব্যের দাম কীভাবে বাড়ে, এইটা আমার কাছেও একটা রহস্য বটে! কোম্পানি না বাড়ালেও দোকানদাররা প্যাকেটের গায়ে আলাদা করে দাম লিখে নেয়, নিজেদের ইচ্ছামতো। এছাড়া কোনও কোনও দোকানি আবার ডাটসে বলে-‘এখন দাম বাড়ছে, প্যাকেটের গায়ের চাইতে বেশি দাম দিতে হবে।’ আপনি বেশি মুলামুলি করলে তার সাফ জবাব-‘যা কইছি তাই দিতে হইবো, নিলে নেন, না নিলে না নেন।’

এবার নজর দেয়া যাক ব্যান্ডের পণ্যের দিকে। আমাদের দুধের মার্কেটে বলতে গেলে একচেটিয়ে ব্যবসা করছে আড়ং। একসময় এই বাজারটা দখলে ছিলো মিল্ক ভিটার। তখন তো মিল্কভিটা ছাড়া আর কোনও কোম্পানি প্যাকেট দুধ বিক্রিই করতো না। এখন তো প্রাণ, আফতাব, ফার্মফ্রেস ইত্যাদি আরও কিছু কোম্পানি এসেছে। কিন্তু একসময় আমরা মিল্কভিটার ওপরই নির্ভরশীল ছিলাম। বেশ কয়েকবছর আগে এই কোম্পানির দুধের ভেজাল নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে শীর্ষস্থানীয় কিছু পত্রিকা। তখন মিল্কভিটার ওপর ভোক্তদের আস্থা কমে যায়, এই সুযোগে তড়তড়িয়ে বাড়তে থাকে আড়ংয়ের চাহিদা। অনেকের মতো আমরাও মিল্ক ভিটা বাদ দিয়ে আড়ং কেনা শুরু করি। আমার এখনও মনে আছে আগে আমরা এক লিটার প্যাকেট দুধ কিনতাম ৩৫-৪০ টাকা দিয়ে। পরবর্তীতে দাম বাড়তে বাড়তে ৬০ টাকায় এসে দাঁড়ায়। অনেক দিন ধরে আমরা এই দরেই মিল্ক ভিটা বা আড়ং দুধ কিনেছি। পরে ১০ টাকা দাম বাড়িয়ে করা হয় ৭০ টাকা। বলাবাহুল্য মিল্ক ভিটা ও আড়ংয়ের তরল দুধ তখন একই রেটে বিক্রি হতো।

চলতি বছরের মাঝামাঝিতে এসে হঠাৎ করেই বাড়তে থাকে প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম। গত রোজার ঈদেও অর্থাৎ মে মাসের গোড়ার দিকেও আমরা মিল্ক ভিটা ও আড়ংয়ের এক লিটার তরল দুধের প্যাকেট কিনেছি ৭০ টাকায়। কিন্তু ঈদের পরপরই দেখি ১০ টাকা বাড়িয়ে সেগুলোর দাম রাখা হয়েছে ৮০ টাকা। এরপর মাত্র এক মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ জুলাই মাসে আড়ংয়ের এক লিটার তরল দুধের প্যাকেটর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ টাকা। যদিও মিল্ক ভিটা দাম বাড়ায়নি এখনও আগের দামেই অর্থাৎ ৮০ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে এই কোম্পানির এক লিটার দুধ। আমি জানিনা আড়ংয়ের দুধে কী এমন খাদ্যমান বা পুষ্টিগুণ বেশি আছে যাতে করে এই কোম্পানির দুধ আমাদের ১০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এটা পুষ্টিবিজ্ঞানী আর জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন।

এখানে আরেকটা মজার ব্যাপার-আপনি যদি আগোরা সুপার শপ থেকে এক লিটারের একটা আড়ং দুধের প্যাকেট কিনেন তাহলে আপনাকে দিতে হবে ৯৫ টাকা। আর আগোরায় তো এক টাকার জিনিস কিনলেও ভ্যট দিতে হয়, সেই হিসাবে ৯০ টাকার দুধের জন্য আপনাকে শোধ করতে হবে প্রায় ১০০ টাকা। আগোরায় আড়ংয়ের দুধের দাম বেশি রাখার মাজেজা কি, এক্ষেত্রে তাদের ব্যবসা পলিসিই বা কি- এটা কেবল ওই দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাই বলতে পারবেন। আমরা কেউ জানিনা। আমার জানামতে সাংবাদিকেরাও এ নিয়ে আগ্রহও দেখাননি। অন্তত আমার চোখে এরকম কোনও রিপোর্ট এখনও চোখে পড়েনি।

তবে আমি কিন্তু এখন আড়ং থেকে মিল্ক ভিটায় ফিরেছি। হয়তো ১০ টাকা কোনও বিষয় না-কিন্তু এটা আড়ংয়ের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ মাত্র। মাত্র দুই মাসের মধ্যে দুই দুইবার দাম বাড়ানোর বিষয়টি আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। আর আমার মতো ছাপোষা মানুষের যেহেতু আর কিছু করার নেই, এভাবেই না হয় অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করলাম।

আর একটা কথা আমি আগোরা থেকে আর যা-ই কিনি কখনও তরল দুধ কিনি না-কখনও কিনবোও না। এই সুপার শপ নিয়ে আরেক দিন লেখার ইচ্ছা আছে।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/