গর্ভাবস্থা ও প্রসবজনিত জটিলতায় প্রতি ২ মিনিটে মারা যায় একজন নারী

প্রতীকী ছবি

গত দুই দশকে মাতৃমৃত্যুর হার এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। তবে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন বলছে-গর্ভধারণ বা প্রসবজনিত জটিলতার কারণে  প্রতি দুই মিনিটে মারা যায় একজন নারী। ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) 'মাতৃমৃত্যুর প্রবণতা' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী স্বাস্থ্যের উদ্বেগজনক অবনতি ঘটেছে এবং পৃথিবীর সকল অঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়েছে বা অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জাতিসংঘের কিছু সংস্থার একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি ২০১৬ ও ২০২০ এর মধ্যে অনেকাংশে অপরিবর্তিত ছিল। কিছু অঞ্চলে পরিস্থিতি বিপরীত হয়েছে বা মৃত্যুহারও বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে সামগ্রিকভাবে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০০০ সালে প্রতি লাখে ৩৩৯ জন মাতৃমৃত্যু হয়েছে, যেখানে ২০২০ সালে ২২৩ জন মারা গিয়েছিল। অর্থাৎ, মৃত্যুহার কমে গেলেও ২০২০ সালে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ মাতৃমৃত্যু হয়েছে; অর্থাৎ প্রতি দুই মিনিটে একজনের মৃত্যু হয়।

মাতৃমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে বেলারুশে। আর মাতৃমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলায়। ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস জানিয়েছেন, যদিও গর্ভাবস্থা সমস্ত নারীদের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক ও ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হওয়া উচিত, দুর্ভাগ্যবশত এটি এখনও বিশ্বের লক্ষ লক্ষ নারীদের জন্য একটি দুঃখজনকভাবে বিপজ্জনক অভিজ্ঞতা।

নতুন এই পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিটি নারী ও মেয়ের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ যাতে তারা তাদের প্রজনন অধিকার পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের আটটি অঞ্চলের মধ্যে মাত্র দুইটিতে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ৩৫ শতাংশ এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় মাতৃমৃত্যুর হার ১৭ শতাংশ এবং ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। অন্যান্য অঞ্চলগুলি অপরিবর্তিত বা স্থবির রয়েছে। প্রতিবেদনের লেখক জেনি ক্রেসওয়েল সাংবাদিকদের জানান, দুইটি ইউরোপীয় দেশ গ্রীস ও সাইপ্রাসে মাতৃমৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলে এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি মাতৃমৃত্যু ঘটে। সাব-সাহারান আফ্রিকায় ২০২০ সালে সমস্ত মৃত্যুর ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের তুলনায় ১৩৬ গুণ বেশি মাতৃমৃত্যু বলে জানান জেনি।

আফগানিস্তান, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক, চাদ, কঙ্গো, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন- এই দেশগুলো মারাত্মক মানবিক সংকটের সম্মুখীন। এসব দেশে মাতৃমৃত্যুর হার বিশ্বব্যাপী গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি।

এই মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে গুরুতর রক্তপাত, সংক্রমণ, অনিরাপদ গর্ভপাত থেকে জটিলতা এবং এইচআইভি/এইডসের মতো সুপ্ত রোগ, যার বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য।

প্রতীকী ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নারীদের তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর খুব কম নিয়ন্ত্রণ থাকে। বিশেষ করে, তারা গর্ভধারণ করবে কিনা বা কখন, সে বিষয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যাতে তারা তাদের নিজের স্বাস্থ্যের জন্য পরিকল্পনা করতে পারেন এবং তাদের সন্তানদের বড় করার জন্য সময় নিতে পারেন।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের প্রধান নাতালিয়া কানেম বলেছেন, 'নারীদের মৃত্যু অযৌক্তিক। অবিলম্বে পরিবার পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করে এবং ৯ লাখ মিডওয়াইফের ঘাটতি পূরণ করে আমরা অবশ্যই ভালো করতে পারি।'

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আধিকারিক আংশু ব্যানার্জি মন্তব্য করেছেন, কোভিড মহামারী ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেই সময়ের পরে পরিসংখ্যান অস্পষ্ট।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/