শুভ জন্মদিন জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক

লেখক আনিসুল হক

আজ ৪ মার্চ, দেশের জনপ্রিয় লেখক ও নাট্যকার আনিসুল হকের জন্মদিন। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, রম্যরচনা, নাটকসহ সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তিনি কিন্তু উপন্যাসিক হিসাবেই বেশি জনপ্রিয়। তার পাঠকপ্রিয় মা উপন্যাসটি কয়েকটি বিদেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। পেশাজীবনে তিনি একজন সাংবাদিক। দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন।

আনিসুল হক  ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ রংপুর বিভাগের নীলফামারীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. মোফাজ্জল হক এবং মায়ের নাম মোসাম্মৎ আনোয়ারা বেগম। তার স্ত্রীর নাম মেরিনা ইয়াসমিন। তাদের একমাত্র কন্যার নাম পদ্য পারমিতা।

এই লেখক বরাবরই একজন মেধাবী ছাত্র হিসাবে বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি রংপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৮১ সালে এস.এস.সি. এবং রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৮৩ সালে এইচ.এস.সি. পাস করেন। এসএসসি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় তিনি ৩য় এবং এইচএসসিতে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৮ম স্থান লাভ করেন। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন।

শিক্ষাজীবনের মতো পেশাজীবনেও দক্ষতার ছাপ রেখে চলেছেন দেশের জনপ্রিয় এই লেখক। তিনি  ১৯৯৬ সালে বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে বাংলাদেশ সরকারের রেলওয়ে বিভাগে যোগদান করেন। অল্প কিছুদিন চাকরির পরই তা ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতায় চলে আসেন। তিনি ১৯৮৭ সালে সাপ্তাহিক দেশবন্ধু পত্রিকার সহসম্পাদক, ১৯৮৯ সালে সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক খবরের কাগজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত দৈনিক ভোরের কাগজের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দৈনিক প্রথম আলো’তে যোগ দেন এবং এখনও এই প্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।

সাংবাদিকতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখলেও তার মূল ঝোঁক লেখালেখিতে। লেখালেখিকে ভালোবাসেন বলেই উচ্চপদের সরকারি চাকরি ছেড়ে সাংবাদিকতায় নাম লেখান। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, রম্যরচনা সাহিত্যের নানা শাখায় সাফল্যের স্বাক্ষর রাখলেও ঔপন্যাসিক হিসাবেই তিনি বেশি জনপ্রিয়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম ঔপন্যাসিক হিসাবে প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলনের নাম উল্লেখ করা হতো। পরবর্তীতে হুমায়ুন আহমদের পরে আনিসুল হকের নাম ওঠে আসে। হুমায়ুন আহমদের মৃত্যুর পর বর্তমানে তিনিই দেশের সর্বাধিক পাঠকপ্রিয় লেখক হিসাবে স্বীকৃত। তার রচিত উপন্যাসের বীর প্রতীকের খোঁজে, নিধুয়া পাথার, আয়েশামঙ্গল, খেয়া, ফাঁদ, বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম, ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি, ফাল্গুন রাতের আঁধারে, আমার একটা দুঃখ আছে, ক্ষুধা এবং ভালোবাসার গল্প, হৃদিতা,  সেঁজুতি, তোমার জন্য, ৫১ বর্তী, আবার তোরা কিপ্টা হ,আলো-অন্ধকারে যাই,আমার একটা দু:খ আছে, আয়েশামঙ্গল, বারোটা বাজার আগে, বিক্ষোভের দিনগুলির প্রেম (২০১৫) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

তবে তার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত মা। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বইটি দিল্লী থেকে ইংরেজি ভাষায় এবং ভুবনেশ্বর থেকে ওড়িয়া ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশে হাতে গোণা যে কয়েকজন লেখক রম্য রচনা করে থাকেন তাদের মধ্যে আনিসুল হক অন্যতম। তার রচিত বিভিন্ন গল্প ও উপন্যাসে এর স্বাদ পাওয়া যায়। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘গদ্যকার্টুন’ নামে নিয়মিত ব্যঙ্গাত্মক রচনা লেখেন তিনি। এসব লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে কথাকার্টুন, গণতান্ত্রিক ফ্যান্টাসি‌‌, রাজা যায় রানি আসে, ছাগলতন্ত্র, অশ্বডিম্ব, সেই গাধা সেই পানি ,হাসতে হাসতে খুন উল্লেখযোগ্য।

আনিসুল হকের লেখালেখির শুরু কবিতা দিয়ে। শোনা যায় তিনি নাকি কবি হওয়ার জন্যই ক্যাডার জব ছেড়ে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তার বেশ কিছু তার কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যেগুলোর মধ্যে খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে (১৯৮৯), আমি আছি আমার অনলে (১৯৯১),  আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার (১৯৯৫), জলরংপদ্য (২০০২), তোমাকে ভাবনা করি উল্লেখযোগ্য।

গল্প, উপন্যাস ও রম্যরচনার পাশাপাশি নাট্যকার হিসাবেও সফল আনিসুল হক। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নাটকের মধ্যে নাল পিরান, করিমন বেওয়া, প্রত্যাবর্তন, সাঁকো, প্রতি চুনিয়া, চড়ুইভাতি, মেগা সিরিয়াল ৫১বর্তী উল্লেখযোগ্য।

চলচ্চিত্রের জন্য কাহিনী ও স্ক্রিপ্ট লিখিয়ে হিসাবেও তার সুনাম রয়েছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ব্যাচেলর এবং মেড ইন বাংলাদেশ সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন আনিসুল হক। পরবর্তীতে তিনি থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, টেলিভিশন সিনেমারও স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। বৃত্তের বাইরে ও স্বপ্নডানায় চলচ্চিত্রে কাহিনী বিন্যাসের কাজ করেন। এছাড়া তার অনেক জনপ্রিয় উপন্যাস নিয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।

লেখালেখির জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি নানা পুরস্কার পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে খুলনা রাইটার্স ক্লাব পদক, কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন পুরস্কার, সিটি ব্যাংক আনন্দ আলো সেরা বই পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী পদক এবং কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমী ( ২০১২ সালে)পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।

আনিসুল হকের টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্র দেশে-বিদেশে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। শ্রেষ্ঠ টিভি নাট্যকার হিসেবে টেনাশিনাস পদকসহ বেশ কয়েকটা পুরস্কার পেয়েছেন।  শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে তিনি এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন এয়ার্ডে চূড়ান্ত মনোনয়ন লাভ করেন।

২০১০ সালে তিনি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম (আইডব্লিউপি) কর্মশালায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখকদের সাথে যোগ দেন। তিনি ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩৭ জন লেখকের সঙ্গে আইডব্লিউপির কর্মশালায় যোগ দেন। ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৩০টি দেশের এক হাজার ২০০ লেখক অংশ নেন।

আজ এই বহুমাত্রিক লেখকের ৫৯তম জন্মদিনে ওমেন্স নিউজের পক্ষ থেকে তার প্রতি রইলো অশেষ শ্রদ্ধা ও অভিবাদন। শুভ জন্মদিন জনপ্রিয় কবি, লেখক ও নাট্যকার আনিসুল হক। আমরা আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/