মুভি রিভিউ: ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ মন ভালো করার মতো সিনেমা

আবু মোহাম্মদ মাছানী

অন্য ঘরানার গল্প-সিনেমা নিয়ে আমার যেমন ক্রেজ আছে তেমনি মুক্তিযুদ্ধের গল্পের সিনেমা নিয়ে আমার আগ্রহ আরও বেশি। যদিও কারো কারো ধারণা আমি বাংলা সিনেমা দেখিনা, আর দেখলেও রিভিউ থাকে বেশির ভাগ নেগেটিভ। ভালো না লাগলে তার রিভিউ পজিটিভ দিবো কীভাবে? কিন্তু আমি যত বাংলা সিনেমা দেখেছি এই জীবনে তার ১০ শতাংশ অনেকেই দেখে নাই। এটা আমার সমালোচক যারা তাদের জন্য শুধু।

তবে যে যাই বলুক এটা কিন্তু মানতেই হবে যে-বাংলাদেশের সিনেমা এখন আবার আগের প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এক সময় চলচ্চিত্র শিল্পের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে উত্তরণ ঘটেছে। গত কয়েক বছর যদি দেখি আমাদের বেশ কিছু সিনেমা ভালো ব্যবসা করেছে। মানুষ আবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখছে। হলের সংখ্যা বেড়েছে। প্রায় ডুবন্ত একটা শিল্প আবার সামনের দিকে  যাচ্ছে। ভালো ভালো নির্মাতা এসেছেন। তারা নতুন নতুন কন্টেন্ট নিয়ে ছবি নির্মাণ করছেন। সেই কারণে সিনেমা দেখার আগ্রহটা এখনও আগের মতোই রয়ে গেছে। আর সেই জন্যই ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ ছবিটার জন্য আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। সোমবার (২৮ আগস্ট) তাই সিনেমাটি দেখতে গেলাম। ভীষন ভালো লেগেছে।  হয়তো সেই অর্থে ছবিটা ক্ল্যাসিক না। কিন্তু আমার দেখা সাম্প্রতিককালের সেরা ছবি, সব দিক দিয়েই।

পরিবারে যেমন খুনসুটি, মনমালিন্য, মতবিরোধ থাকে তেমনি এই ছবিতেও  ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আতঙ্ক এই পরিবারেও ছিল। গল্পে আরো ছিল অস্তিত্ব রক্ষা, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসঘাতকতা। সিনেমাটি তৈরি করতে সবাই সীমাহীন পরিশ্রম করেছেন- যার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে গোটা চলচ্চিত্রটি জুড়েই। সেট ডিজাইন, বাড়ি, গাড়ি এবং লোকেশন দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক হৃদি হক। সিনেমাটোগ্রাফি মারাত্মক সুন্দর। ঝড়-বৃষ্টির রাতগুলো পর্দায় বেশ সুন্দরভাবে উঠে এসেছে৷ শুধু একটু দৃষ্টিকটু লেগেছে যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাকগুলো। সেটা আরেকটু জীর্ণ শীর্ণ হলে ভালো হতো। বেশি চকচকে লেগেছে। গানগুলো ছিল দারুণ। বিশেষ করে  'যাচ্ছ কোথায় ' আর ' ইয়ে শামে '।

সবার অভিনয় ছিল বেশ সাবলীল আর প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ফেরদৌস, প্রীতি, তারিন, হৃদি, লিটু আনাম আর সাজু খাদেমের। সাজু খাদেম কখনোই আমার পছন্দের অভিনেতার তালিকায় ছিলেন না। কিন্তু এই ছবিতে তিনি পুরস্কার পাওয়ার মতো কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আর দশটা সিনেমা থেকে এই সিনেমাটি অনেকটাই আলাদা আমার কাছে। শুভকামনা সিনেমাটির জন্য।

দেশমাতৃকার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বানানো হয়েছে হৃদি হকের  '১৯৭১-সেই সব দিন'। সেই সুবাদে আমি ছবিটি আজ হলে গিয়ে দেখলাম। আরো দেখলাম যে দর্শক আবেগে আপ্লুত হয়েছেন, কেঁদেছেন। আমার নিজেরও চোখে পানি চলে এসেছে। বিশেষ করে সজলের মৃত্যুর দৃশ্যে। যেভাবে তিনি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করলেন তা দেখে যে কেউই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়বেন। আর শেষ দৃশ্যটা তো অসাধারণ ছিল।

মুক্তিযুদ্ধ একটা স্পর্শকাতর বিষয়, আমাদের সবচেয়ে অহংকারের জায়গা এটা। এর জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, একটা দেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাগুলোকে আমাদের সবার সাপোর্ট করা দরকার। কেবল মুক্তিযুদ্ধের ছবি বলে নয়, এটা আসলেই একটা ভালো মুভি-মেকিং, অভিনয়, চিত্রায়ণ, গান, আবহসঙ্গীত, সিনেমাটোগ্রাফি-সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা ছবি।  

শুনেছি প্রথম সপ্তাহে এই ছবি দেখতে সিনেমা হলে উপচে পরা ভিড় ছিলো। বিভিন্ন মিডিয়ার রিপোর্টে তেমনটাই তো দেখলাম। কিন্তু আজ দ্বিতীয় সপ্তাহের তৃতীয় দিনে দর্শক উপস্থিতি আমাকে হতাশ করেছে। কেননা ছবিটি তো কোনও দিক দিয়েই খারাপ নয়-তার ওপর মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল নিয়ে বানানো। একটা দেশপ্রেমের ছবি সবাই দেখবেই এটা এদেশের নাগরিক হিসাবে আমার ধারণা ছিল। আমি মনে করি এ ধরনের সিনেমা দর্শকদের বেশি বেশি দেখা উচিত। কেননা এসব ছবি দর্শকপ্রিয়তা না পেলে পরবর্তীতে নির্মাতারা আর ভালো ছবি তৈরি করতে উৎসাহ পাবেন না। কেবল মুখে মুখে ভালো ছবির কথা বললে হবে না, আমরা যে সত্যিকার অর্থেই মানসম্পন্ন সিনেমা দেখতে আগ্রহী সেটা প্রমাণও করতে হবে। দল বেঁধে হলে গিয়ে-সিনেমাটি উপভোগ করে।

আবু মোহাম্মদ মাছানী

লেখক পরিচিতি: আবু মোহাম্মদ মাছানী একজন লেখক ও সাংবাদিক।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/