দুই বাংলার জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। জন্ম জুন ৭। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র বুকের ভিতর আগুন, পরিচালনায় ছিলেন বিখ্যাত পরিচালক ছটকু আহমেদ। ‘মিট্টি’ নামে বলিউডের একটি চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন। ১৯৯৮ সালে খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত `হঠাৎ বৃষ্টি' ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিং, টিভি উপস্থাপনাও করেছেন, এখনো বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে চলেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তার অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ মোট পাঁচ বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এগুলো হচ্ছে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’(১৯৯৮), ‘গঙ্গাযাত্রা’ (২০০৯), ‘কুসুম কুসুম প্রেম’ (২০১১), ‘এক কাপ চা’ (২০১৪) এবং ‘পুত্র’ ( ২০১৮) ।
ফেরদৌস অভিনীত সফল চলচ্চিত্রের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টি চুপি চুপি, প্রেমের জ্বালা, বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ , চন্দ্রকথা, ফুলের মত বউ, দুই নয়নের আলো, খায়রুন সুন্দরী, গোলাপী এখন বিলাতে, গেরিলা, এক কাপ চা, পুত্র অন্যতম। ফেরদৌস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন। চলচ্চিত্রে আসার আগে র্যাম্প মডেল হিসেবে কাজ করেছেন ফ্যাশন সেক্টরে। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের হাত ধরে র্যাম্পে তার হাতেখড়ি। তার চলচ্চিত্রে আগমন প্রয়াত নৃত্য পরিচালক আমির হোসেন বাবু'র হাত ধরে। তখন আমির হোসেন বাবু পরিচালক হিসেবে নাচভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র ' নাচ ময়ূরী নাচ' নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু আমির হোসেন বাবু সেই ছবির কাজ আর শুরু করতে পারেননি। প্রয়াত জননন্দিত অভিনেতা সালমান শাহের এর আকস্মিক মৃত্যুর কারণে তার অভিনীত অসমাপ্ত একটি ছবিতে কাজ করতে ফেরদৌস প্রথম ক্যামেরার সামনে আসেন ১৯৯৭ সালে ছটকু আহমেদ পরিচালিত বুকের ভিতর আগুন ছবির মাধ্যমে। সালমান শাহের মৃত্যুর পর ছটকু আহমেদ ছবির গল্পে কিছুটা পরিবর্তন করে ফেরদৌসকে কাজ করার সুযোগ দেন।
দেশের জনপ্রিয় ও সুদর্শন অভিনেতা ফেরদৌসের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হলো তার বনানী DOHS এর বাসভবনে। অভিনেতার ফিল্ম ক্যারিয়ার, রাজনৈতিক ইচ্ছেসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে এই আলাপচারিতায় । তিনি বললেন তার আগামী পরিকল্পনা, তার আফসোস, রাজনীতি আকাঙ্ক্ষা এবং একই সঙ্গে বর্তমান চলচ্চিত্র নিয়ে আশার কথাও। ওমেন্স নিউজের পাঠকদের জন্য এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক আবু মোহাম্মদ মাছানী।
শিল্পীরা পলিটিকস করলে ভক্তরা নারাজ হয়। কারণ তারা মনে করে শিল্পী নিজস্ব কোন দলের হতে পারেনা। তারা দেশের সম্পদ। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?
এটা একটা আর্গুমেন্ট এর ব্যাপার। দেশের সম্পদ বলেই তো দেশের জন্য কিছু করা দরকার। আসলে পলিটিকস শব্দটাকে আমরা নেগেটিভ হিসাবে দেখি। রাজনীতি করা অন্যায় কিছু না। একেক জনের একেক আদর্শ থাকবে। সারা দেশেই তো শিল্পী সমাজ থেকে শুরু করে সচেতন নাগরিক কোন না কোনো দলকে সাপোর্ট করে। ভালো কাজ করতে গেলে কারো না কারো সাপোর্ট বা মতের মিল লাগবেই। আমি অভিনয় করছি পর্দায় সেটা দর্শকদের ভালো লাগছে। সেটা হচ্ছে পর্দার সাথে সম্পর্ক আর আমি যখন মাঠে গিয়ে কাজ করছি সেটা করছি আপামর জনতার জন্য। তারা কি চায় সেটা জানার চেষ্টা করছি। দুইটা দুই ধরনের কাজ। আমার একটা আদর্শ আছে, একটা দলের কাজ আমার পছন্দ। তাদের হয়ে আমি মাঠে নামি। আর আমার নিজের ভালো লাগা আছে। সেই থেকে রাজনীতিতে আসা। জনকল্যাণমূলক বড় কিছু করতে গেলে অবশ্যই রাজনীতিতে আসার প্রয়োজন আছে। আমার ধারণা সে ক্ষেত্রে আমার দর্শকদের মানসিকতার বদল হবে।
নায়ক ফেরদৌসকে দলীয় কর্মীরা রাজনৈতিক নেতা হিসাবে কেনো মেনে নিবে? কারণ তার সেই অভিজ্ঞতা নেই যেটা একজন তৃণমূল পর্যায়ের নেতার থাকা উচিত?
উত্তর: আমি হয়তো সেই অর্থে তৃণমূল পর্যায় থেকে রাজনীতি করে আসিনি। কিন্তু আমার যে আন্তরিকতা ভালোবাসা, মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছে,স্পৃহা সেটা কিন্তু কারো চেয়ে কম না। আর আমি যেহেতু দীর্ঘ পঁচিশ বছর ফিল্মে কাজ করছি সেটা তো মানুষের কল্যাণেই। আমাদের অভিনয়টাও এক ধরনের আন্দোলন, একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব। যখন সচেতনমূলক ছবি করি সেখানেও তো একটা সামাজিক ম্যাসেজ থাকে। আর আমার মধ্যে মানুষের সাথে মিশার বা বন্ধু বানানোর প্রবণতা আছে সেই হিসাবে মনে হয় আমার যে ইমেজ, আন্তরিকতার জায়গা আছে সে ক্ষেত্রে মানুষের জন্য কিছু করতে পারব। সেই ভাবনা থেকেই আমার রাজনীতিতে আসা। এই ভাবেই আমি আমার গ্রহণযোগ্যতা গড়ে তুলতে পারবো আশা করি।
একজন মেধাবী অভিনেতা আপনি। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন কয়েকবার। অথচ জাতীয় পুরস্কার নিয়েও সমালোচনা আছে। অনেক সময় নকল ছবিও পুরস্কার পায়। যারা জুরি বোর্ডে থাকে তারা এই ব্যাপারটা কি দেখেনা? আপনার মন্তব্য…
কোনো কিছুই আসলে সমালোচনার উর্ধ্বে না। আপনি ভালো কিছু করলেই সমালোচনা হবে। এই যেমন এই দেশে এত উন্নয়ন দৃশ্যমান। তারপরও মানুষ সমালোচনা করছে। সুস্থ সমালোচনা করলে সেটা নিয়ে সমস্যা নেই। পুরস্কার নিয়ে যখন কেউ বলবে যে এই ছবিটা নকল অবশ্যই তা জুড়ি বোর্ড দেখবে, মূল্যায়ন করবে। আর আমার কাছে মনে হয় জুড়ি বোর্ডে যারা আছেন তারা যথেষ্ট সম্মানীয়। সেই জায়গা থেকে আমার কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়েনি। আর যারা এর শিকার, তারা তো সরাসরি এই অসঙ্গতি ধরিয়ে দিতে পারে। তাহলে জুড়ি বোর্ডও সচেতন হবে। তাদের প্রতি আমার যথেষ্ঠ আস্থা আছে। আর আরেকটি ব্যাপার আমাদের মধ্যে আছে যদি আমরা কোনো বছর পুরস্কার না পাই, তখন মনে করি নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা আছে। এই মানসিকতা থেকে বের হতে হবে সবার। এটা একটা দৈন্যতা। আমরা জন্মগত ভাবেই বায়াসড।
এখন মোবাইল থাকলে যেমন সাংবাদিক তেমনি TikTok একাউন্ট থাকলে সেলিব্রিটি। তাদের ভিউজও অনেক বেশি। কিভাবে দেখেন এটাকে?
এটার পজিটিভ, নেগেটিভ দুইটা সাইড আছে। তবে নেগেটিভটাকে আমরা বেশি ব্যাবহার করি। এটম বোমা যখন বানানো হয় তখন সেটার পজিটিভ ইমপ্যাক্ট ছিল। কিন্তু সেটা নেগেটিভ ভাবে ব্যাবহার করলে আমরা তা শ্রদ্ধার বা ভালো চোখে দেখি না। একই ঘটনা অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রেও। সেটা যদি মানুষ খুন করার জন্য হয় সেটা খারাপ ভাবেই দেখি। Tiktok বা সোসিয়াল মিডিয়া আমার কাছে তেমনি মনে হয়। আজকে এই মাধ্যম ব্যাবহার করে কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ সহজেই অসাধারন হয়ে যেতে পারছে। এটা থেকে মানুষ লাখ লাখ টাকা আয় করেছে। "দিস ইজ ভেরি পজিটিভ"। এর মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া অনেক সম্পর্কগুলো ফিরে আসছে। আবার এর মাধ্যমেই আপনি যে কাউকে সাবোটাজ করতে পারেন। কারো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে বাজে ভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন। সো, এটা নির্ভর করছে আমাদের মানসিকতার উপর। যেহেতু, সবার সমান অধিকার, সে ক্ষেত্রে আমি তো তাদের দাবিয়ে রাখতে পারবনা। এক্ষেত্রে প্রকৃত সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। এফডিসিতে এসব TikTok আর YouTube ব্যান্ড করা হয়েছে।
দর্শকরা একসময় অভিনেতা অভিনেত্রীদের আকাশের তারা মনে করতো আর এখন তাদের নিয়ে ট্রোল করে তার কারণ কি? এক্ষেত্রে কি শুধুই দর্শকরাই দায়ী?
উত্তর: এর জন্য সোসিয়াল মিডিয়াকে যারা সস্তা ভাবে ব্যবহার করছে তারা দায়ী। তারা ভিউজ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় শিল্পীদের এত ত্যক্ত বিরক্ত করে যে এক সময় হয়তো কোনো শিল্পীর মুখ দিয়ে বেফাঁস কিছু বের হয়ে যায়। সেটাকেই তারা ক্যাশ করে নেগেটিভ ভাবে প্রচার করে। আর তার আগে কি হয়েছিল, সেটা না জেনে, না বুঝে মানুষ ট্রল করা শুরু করে। সবার পার্সোনাল ব্যাপার পার্সোনাল জায়গায় রাখা উচিত। কলকাতায় সুচিত্রা সেন আজীবন তার জীবন প্রাইভেট রেখেছিলেন। তাকে কিন্তু কেউ ডিস্টার্ব করতোনা। পাপারাজ্জিরা কিন্তু সেখানে দিন রাত বসে থাকতো না। তো সেই স্বাধীনতাটা মানুষকে দেয়া উচিত। কিন্তু আজকাল সেই ক্ষেত্রটা নেই।
এখন তারকারা গায়ে পড়ে নিজেদের পার্সোনাল লাইফ পাবলিক করে হাসির খোরাক হচ্ছে। এমনকি তাদের বেডরুমের ঘটনা বাইরে আনছে। এটা কতটা শোভনীয়?
এটা শতভাগ অশোভনীয়। এই কাজটা যারা করে আমি তাদের তারকা বলতে রাজি না। এটা করে তারা নিজেরা হাস্যকর হচ্ছে আর আমাদের পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে নিচে নামিয়ে আনছে। আমার কাছে তারকা মানে আকাশে জ্বলজ্বল করবে। তারকাদের বুঝতে হবে তাদের কিসের সাথে তুলনা করা হয়। তার কাজ নিয়ে কথা হবে, আলোচনা হবে। ব্যাক্তি জীবনে টানাপোড়েন থাকবে। একজন মানুষের ডিভোর্স হতেই পারে। এতটুকুই থাক। কিন্তু তা নিয়ে কাদা ছুড়াছুড়ির দরকার নাই । সেটা যেনো বাইরে না যায়। আগে এসব হতনা। এখন এসব যারা করছে তারা নিজেদের দিন দিন হাস্যকর করে তুলছে। এসব তো সোসিয়াল মিডিয়া থেকে ইরেজ হচ্ছেনা। থেকেই যাচ্ছে আজীবন। এর প্রভাব পড়ছে তাদের পরিবার পরিজনের উপর। দিনের শেষে বুঝতে হবে তারাও মানুষ। সমাজে তাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। এটা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগত রাখতে চাই। আমার বাচ্চারাও তাদের ব্যক্তিগত জীবন প্রাইভেট রাখতে চায়। " আই লাইক ইট।"
আমাদের দেশের সিনেমা শিল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে এর প্রধান কারণ কি শুধুই সিনেমা হলের অভাব?
এটাতে আমি একমত না। মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে উত্তরণ ঘটেছে। গত কয়েক বছর যদি দেখি তাহলে বলবো আমাদের বেশ কিছু সিনেমা ভালো ব্যবসা করেছে। মানুষ আবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখছে। হলের সংখ্যা বেড়েছে। এখন দেখা যায় সিনেপ্লেক্সে একটা ছবি যদি হিট হয় সেখান থেকে প্রযোজক কোটি কোটি টাকা লাভ করছে। সো, ওই জায়গাটা আমরা পেরিয়ে এসেছি। আমাদের সিনেমাগুলো আবার মানুষকে হলমুখী করতে পেরেছে। সিনেমা হলের সংস্কার হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকার যে ভাবে আমাদের হল তৈরির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে তা প্রশংসনীয়। নানা ভাবে রাষ্ট্র আমাদের সহযোগিতা করছে। আর সেই সহযোগিতার হাত ধরে সবাই চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসছে। প্রায় ডুবন্ত একটা শিল্পকে আমরা আবার সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। ভালো ভালো নির্মাতা এসেছে। তারা নতুন নতুন কন্টেন্ট নিয়ে এসেছে। আসলে হয় কি, একটা ইন্ডাস্ট্রি যখন নিচের দিকে যায় তখন একটা কারণে যায় না। সার্বিক ভাবে যায়। সার্বিক ভাবে সমস্যা ছিল এই শিল্পের। শিল্পী, কলাকুশলী, পরিচালক, প্রযোজক সবার সমস্যা ছিল।
নায়ক ফেরদৌসের সঙ্গে সাংবাদিক আবু মোহাম্মদ মাছানী
যারা একসময় চলচ্চিত্র থেকে এত কিছু পেলো তারা আগে প্রযোজনায় ছিল, তারা এখন এই শিল্পে কেনো ইনভেস্ট করছে না?
প্রজন্মের পরিবর্তন হয়। এখন নতুন প্রজন্ম এসেছে। যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা এখন আর নেই। এর জন্য তো পরবর্তী প্রজন্মকে দায়িত্ব নিতে হবে। আলমগীর ভাই কয়েক বছর আগে একটা ছবি প্রযোজনা করেছেন। রাজ্জাক ভাই শেষ পর্যন্ত করে গেছেন। শাবানা আপা ফিল্ম ছেড়ে দিয়েছেন।, ববিতা আপা করছেন না। আমি এদের দোষ দিবনা। কারণ যে সময় দরকার ছিল তারা সে সময় যথেষ্ঠ ছবি প্রযোজনা করেছেন। শেষ পর্যন্ত চেষ্ঠা করেছেন। তারা পরে আর সেখানে খাপ খাওয়াতে পারেনি। আমাদের প্রজন্মের কিন্তু কম সংখক শিল্পী প্রযোজনায় এসেছে। এখানে আরেকটা ব্যাপার আছে এখানে আমরা যারা শিল্পী, সবাই কিন্তু এই ব্যবসাটা বেশি বুঝিনা। এটা আগে অনেক সহজ ছিল। এখন একটা চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়ার সময় বুঝা যায় কতটা বেগ পেতে হয়। এক সময় রাজ্জাক ভাই একটা ছবি প্রযোজনা করলে হল মালিকরা এসে অগ্রিম টাকা দিয়ে যেতো। এখন সেটা বদলেছে। আমি কয়েকটা প্রযোজনা করেছি। আরো ইচ্ছে আছে। মৌসুমী প্রযোজনা সংস্থা গুটিয়ে নিয়েছে। শাকিব একটা করেছে। আর নায়ক, নায়িকা সিনেমা বানালেই সেটা ভালো যাবে এই ধারণাটা বদলে গেছে। এখন ভালো ভালো কন্টেন্ট নিয়ে বিভিন্ন চ্যানেলের মালিক বা প্রযোজকরা এগিয়ে আসছে ছবি বানাতে। আসলে মিডিয়ার ভাষা বদলে গেছে।
পর পর আপনার তিনটা ছবি মুক্তি পেলো? দর্শক সাড়া কেমন?
বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। দেশমাতৃকার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ছবি দুটি বানানো হয়েছে। হল ভর্তি দর্শক ছবিগুলি দেখেছে। ' মাইক ' শিশুতোষ চলচ্চিত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চ এর ঐতিহাসিক ভাষণের উপর তৈরি করা হয়েছে এই ছবি। আমার অতিথি চরিত্র। শিশুরা দলে দলে হলে গিয়ে ছবিটি দেখছে। আমার মনে হয় এই সিনেমাটি প্রতিটি স্কুলে সারা বছর ধরে দেখানো উচিত। এটা একটা শিক্ষামূলক সিনেমা। বাচ্চারা সুন্দর অভিনয় করেছে।
আর হৃদি হকের '১৯৭১সেই সব দিন' মুক্তিযুদ্ধের ছবি। আমি হলে গিয়ে দেখেছি প্রত্যেকটা দর্শক ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়েছে, কেদেছে। মুক্তিযুদ্ধ একটা স্পর্শকাতর বিষয়,। আমাদের সবচেয়ে অহংকারের জায়গা মুক্তিযুদ্ধ। এর জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, একটা দেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাগুলোকে আমাদের সবার সাপোর্ট করা দরকার। তাছাড়া এটা একটা ভালো সিনেমা। 'গেরিলা' র পর আমার ধারণা এই ছবিতে বেশি সারা পেয়েছি আমি। আমি বোধ হয় সবচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধের ছবিতেও অভিনয় করেছি।
কলকাতায় কাজ কিছুদিন বিরতি ছিল। আবার করছেন। অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো? কয়টা প্রজেক্ট হাতে কলকাতাসহ ঢাকায়?
কলকাতায় একটা কাজ ফাইনাল করেছি। কলকাতার সাথে একটা গ্যাপ হয়েছে কয়েক বছরের। দেশে ব্যস্ত হয়ে গেছি। কলকাতায় একটা লম্বা সময় ধরে কাজ করেছি। এখন আর আগের মত ব্যস্ত থাকতে চাইনা। দুই, একটা ভালো কাজ করার ইচ্ছে। ভালো কাজের কথাও হচ্ছে। ঋতুপর্ণার সাথে দুটি কাজের কথা হয়েছে। ব্যাটে বলে মিললে করবো। কলকাতায় 'মীর জাফর চ্যাপ্টার ' নামে ছবির গল্পটা ভালো লেগেছে সেটা করবো। এখন শুধু ভালো লাগার চরিত্র পেলেই দুই জায়গায় কাজ করবো। বাচ্চারা বড়ো হয়ে গেছে। তাদের সময় দিচ্ছি। তাছাড়া মায়ের বয়স হয়ে গেছে। তাই এত ছুটাছুটি করছিনা। দেশেও কাজের পরিবেশ ফিরে এসেছে। এখানেই কাজ করতে স্বচ্ছন্দবোধ করছি বেশি। এখন আমার কি ভালো লাগে সেটার উপর ফোকাস করছি। যেমন হৃদির ছবিটা করলাম। ভীষন ভালো ছবি। 'মাইক' করে ভীষণ আনন্দ পেয়েছি। আরো কিছু ভালো কাজ শেষ করেছি। যেমন 'মানিকের লাল কাকড়া, 'দামপাড়া', 'আহারে জীবন', 'দখিন দুয়ার', 'হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’। এই ছবিগুলো মানুষ দেখবে।
আপনি আপনার সময়ের বাংলাদেশের প্রায় সব নায়িকাদের সাথে পর্দা ভাগ করেছেন এবং তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো। কিন্তু নায়কদের সাথে কেমন বন্ধুত্ব। চলচ্চিত্র জগতে আপনার ভালো বন্ধু কে?
শাকিল, রিয়াজ, শাকিব আমার ভালো বন্ধু। তাদের সাথে একসাথে কাজ করেছি। সব সময় যোগাযোগ আছে। এই প্রজন্মের ইমন, নিরব আর রোশানও আমার ভালো বন্ধু। সিনিয়রদের ভিতর আলমগীর ভাই ও কাঞ্চন ভাই আমার ভালো বন্ধু।
প্রযোজনা কি ছেড়ে দিলেন? নুজহাত ফিল্ম থেকে একসময় ছবি হতো এখন করছেন না কেন?
করছিতো! যেমন 'গাংচিল', ' ইচ্ছেমত', 'হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি' এগুলো নুজহাত ফিল্মের ছবি। নতুন প্রযোজনায় আপাতত যাচ্ছিনা। এই গুলো রিলিজ হলে নতুন ভাবনার দিকে যাবো।
ওটিটি এখন একটা জনপ্রিয় মাধ্যম। এখানে প্রচুর কাজ হচ্ছে। শোনা যায় এর কন্টেন্টগুলো অনেক সময় অ্যাডাল্ট থাকে। আপনার কি এই মাধ্যমে কাজ করার ইচ্ছে আছে?
আমি মনে করি সবাইকে সব অঙ্গনে কাজ করতে হবে তা নয়। আমি হয়তো সব মিডিয়ার জন্য প্রস্তুত না। আমার সে জায়গায় যাওয়ার দরকার নেই। শুরুতে আমার কাছে কাজের প্রস্তাব এসেছিল। আমারও আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। পরে এ সমস্ত কথা শুনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। যদি ভালো কন্টেন্ট পাই তখন ভেবে দেখবো। আর যেহেতু আমার জায়গা চলচ্চিত্র তাই সেখানেই নায়ক হিসেবে থাকতে চাই। আমার জায়গার বাইরে কাজ করতে কমফোর্ট না।
কার বেশি গ্রহণযোগ্যতা বেশি নেতা না অভিনেতার?
দুইজনের দুই জায়গাতে গ্রহণযোগ্যতা বেশি। নেতা মাঠে থেকে কাজ করে আর আর আমরা অভিনেতা পর্দায় কাজ করে দর্শকের মন জয় করে নেই। আর যেহেতু দুটির সমন্বয় আমার মধ্যে আছে। তাই অভিনেতার গ্রহণযোগ্যতা বেশি।
চলচিত্রের এমন কোনো ঘটনা আছে যেটা আপনি কখনো বলেননি কাউকে কিন্তু এখন বলতে চান?
ঋতুপর্ণ ঘোষের বিখ্যাত 'চোখের বালি' চলচ্চিত্রে সুযোগ পেয়েও সেটা করতে পারিনি। আমার কাছে 'বিহারী ' চরিত্রটি করার অফার এসেছিল। না করেছিলাম। তখন এতো ম্যাচুরড ছিলাম না। ফটোশুট, লুকসেট সব হয়েছিল। বাংলাদেশে তখন প্রচুর ব্যাস্ত। ঋতুপর্ণর সাথে এত ঘনিষ্ট থাকার পরও ছবিটা করতে পারলাম না এই আফসোস তো সারা জীবন থাকবে। এখন মনে হয় সিনেমাটা করতে পারলে আমার ভালো হতো।
ঢাকার চলচিত্রে নেপোটিজমের স্বীকার কি হয়েছেন কখনো?
ঢাকার ছবিতে সে অর্থে নেপটিজম নেই। আমার ছবিতে আমি একটি লোভনীয় চরিত্রে অভিনয় করতেই পারি । ভালো চরিত্রের প্রতি লোভ থাকবে সবার। সেটাতে অভিনয় করলে নেপোটিজম হবে কেনো?
ঋতুপর্ণ ঘোষের বিখ্যাত 'চোখের বালি' চলচ্চিত্রে বলিউড অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে বিহারি চরিত্রে কলকাতার অভিনেতা টোটো রায়চৌধুরী। এই বিহারি চরিত্রের জন্যই অফার পেয়েও এতে অভিনয় করতে পারেননি ফেরদৌস, যা নিয়ে এখনও আফসোস করেন তিনি।
আরও পড়তে পারেন-মুভি রিভিউ: ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ মন ভালো করার মতো সিনেমা
লেখক পরিচিতি: আবু মোহাম্মদ মাছানী একজন লেখক, সমালোচক ও সাংবাদিক।
ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/