হেমন্ত নিয়ে এলো শীতের আগমনী বার্তা

হাসানুজ্জামান হাসান

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। পালা বদল করে এক ঋতু যায় আরেকটি আসে। তবে এক ঋতু যাওয়ার আগেই হাজির হয় পরবর্তী ঋতু আসার আগমনী বার্তা।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বাংলা মাস কার্তিকের প্রথম দিন। চারদিকে কুয়াশার মৃদু আবরণ আর নতুন ধানের মিষ্টি গন্ধ জানান দিচ্ছে হেমন্তের উপস্থিতি। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস জুড়েই বাংলাদেশে হেমন্তের বিস্তৃতি। শরতের কাশফুল মাটিতে নুইয়ে পড়ার পরপরই বাংলার রূপবৈচিত্র্যে হাজির হয় হেমন্ত।

দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে ভৌগোলিক অবস্থান ও ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে ভোরে ও সন্ধ্যার পর পানির মতো আকাশ থেকে শীত পড়ছে। ইতিমধ্যে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। সকালের আকাশ অনেকটাই ঘোলাটে থাকে। শেষরাতের দিকে অথবা খুব সকালে হালকা ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। শেষরাতে একটা কিছু গায়ে না জড়িয়ে আরামে ঘুমানো যাচ্ছে না। ফসলের মাঠে উঁকি দিচ্ছে নতুন বীজের প্রস্ফূটিত চারা। তাতে শিশির বিন্দু ছড়িয়ে দিচ্ছে মৃদু শীতলতা

‘কোন পাহাড়ের ওপার থেকে আনলো ডেকে হেমন্তকে’ কবি সুফিয়া কামালের এই পংক্তির মতো হেমন্তকে স্বাগত জানায় এমন অনেক কবিতা আছে বাংলা সাহিত্যে। হেমন্তে ফোঁটা শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি, রাজ অশোক প্রভৃতি ফুলের সৌরভ বাঙ্গালির প্রাণে সঞ্চার করে নতুন আমেজ। ভোরের শিশির ভেজা ঘাসে ছড়িয়ে থাকা মুক্ত দানা আর ফসলের সোনালি সমুদ্র সবমিলিয়ে যেন পূর্ণতা পায় প্রকৃতি। হেমন্তের সকালে শিউলির সৌরভে বাঙালির প্রাণে আসে উৎসবের আমেজ। হেমন্তে সারাদিন ধরে হিম মাখানো হালকা হাওয়ায় ঝরঝর করে ঝরে পড়ে গাছের পাতা। প্রকৃতির বিচিত্র রঙে রঙিন হয়ে ওঠার বিদায় উৎসব যেন হেমন্ত।

এরই মধ্যে প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে হালকা উত্তুরে বাতাস। এই বাতাসের মৃদু কাঁপুনি একসময় তীব্র হয়ে জানান দিবে শীত এসেছে।
 
হেমন্তে কুয়াশা ভেদ করে লাল আভা বেয়ে পূর্ব আকাশে উঁকি দিতে খানিকটা বেগ পেতে হলেও মায়াবী আলোয় ভরে থাকা চারপাশে সজিবতা ফিরে মনে। দৃষ্টিসীমায় কুয়াশার প্রলেপ জমলেও সূর্যের আলো ফোটার আগেই আড়মোড়া ভেঙে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়েন গ্রামের মানুষজন। কনকনে বাতাস না বইলেও কুয়াশা ভেজা ঘ্রাণ জানান দেয় শীতের আগমনী। সবুজ ঘাসে, গাছের পাতায়, নতুন কুড়িতে কিংবা মাকড়সার জালে মুক্তর মালার মতো জমে শিশির।

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।ইতিমধ্যে তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। খুব শিগগিরই তাপমাত্রা আরও নিচে নামার পূর্বাভাস রয়েছে। প্রতিবছর শীতকালে প্রায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখা দেয় উত্তরের জেলাগুলোতে। ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড় জমতে দেখা যায়।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘টানা এক সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। মূলত পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল ধরা হলেও এ বছর আশ্বিন-কার্তিকের দিকেই শীতের আগমনী বার্তা। তাই শীতকাল আসা মাত্রই এ বছর শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।’

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/