মিষ্টি গন্ধ
ঘরের বাতাসে অদ্ভূত মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ঐ মিষ্টি গন্ধ অনুভব করতেই কেঁপে উঠলো পৃথার শরীর। পৃথা ভয় পেয়েছে ; পৃথা ভয় পেলেই এমন হয়! পৃথা ঐ মিষ্টি গন্ধের উৎস খুঁজতে চেষ্টা করলো কিন্তু বাড়ির আনাচ-কানাচ খুঁজেও কোথাও পেলো না। গন্ধের উৎস খুঁজে না পেলেও পৃথার অজান্তে আস্তে আস্তে ঐ গন্ধটা ঘরের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে যাচ্ছিলো । বাড়িময় গন্ধ ছড়িয়ে যাওয়াতে নিজের মন থেকে ভয় তাড়াতে চেষ্টা করলো পৃথা ; ওর মনে হলো বিজ্ঞান কল্পকাহিনী পড়ছিল বলেই হয়তো বা এমন গন্ধের অস্তীত্ব অনুভব করছে এবং ভয় পেয়েছে ; কিন্তু তা নয়! এই গন্ধের উৎস পাওয়া না গেলেও গন্ধটা সত্যিই আছে ; যা পৃথা বুঝতে পারছে না। নিজের মনের ভয় দূর করার জন্য গল্পের কথা ভাবছিল পৃথা ; ও বুঝতেই পারেনি কখন এই ভাবনার মধ্যে ঐ গন্ধ বাড়ির চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। পুরো বাড়িতে গন্ধের অস্তিত্ব টের পেয়ে পৃথার এবার খুব ভয় করছে। বাসায় কেউ নেই। বাবা-মা অফিসে। কাজের বুয়া আজ আসবে না। ওর স্কুল বন্ধ তাই একাই বাসায় রয়ে গেছে পৃথা।
পৃথা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী পড়তে খুব ভালোবাসে। বিশেষ করে জাফর ইকবাল স্যারের। জাফর ইকবাল স্যার তাঁর পছন্দের লেখক। যদিও এই বই পড়া নিয়ে মায়ের কাছে উঠতে বসতে বকা শুনতে হয় তবুও পড়ে। নিজের কাছে না থাকলে লাইব্রেরি থেকে কিংবা বন্ধুদের কাছ থেকে নিয়ে আসে আর পড়ার বইয়ের নিচে লুকিয়ে পড়ে। পৃথা জানে মায়ের কথা অমান্য করা ঠিক নয় তবুও নিজের মনকে বশে রাখতে পারে না ; বই দেখলেই পড়তে ইচ্ছা করে। তাই বই পড়ার আগে মনে মনে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়; বলে, মা ক্ষমা করো, তোমার এই অবাধ্য মেয়েকে ক্ষমা করো। পৃথা, ওর মাকে ডাকে, মাকে ডেকেও মন থেকে ভয় কাটাতে পারে না, তখন নিজের ভয় কাটাতে এঘর-ওঘর করে কিন্তু বুঝতে পারে ওর ভয় তো কাটছেই না বরং অষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরছে ওকে। বইয়ে মনোযোগ দিতে চেয়েও পারে না। খবরের কাগজ তো পড়তেই ইচ্ছা করে না। তবুও চোখের সামনে মেলে ধরে খবরের কাগজ ; নাহ্ কিছুতেই কিছু হচ্ছে না! চুপ করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে। কতোক্ষণ বসে ছিল এভাবে বলতে পারে না হঠাৎ রান্নাঘর থেকে থালাবাসনের ঝনঝন শব্দ ভেসে আসে; চমকে ওঠে পৃথা। কী হলো ? শব্দ হলো কেন ? বাসন-কোসন তো ঠিকঠাকই রেখে এসেছিল, তাহলে! চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারে ওর পা আটকে গেছে মেঝের সঙ্গে; চেষ্টা করেও পা তুলতে বা সরাতে পারছে না। মা-মা বলে চিৎকার করে মাকে ডাকে কিন্তু আসে না মা ; মা আসবে কীভাবে? মা তো অফিসে। ওর একটা মোবাইল আছে; ল্যাণ্ডফোনও আছে, মাকে মোবাইল করবে! এসময় ওর মা তো কাজে ব্যস্ত; মায়ের ব্যস্ততার মধ্যে মাকে বিরক্ত করা কি ঠিক হবে ; ঠিক হবে কি কাজের মনোযোগ নষ্ট করার ; না, না ঠিক হবে না। আজকে মায়ের মিটিং আছে জানে, বলেছিল মা; মা যদি মিটিং-এ থাকে তাহলে মায়ের অসুবিধা হবে। ওর মায়ের কানে ওর ডাক পৌঁছাবে না জানে তবুও বলে, মা-মা একবার এসো না মা। আমার ভয় করছে; খুব-খু-উ-ব ভয় করছে মা। ডোর-বেলের শব্দ হলো; মা কী এলো? একটা আশার আলো জ¦লে উঠলো পৃথার ভেতরে; একটু দাঁড়াও মা দরোজা খুলছি বলে চেয়ার থেকে উঠতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না!
অনেক চেষ্টর পরেও পৃথা উঠতে পারছে না, নড়তে পারছে না! কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। চুপচাপ বসে থাকে। বসে থাকলেও ওর মনে হয় একটা সুন্দর মিষ্টি গন্ধ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ওকে !
ওমেন্স নিউজ সাহিত্য/