মুসলমানদের নোবেল ‘মুস্তাফা প্রাইজ’ পেয়েছেন যারা

মুস্তাফা প্রাইজের মেডেল

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদান রাখার জন্য ইসলামি বিশ্বের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের জন্য ‘মুস্তাফা প্রাইজ’ প্রবর্তন করেছে ইরান। বিজ্ঞান বিষয়ক অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ম্যাগাজিন ‘সায়েন্স’ এই পুরস্কারকে ‘মুসলিমদের নোবেল’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এটি চালু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে এবং প্রতি দুই বছর পরপর দেয়া হচ্ছে এই পুরস্কার। বিজয়ীদের পাঁচ লাখ ডলার পুরস্কার দেয়া হয়, সঙ্গে আরও থাকে একটি মেডেল ও ডিপ্লোমা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মোট চারটি প্রধান শাখায় দেয়া হয় মুস্তফা প্রাইজ। যেমন- ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (তথ্য ও যোগাযোগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি), লাইফ এন্ড মেডিকেল সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (জীবন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি) ও ন্যানোসায়েন্স এবং ন্যানো টেকনোলজি  এবং অল  এরিয়াস অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি। এই ক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে ইউনেস্কোর প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, গণিত ও পরিসংখ্যান; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি; ইঞ্জিনিয়ারিং, উৎপাদন, ও নির্মাণ; কৃষি, বনজ, মৎস্য ও পশু চিকিৎসা; স্বাস্থ্য ও কল্যাণের মতো বিষয়। পাশাপাশি জ্ঞান আহরণ বিষয়ক বিজ্ঞান (cognitive science) এবং ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং শাখাটিও এই পুরস্কারের অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

প্রথম মুস্তফা পুরস্কার বিজয়ী দুই বিজ্ঞানী অধ্যাপক জ্যাকি ই-রু ইং ও অধ্যাপক ড. ওমর এম ইয়াগি

যারা পেয়েছেন এই পুরস্কার

গত পাঁচ বছরে মোট ১১ জনকে দেয়া হয়েছে মুস্তফা প্রাইজ।  ২০১৫ সালে প্রথমবার এই পুরস্কার পান দুই বিজ্ঞানী যার একজন ছিলেন নারী। সিঙ্গাপুরের নাগরিক এই নারী হচ্ছেন অধ্যাপক জ্যাকি ই-রু ইং। ন্যানোপ্রযুক্তিতে ব্যাপক অবদানের কারণে তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এর আগে ত্রিশ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণকারী এই বিজ্ঞানীকে ‘আধুনিক যুগের ১০০ প্রকৌশলী’ হিসাবে সম্মানিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিক প্রকৌশলীদের প্রতিষ্ঠান।

ওই বছর তার সঙ্গে ন্যানোপ্রযুক্তি শাখায় পুরস্কার পেয়েছেন জর্ডানের নাগরিক অধ্যাপক ওমর এম ইনান। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলিতে কাজ করছেন। তিনি একাধারে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স, আন্তর্জাতিক রেডিও সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, দ্য আমেরিকান ফিজিক্স সোসাইটি, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক একাডেমী, তাউ বিটা পাই, সিগমা চ্যান একাডেমি এবং টিউবিএর সদস্য। এছাড়া বিজ্ঞানে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি মোট তিনবার-১৯৮৩, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালে নাসার অ্যারোনটিক্স এবং স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পুরস্কার পেয়েছিলেন।

২০১৭ সালে মুস্তাফা প্রাইজ পেয়েছেন দুই কম্পিউটার বিজ্ঞানী তুর্কি বংশোদ্ভূত ফরাসি কম্পিউটার  বিজ্ঞানী সামি এরোল গেলানবে ও ইরানের অধ্যাপক এম. আমিন শোকরোল্লাহি।

১৯১৭ সালে মুস্তফা পুরস্কার বিজয়ী দুই বিজ্ঞানী তুরস্কের সামি এরোল গেলানবে (ডানে) ও ইরানের অধ্যাপক এম. আমিন শোকরোল্লাহি

প্রসঙ্গত, মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ছাড়াও অন্য কোনো দেশে বাস করা মুসলিম গবেষক ও বিজ্ঞানীরাও পেয়ে থাকেন এই পুরস্কার। একই সঙ্গে  মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম বিজ্ঞানীদেরও এই পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ ও তৃতীয় দফা মোস্তফা পুরস্কার প্রদানের আসর বসেছিল ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর, ইরানের রাজধানী তেহরানের বাহদাত হলে। এতে অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বের ৩০ টিরও বেশি মুসলিম দেশ এবং শতাধিক বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। এর আগে পুরস্কারের জন্য ২০২টি গবেষণা কেন্দ্র এবং৫২ টি দেশের ৫১২ জন বিজ্ঞানীকে প্রকল্প জমা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে মনোননয়ন দেয়া হয়েছিল ১৬৪৯ জন।  এদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত বিজীয়দের বেছে নিতে দিন রাত পরিশ্রম করেছেন ৩৫ টি দেশের ২০০ টি বিশ্ববিদ্যালয় ৫০০ জুরি সদস্য। সেবার মোট পাঁচজন তুর্কি ও ইরানি বিজ্ঞানীকে মোস্তফা পুরস্কার দেয়া হয়।

ওই বছর লাইফ এন্ড মেডিকেল সাইন্স এন্ড টেকনোলজি শাখায় যৌথভাবে পুরস্কার পেয়েছেন মোট দুইজন। এদের একজন জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কি বিজ্ঞানী ও বায়োনটেক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক উঘুর শাহিন। সেই সময় ক্যানসারের টিকা উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করার জন্য তাকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছিল।

এই শাখায় পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যজন ইরানি অধ্যাপক আলী খাদেমহোসেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক অধ্যাপক আলী খাদেম কাজ করেন বায়োঞ্জিনিয়ারিং, রেডিওলজি, রাসায়নিক এবং বায়োমোলিকুলার ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায়। বায়োমেডিকাল অ্যাপ্লিকেশনের  ন্যানো ও মাইক্রো ফেব্রিকেটেড হাইড্রোজেল নিয়ে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে এই পুরস্কার দেয়া।

এছাড়া অল  এরিয়াস অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি শাখায় যৌথভাবে পুরস্কার জিতেছেন আরও তিনজন বিজ্ঞানী। তারা হলেন-তুরস্কের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ও কোক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বিজ্ঞানী উমরান ইনান,  রায়য়ান ইনস্টিটিউটের ইরানি অধ্যাপক হোসেইন বাহারবন্দ এবং  তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুলআহাদ।

২০১৯য়ে মুস্তফা পুরস্কার বিজয়ী তিন বিজ্ঞানী অধ্যাপক ওমরান শাহিন, আলি খাদেমহোসেন ও হোসেইন বাহারবান্দ (বাম থেকে ডানে)

উইকিপিডিয়া অবলম্বনে মাহমুদা আকতার

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/