ভারতে বন্দি অবস্থায় আলোচিত মানবাধিকার কর্মী স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু

মানবাধিকার কর্মী স্ট্যান স্বামী

ভারতের মানবাধিকার আন্দোলনের অন্যতম আলোচিত মুখ ফাদার স্ট্যান স্বামী অনেক দিন ধরেই জামিনের জন্য আদালতে ধর্না দিচ্ছিলেন। সোমবার জরুরি ভিত্তিতে আদালতে তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন জানানোর কথা ছিল। কিন্তু বম্বে হাই কোর্টে সেই শুনানি শুরুর আগেই সব শেষ।

সোমবার (৫ জুলাই) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এলগার পরিষদ মামলায় অভিযুক্ত স্ট্যান স্বামী। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। মোদি সরকারের অধীন আর কোনও আদালতের পক্ষে তাকে আর জামিন দেয়া সম্ভব না। তবে তার মৃত্যুতে দেশে বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদি সরকার।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন স্ট্যান স্বামী। গত ২৮ মে আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে তার চিকিৎসা শুরু হয় মুম্বইয়ের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে গ্রেপ্তার হওয়া স্ট্যানের শারীরিক অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন তার পরিবার-পরিজন। তারা তার জামিনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। জেলে স্ট্যানের শরীর আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তারা। এরপরই তাকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। রোববার রাতে তার অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়। সোমবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টা নাগাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন স্বামী।

এলগার পরিষদ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন স্ট্যান স্বামীসহ একাধিক মানবাধিকার কর্মী। ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তার বিরুদ্ধে ভীমা কোরেগাঁওয়ে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ আনে। পাশাপাশি মাওবাদীদের হয়ে কাজ করা সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। এরপর ২০২০ সালে ৮ অক্টোবর এনআইএ গ্রেফতার করা হয় স্ট্যান স্বামীকে।

গত মাসে অসুস্থতার কারণে স্ট্যানের আইনজীবী জামিনের আরজি জানালে তার বিরোধিতা করে এনআইএ। স্ট্যানের শারীরিক পরিস্থিতি খারাপের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি বলেই দাবি করে তারা। কিন্তু পার্কিনসন-সহ একাধিক গুরুতর রোগে ভুগছিলেন তিনি। আর স্বাস্থ্যগত কারণেই  অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়েছিলেন। কিন্তু জামিনের পরিবর্তে গত ২৮ মে তাকে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেয় আদালত। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ফলে তার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রোববার রাতে (৪ জুলাই) তাকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। পরদিন তার অন্তর্বর্তী জামিনের শুনানির আগেই সব চাওয়া পাওয়ার উর্ধ্বে চলে যান স্ট্যান স্বামী।

এদিকে, তার মৃত্যুতে দেশে বিদেশে নতুন করে চাপে পড়েছে মোদি সরকার। স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুতে  দেশের বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা একযোগে কেন্দ্রীয় সরকারে সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে তার মৃত্যুতে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/