স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন বনাম নারীদের পিরিয়ড বাস্তবতা

রোমানা আক্তার শুদ্ধবালিকা

টিভিতে যখন স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখি তখন হা করে তাকিয়ে থেকে ভাবি, এমন ক্রাইসিস মোমেন্টেও মেয়েরা কত এগিয়ে!  বাস্কেটবল খেলে, দৌড়ে ফার্স্ট হয়, ক্লাশে যায়, বনে জঙ্গলে ফটোগ্রাফিসহ আরও কত কি যে করে তারা। এই সময়ে তো তাদের হারতেও মানা। ন্যাপকিন পরে ফিল্ডে নেমেছে, হারানোর সাধ্যি কার!

বিজ্ঞাপন শেষ টিভি বন্ধ করে খোশ গল্প করার জন্য বান্ধবীকে ফোন দিলে বলে, ‘ফোন রাখ, পেটে ব্যথা করছে, মাথা ঝিমঝিম করছে, ভাল্লাগেনা’-আরও নানা বায়না। কারণ একটাই, পিরিয়ড চলছে। এই অবস্থা কেবল একজনের না, দেশের অধিকাংশ নারীর অবস্থাই এমন। প্রতিমাসে পাঁচটা দিন কিসের ভেতর দিয়ে যে যায় তা কেবল এই নারীরাই জানেন। কত মেয়ে যে পেটের ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদে এমনকি অজ্ঞান হয়ে যায় সেই কষ্টের কথাও জানেন শুধু নারীরাই। এই ব্যথা যে কেমন ব্যথা তা কোনওদিন কাউকে অনুধাবন করানো সম্ভব না।

একজন দুই সন্তানের জননী একদিন পিরিয়ডকালীন তীব্র ব্যথায় বলেছিলেন, ‘কাচা মাংস পত পত করে কেটেছে আমার ডেলিভারির সময়, তখনও আমার এত কষ্ট হয়নি যত কষ্ট এই বা**র  সময় পাই।’ শুধু ব্যথায় বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকার সুযোগ পেলেও রক্ষা নেই, উঠে যেতে হয় ওয়াশরুমে, নিজেকে পরিষ্কার রাখার ব্যাপারো কম নয়।

ওদিকে কার্মজীবী নারীদের অবস্থা তো আরও খারাপ। বলতে গেলে মাসের ওই বিশেষ দিনগুলোতে অনেকটা বেহাল দশাতেই যেন পড়েন তারা। না পারেন কারো কাছে কইতে, না পারেন সইতে! খিটমিটে মেজাজে, পেটে ব্যথা নিয়ে করতে হয় রাজ্যের কাজ। এক পুলিশ আপুকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ওই সময় ট্রেনিং কেমন লেগেছিল?’ তিনি বললেন, ‘সিক নিয়েছে কয়েকবার, বাকি দিনগুলো টেনেটুনে পাড়ি দেয়া। ’আর আমার ক্রিকেটার বান্ধবী পিরিয়ড চলাকালীন দিনগুলোতে কেবল একবেলা প্রাকটিস করে। কেবল সে নয়, ঋতুবতী নারীদের প্রায় সবাই যে যার সাধ্যমত চেষ্টা করেন এই সময়টুকু নিজেকে আরামে রাখার।

স্যানিটারি ন্যাপকিন কেবল একটা ন্যাপকিন। এটা কোনও ব্যথানাশক নয়, এটা কোনও মেডিসিন নয়। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, এইসব ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন করা মডেলগুলো পিরিয়ড বহির্ভূত সময়েই আরামসে শুটিং করেছেন। তাই ওদের বিজ্ঞাপন দেখে আপনি আপনার প্রিয় মানুষটার প্রতি পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে কাজের চাপ বাড়িয়ে দেবেন না। বিশ্বাস করুন, আপনার সাথের এই মেয়েটি সুপার উইমেন। তাকে কোনকিছুই থামাতে পারেনা। মাসের এই পাঁচটি দিন থাকতে দেন তার নিজের মতো করে। ভুলে যান, ‘কি চাইলাম, আর কি পাইলাম’এই হিসেবগুলো। বাকি পঁচিশটা দিনতো আছেই, রাগ-দু:খ-অভিমানের হিসাব মেটানোর জন্য।

লেখক পরিচিতি: রোমানা আক্তার একজন সার্বক্ষণিক লেখক। শিক্ষাজীবনে অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করলেও ব্যক্তিজীবনে শিল্প ও সাহিত্য চর্চা করতে ভীষণ ভালোবাসেন, তাই তো ইউরোপের মাটিতে থেকেও বিভিন্ন মাধ্যমে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক গল্প, ভ্রমণকাহিনী ও উপন্যাস। লেখালেখির জগতে তার ভালোবেসে পাওয়া নাম ‘শুদ্ধবালিকা’তেই তিনি বেশি পরিচিত। তার মূল নামের সাথেও যোগ করে নিয়েছেন এই ভালোবাসা। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই -‘নিশ্বাসে বিষ’ ও ‘বিবেকের পোস্টমর্টেম’।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/