নারী স্বাধীনতা আটকে গেছে শাড়ি পরার স্টাইলে

মাহমুদা আকতার

মাহমুদা আকতার

আমাদের নারী স্বাধীনতার মানদণ্ড শেষ পর্যন্ত শাড়ি পরার কৌশলে এসে আটকে গেল। নারী কীভাবে শাড়ি পড়বে-আঁচল কি পুরো বুক ঢেকে দিবে- নাকি অনেকখানি বের করে রাখবে, সে কি ফুল হাতা ব্লাউজ পরবে-নাকি স্লিভলেস, পেটিকোটের ঝুল কোন পর্যন্ত থাকবে- এইসবই এ সময়ের আলোচ্য বিষয়। এই বিষয়গুলো নিয়ে কেউ কেউ তো মারাত্মক রকমের প্রতিবাদী হয়ে ওঠেছেন। তারা বিশেষ স্টাইলে শাড়ি পরে ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিতেও শুরু করেছে। অথচ এই শহরে এখনও বাসে উঠার জন্য প্রতিদিন রীতিমতো যুদ্ধ করছেন কত না কর্মজীবী নারী। চাকরিটা কাল থাকবে কিনা এই টেনশনে ঘুমোতে পারছেন না কত না পোশাক শ্রমিক নারী! এই শহরে ব্যাপকভাবে এখনও গড়ে উঠেনি ভালো মানের কোনও ডে কেয়ার সেন্টার। বলুন তো  কয়টা অফিসে আছে বাচ্চা রাখার সুব্যবস্থা? ফলে কোলের শিশুটিকে কার কাছে রেখে যাবেন সর্বক্ষণ সেই দুঃচিন্তায় জেরবার কর্মজীবী নারী। কেরিয়ার নিয়ে ভাবার সময় কোথায় তার? আর এজন্যই বাচ্চা দেখভালের জন্য বিশ্বস্ত কাউকে না পেয়ে শেষমেষ চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কত না মা। আর এদিকে আমরা নারীর স্বাধীনতার সীমা নির্ধারণ করতে ব্যস্ত আছি পোশাকের মাপকাঠিতে।

অথচ সেভাবে দেখতে গেলে স্বাধীনতা বিষয়টাই কিন্তু অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়। যা আপনার কাছে ভালো, তা আমার কাছে নয়-আপনি যাতে সুখী সেটাই আমার কাছে প্রচণ্ড রকমের বিরক্তিকর। সে চাকরি করবে না কেবল ঘরসংসার সামলাবে, শাড়ি পরবো না প্যান্ট শার্ট পরবো, বিয়ে করবো কি করবো না, বাচ্চা নিবে কি নিবে না-এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি নারীর থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। কেননা যার যার স্বাধীনতা তার তার। তাই আপনি বা আপনাদের জীবনধারণের মানদণ্ড দিয়ে আপনারা যখন আমাদের মাপতে আসেন তখন সেটা কেবলই অনধিকার চর্চা হয়, স্বাধীনতা হয় না।
আপনারা থাকেন না আপনাদের মতো করে কে নিষেধ করেছে। আপনারা এ দেশের নারী সমাজের হয়ে কথা বলতে আসেন ক্যান? সেটা তো আপনাদের মানায় না। কেননা এই দেশের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে প্রতিনিয়ত কতটা সংগ্রাম করছে কিশোরী মেয়েরা আপনারা সেটা জানেন না। নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে একজন কিশোরী যখন পুলিশের কাছে ছুটে যায় তখন তার মানসিক অবস্থা পরিমাপ করার ক্ষমতা কি আপনাদের আছে? ওই কিশোরীর জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে দেখুন তো- আপনি কি পারতেন এতটা সাহসী হতে যদি সেই বয়সে আপনার জীবনে এমনটা ঘটতো? এই দেশের সাধারণ নারীরা সংসারের প্রাত্যাহিত চাহিদা মিটাতে দিন-রাত অমানুষিক পরিশ্রম করে চলেছে, সন্তানদের মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে প্রতিনিয়ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে কত না মা! এইসব সাধারণ নারীদের নিয়ে ভাববার মতো সময় কি আপনাদের আছে? তাদের জীবনে খানিকটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনার মতো কোনও উদ্যোগ কি কখনও নিয়েছেন আপনারা?

হতে পারে আপনারা উচ্চশিক্ষিত, স্বনির্ভর, স্বাবলম্বী কিন্তু আপনারা ভীষণ রকমের মেকি আর স্বার্থপর। ফলে আপনারা যখন নারীদের পক্ষে কথা বলেন তখন সেগুলো হাস্যকর হয়ে যায়। তাই শুনে রাখুন- এই দেশে নারীদের নেতৃত্ব দেয়ার কোনও যোগ্যতা আপনাদের নাই।

মাহমুদা আকতার: লেখক, অনুবাদক ও সাংবাদিক। প্রকাশিত গ্রন্থ সাতটি।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/