‘অভিনয় আমাকে অনেক দিয়েছে, আর কী চাই!’

শবনমের একাল সেকাল

সোনালি যুগের জনপ্রিয় নায়িকা শবনম। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মিলিয়ে নায়িকা হিসাবেই অভিনয় করেছেন দেড় শতাধিক ছবিতে। ষাট ও সত্তরের দশকজুড়ে কত যুবকের চোখের ঘুম যে কেড়ে নিয়েছিলেন এই  লাস্যময়ী নায়িকা তার ইয়াত্তা নাই! কেবল ভোরের শিশিরের মতো সৌন্দয্যই নয়, তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন নিজের অভিনয় গুণেও।

শবনমের প্রকৃত নাম ঝর্ণা বসাক, যিনি ১৯৪০ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন ঢাকায়।তার চলচ্চিত্রে আগমন ষাটের দশকের একেবারে শুরুতে, ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি, ইরান-তুরান পার হয়ে আজ তোমার দেশে এসেছি’ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া এই গান শবনমের লিপে দর্শক হৃদয়ে ঝড় তুলেছিল। মূলত এ ছবিতেই তিনি শবনম নাম ধারণ করেন। শবনম নামের অর্থ হলো ফুলের মধ্যে বিন্দু বিন্দু শিশির ঝরে পড়া।

‘হারানো দিন’ মুক্তি পাওয়ার পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৬২ সালে উর্দু ‘চান্দা’ছবির মাধ্যমে তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পান শবমন। এ দুটি ছবিই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকা থেকে মুক্তি পেয়েছিল। চান্দা ছবিটিও দর্শক বিপুলভাবে গ্রহণ করলে অভিনেত্রী শবনমের শুরু হয় রূপালি পর্দায় শুধুই সাফল্যের সিঁড়িতে ওঠা। ৪০ বছরের বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনের একটা দীর্ঘ সময় তিনি পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সেখানকার দর্শকের কাছে এক মহানায়িকা শবনম। পাকিস্তানে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন সর্বোচ্চ ১২ বার নিগার অ্যাওয়ার্ড। ১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর শবনম বিয়ে করেন খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক রবীণ ঘোষকে। এরপর সপরিবারে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন ১৯৬৮ সাল থেকে।

অবশ্য আশির দশকে ঢাকাই চলচ্চিত্রে সক্রিয় হন এবং এখানকার দর্শকদের উপহার দেন শর্ত, সন্ধি, সহধর্মিণী, যোগাযোগ, আমার সংসার, চোর, জুলি ইত্যাদি সুপারহিট ছবি। ১৯৯৯ সালে সর্বশেষ কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।  ছবিটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং শবনম এ প্রজন্মের দর্শকদের কাছেও সমান জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। নব্বই দশকের শেষভাগ থেকেই ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন শবনম। ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রবীণ ঘোষের মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্র রনি ঘোষকে নিয়ে ঢাকার বারিধারার ডিওএইসএসে দিন কাটছে এই কিংবদন্তীর।

সম্প্রতি অভিনেত্রী শবনমের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাংবাদিক আনজুমান আরা শিল্পী। ঢাকার বারিধারার ডিওএইসএসে তার বাড়ির কলিং বেল টিপতেই মহানায়িকা শবনম নিজে দরজা খুলে সাদরে আমন্ত্রণ জানান শবনম। সুবিশাল ড্রইংরুম। চারিদিকে থরে থরে সাজানো রয়েছে তার বর্ণিল অভিনয় জীবনের নানা চিত্রকর্ম ও পুরস্কার। এই সাংবাদিকের সাথে মন খুলে কথা বলেন সোনালি সময়ের ঝড় তোলা নায়িকা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পাশপাশি নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কথা বলেন শবনম। এসময় তার কিছু চাপা ক্ষোভও গোপন থাকেনি।

নিজের অভিনয় জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট শবনম এই প্রতিনিধির কাছে বলেন, ‘আমার ভাগ্য ভালো যে, আমার অভিনীত প্রথম ও শেষ ছবি ছিল আমার ক্যারিয়ারের সেরা ছবি।’

তিনি জানান, নব্বই দশক পর্যন্ত পাকিস্তান আর বাংলাদেশ মিলিয়ে প্রায় ১৮৫টি ছবিতে অভিনয় করেন। তিনিই একমাত্র অভিনেত্রী যিনি কিনা পাকিস্তান চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা নিগার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মোট ১২ বার। এছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মিলিয়ে অসংখ্য নানা সম্মাননায় সমৃদ্ধ হয়েছে তার অর্জনের ঝুলি।

এ অভিনেত্রীকে এখন আর ক্যামেরার সামনে দেখা যায় না। সময় কীভাবে কাটে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বই পড়ি, গান শুনি। নিজের যত্ন নিই। নিয়মিত শরীর চর্চা করি। বয়স হয়েছে। নানা অসুখ-বিসুখ তো রয়েছে। বিশেষ করে পায়ের ব্যথা আমাকে ভীষণ ভোগায়। এজন্য ডাক্তারের নিয়মমতো আমাকে চলতে হয়। বাইরের প্রোগ্রামে এজন্য খুব কম যাওয়া হয়। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে কিংবা বসে থাকতে পারি না।’

তবে অভিমানী অভিনেত্রী জানান, তিনি মারা গেলে তার মরদেহ যেন এফডিসিতে নেওয়া না হয়। তার স্বামী, প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের মরদেহও নেয়া হয়নি একসময় ঢাকা চলচ্চিত্রের ‘কেন্দ্রস্থল’বলে পরিচিত এফডিসিতে। সে কথার জের ধরেই তিনি বলেন, ‘আমিও কাউকে আমার মরদেহ নিয়ে মায়াকান্না কাঁদার সুযোগ দেব না। আমি যেভাবে নিজের বাসায় চুপচাপ আছি সেভাবেই ভালো আছি। শান্তিতে আছি। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে চাই না। আমি শিল্পী। আমি আমার মতো আছি। খুব ভালো আছি। আমার পরিবার, শ্বশুরবাড়ি, আত্মীয়স্বজন নিয়ে ভালোই আছি। বাসায় থাকি। টেলিভিশন দেখি। গান শুনি। রান্না করি। ছেলে ঢাকায় এলে ওর জন্য রান্না করি। কখনও কখনও নিজের জন্য রান্না করি। জীবন তো চলেই যায়। নিজের পুরনো ছবিগুলো দেখি। রবিনের গান অনেক শুনি। আলাউদ্দীন আলী, খান আতাউর রহমানের গানও শুনি। স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি। কাউকে বিরক্ত করছি না। চলচ্চিত্রে আমাদের সময়কার সেই সোনালি দিনের কথা মনে করে এখন শুধু দুঃখ পাই আর নীরবে কাঁদি। এই কান্নার শেষ কখন হবে জানি না।’

ক্যারিয়ারে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশে অনেকের সঙ্গেই অভিনয় করেছেন। অনেকের সঙ্গেই তৈরি হয়েছিল বন্ধুত্ব। এখন তারা কেউ কোনো খবর নেন কিনা জানতে চাইলে শবনম বলেন, ‘সবাই কাজে ব্যস্ত থাকেন। আমিই বা কয়জনের খবর নিই।’

তবে সুচন্দা, ববিতা ও চম্পার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এই অভিনেত্রীর। তাদের সাথে প্রায়ই দেখা হয়, কথাও হয়। অন্য কোনো চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের সাথে তেমন দেখা সাক্ষাৎ হয় না। তবে দেখা হলে সবাই তার সাথে আপনজনের মতেই আচরণ করে বলেও জানান তিনি।

সিনেমায় বর্ণিল ক্যারিয়ার গড়লেও শবনম অভিনয়ে নেই দীর্ঘ সময়। তার অভিনীত শেষ ছবি কাজী হায়াত পরিচালিত ‘আম্মাজান’ মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে। তুমুল জনপ্রিয় এ ছবির মাধ্যমে ঢাকার এ প্রজন্মের দর্শকদের কাছেও সমান জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন   শবনম। তবে ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রের পর শবনমকে আর ক্যামেরার সামনে দেখা যায়নি। তার কথায়- ‘কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পাইনি বলেই অভিনয় থেকে দূরে সরেছি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে যে উচ্চাসন দিয়েছেন সেখানে বসে গতানুগতিক চরিত্রে তো আর অভিনয় করতে পারি না। মাঝখানের এ দীর্ঘ সময়ে অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়েছিলেন। কিন্তু গল্প পছন্দ না হওয়ায় কাজ করা হয়ে ওঠেনি।’ এমনটাই জানান অভিনেত্রী। মাঝখানে ‘খোদার পরে মা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষে তিনি জানতে পারেন ছবির গল্পটি মৌলিক নয়। তাই সরে দাঁড়ান।

শবনম-ওয়াহিদ মুরাদ এবং শবনম-নাদিম জুটি বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে পাকিস্তানে। পরবর্তীকালে পাকিস্তানে বসবাস করে পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। আর ঢাকাতে তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন রহমান ও নায়করাজ রাজ্জাকের বিপরীতে। শবনম ছিলেন তার সময়কার নারীদের কাছে স্টাইল আইকন। তিনি লাক্স সুন্দরী হিসেবে পাকিস্তানে লাক্সের শুভেচ্ছা দূতের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।

শবনমের বর্ণিল চলচ্চিত্র জীবনের কিছু খণ্ড অংশ (বাম থেকে ডানে ১. এ সময়ের শবনম ২. বানাসাস পুরস্কার নেয়ার মৃুহূর্ত ৩.নায়ক রহমানের সাথে ৪.নায়ক নাদিমের সাথে. ৫. সোনালি সময়ে শবনমের দুটি নয়নজুড়ানো স্থিরচিত্র

জীবনের আর কিছু চাওয়ার কিছু আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিনয় জীবনে অনেক পেয়েছি। তেমন কিছু চাওয়ার নেই। তবে যতদিন বাঁচি যেন সুস্থ থাকি এটাই প্রত্যাশা করি। তবে অভিনয়ের প্রতি এখনও আগ্রহ আছে। তিনি বলেন, অভিনয়ই তো আমার পেশা। শিখেছি তো অভিনয়। অভিনয় করার ইচ্ছা আছে। তবে অভিনয় করতে না পারলে কোনো কষ্ট থাকবে না।’

২০১৯ সালেবাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি (বানাসাস)’র পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছিলেন শবনম। এ সম্পর্কে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে শবনম বলেন, ‘পুরস্কার সব সময় ভালো লাগার ব্যাপার। শ্রোতাদের ভালোবাসার থেকে বড় পুরস্কার আমার কাছে আর কিছু নেই। খুব ভালো  লেগেছিলো বানাসাস থেকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেয়ে। প্রাপ্তিটা সব সময়ই ভীষণ আনন্দের। এই অনুভূতি, এই আনন্দ সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সত্যিই ভালো লাগছে। এই পুরস্কারের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসাও জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে সভাপতি নাসিমা সোমা ও সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা শিল্পী ওরা যখন আমাকে এ অ্যাওয়ার্ড দিতে চাইলো তখন আমি বিহবলিত হয়ে পড়ি। ওরা আমাকে সম্মানিত করেছে। বানাসাস’র কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’

চলচ্চিত্র বলতে শবনম বোঝেন এহতেশাম, মুস্তাফিজ, সুভাষ দত্ত, জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, রহমান, এ জব্বার খান, নাদিম, রহমান, সুচন্দা, কবরী, ববিতা, রাজ্জাক, আলমগীর মানে প্রথম দিকে যারা চলচ্চিত্রে এসেছিলেন তাদের নাম। এখন তো কেউ সিনিয়র অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের তেমন সম্মান করে না। তবে শবনম সিজেও এ সময়ের নায়ক নায়িকাদের খুব একটা যে চেনেন না, সেটি স্বীকার করলেন নির্ধিদ্বায়। তবে তিনি জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের প্রশংসা করে বলেন, ‘তাকে ছাড়া আর কারও নাম তো এখন আর শোনা যায় না।’

কথা প্রসঙ্গে দীর্ঘ দিনের সঙ্গী রবীণ ঘোষের কথা এসে যায়। শবনম এই প্রতিবেদকের কাছে আফসোস করে বলেন ‘বেঁচে থাকতে এবং মারা যাওয়ার পরেও তার কোনো মূল্যায়ন হলো না এ কথা ভাবতেই খুব দুঃখ লাগে। দীর্ঘদিন আগে একবার এফডিসির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, গাড়ি ঘুরিয়ে ভিতরে গোপনে ঢুকলাম। সাউন্ড রুমের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছি। এফডিসির বেহাল এই অবস্থা মানতে পারিনি। যে এফডিসি আমাদের এত কিছু দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, কত মানুষের রুটিরুজি এখান থেকে, সেই এফডিসির এই হাল সত্যিই কষ্টের।’  

তিনি আরও বলেন, ‘আম্মাজান’ ছবির শুটিংয়ের পর এফডিসি বা চলচ্চিত্রের কোনো অনুষ্ঠানে যাইনি। অনেক ব্যাপার আছে, প্রাণখুলে সেসব বলতে পারছি না। কখনও পারব না। আর বলে লাভও হবে না। আমার মুখ পুরোপুরি বন্ধ। একদিন শুনবেন, আমি মরে গেছি।’

এ সময়ের চলচ্চিত্রের দুর্দশার জন্য ভালো গল্প, পরিচালক, সঙ্গীত, অভিনয় সবকিছুর অভাবকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস যদি ভালো গল্পে অভিনয়ের সুযোগ মিলে তবে সেই চলচ্চিত্রও মাইলফলক হবে। তবে কষ্টের কথা হচ্ছে দিন দিন সিনেমা হলের সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। কী যে হবে আমাদের আগামী দিনের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির তা একমাত্র বিধাতাই জানেন।’

আবার ডাক পেলে অভিনয় করবেন কি এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘একজন শিল্পী মরার আগপর্যন্ত কাজ করতে চায়। যে মানেপ্রাণে আর্টিস্ট, সে অভিনয় ছাড়া বাঁচতে পারে না। যতই ১৫০-২০০ ছবিতে অভিনয় করি না কেন। অভিনয়ের ক্ষুধা থেকেই যায়। ঘরে বসে মরার চেয়ে কাজ করে মরা ভালো।’

প্রসঙ্গক্রমে এফডিস ‘র দলবাজি নিয়েও খানিকটা উষ্মা প্রকাশ করলেন। বলেন, ‘শুনেছি, এফডিসিতে এখন নাকি ১৭টি সংগঠনের কার্যালয় আছে। অথচ সিনেমার অবস্থা দেখুন। সিনেমার গল্প নিয়ে ভাবার সময় নেই। টেকনিক্যাল দিকে উন্নয়নের কোনো ভাবনা নেই। নিজেদের উন্নয়ন নিয়ে কেউ ভাবছে? সবাই শুধু সংগঠন নিয়ে ব্যস্ত। যে চলচ্চিত্রকে নিয়ে সংগঠন, সেই চলচ্চিত্র যদি না থাকে তাহলে এসব সংগঠনের কোনো প্রয়োজন আছে? এত সংগঠন থাকায় আজ চলচ্চিত্রের এই অবস্থা। এখনো আগের সময়ের সিনেমা নিয়েই আলোচনা হয়। তাহলে আমাদের কী উন্নতি হলো? আমি তো বলব, অবনতি হয়েছে। চলচ্চিত্রে আমাদের কত এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা কি হয়েছে? আমরা শুধু নিচেই নামছি। আগের মতো মেধাবী পরিচালক নেই, গল্প লেখক নেই, টেকনিশিয়ান নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন তো কেউ ক্যামেরা চালাতে পারলেই সিনেমা হয়ে গেছে মনে করেন। সিনেমা বানাতে হলে গল্প জানতে হবে, গল্প বুঝতে হবে, গান বুঝতে হবে, সম্পাদনা বুঝতে হবে আরও কত কি! এ সময়ের ছবির কথা বেশি দিন কেউ মনে রাখে না। গানগুলো মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারছে না। কারণ বেশির ভাগই মূল কাজ থেকে সরে গিয়ে অন্য কাজে বেশি মনোযোগী। অথচ যেটা আসল কাজ সেটা তারা মন দিয়ে করছে না। আগে সবাই কাজ করত। তাই অন্যের পেছনে লেগে থাকার জন্য সময় ছিল না। কাজকে ইবাদত মনে করত, তাই তো এসব কাজ কালের সাক্ষী হয়ে আছে।’

দর্শক হলে ফেরাতে হলে করণীয় কী মনে করেন? এ প্রশ্নের জবাবে শবনম বলেন, ‘বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা হল। আগে হলে গিয়ে ছবি দেখতো মানুষ। এখন এতোগুলো মাধ্যম এসেছে যে মানুষ হলে যেতে চায় না। তাদের হলে ফেরাতে দরকার নিত্য নতুনত্ব। আর এটার জন্য প্রথম স্টেপ হতে হবে একজন ভালো পরিচালক, সঙ্গে গল্প। পরিচালক ভালো হলে ছবি এমনিতেই ভালো হয়। ছবি ভালো হলেই দর্শক হলে যাবে। আর শিল্পীরা কাঁদার মতো। পরিচালক যেভাবে গড়বেন শিল্পী সেভাবেই নিজেকে মেলে ধরতে পারে। এজন্যই বলা হয় ‘ফিল্ম ইজ অলয়েজ ডিরেক্টোরিয়াল মিডিয়া’।

জীবনে কোনো অপূর্ণতা অনুভব করেন? উত্তরে শবনম বলেন, ‘জীবনে প্রায় সবই পেয়েছি। কোনো অপূর্ণতা নেই। আজও রাস্তায় কেউ দেখলে সমাদর করেন। আমি চলে গেলে মানুষ আমাকে হয়তো মনে রাখবে এমন কিছু কাজ করেছি। সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন সুস্থ থাকি।’

আমাদের প্রতিবেদক আনজুম আরা শিল্পীর সাথে শবনম

করোনাকালের সময় কেমন কাটছে? এর জবাবে শবনম বলেন, ‘সারাদিন ঘরেই কাটাচ্ছি। নিয়মিত ব্যায়াম করি। ধর্মকর্ম করি। খুবই খারাপ লাগছে। এ রকম দিন তো কখনো দেখিনি দেখতে হবে তাও ভাবিনি। করোনার শুরুর দিকের পরিস্থিতি নিয়ে খুব কষ্ট পেতাম। এখন অবশ্য সয়ে গেছে।’

সবশেষে আবার অতীতে ফিরে যান সোনালি সময়ের এই নায়িকা। অহঙ্কারের সঙ্গে বলেন, ‘৫০ বছরেরও বেশি সময় আমি সিনেমায় কাজ করেছি। ১৯৫৮ সালে প্রথম সিনেমায় কাজ শুরু করি। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানে যাই। এরপর আবার দেশে এসে কাজ করেছি। অগণিত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এসবই আমাকে তৃপ্তি দেয়। অভিনয় আমাকে অনেক দিয়েছে। আর কী চাই!’

কিংবদন্তি অভিনেত্রীর এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সাংবাদিক আনজুমান আরা শিল্পী

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/