ইউসুফ শরীফের গল্প ‘স্বপ্নেরা’

ইউসুফ শরীফ

স্বপ্নেরা

-এ্যাই-আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-চল না-
ফিয়া মাসুদের পিঠে বুকের ভার রেখে ওর ঘাড়ে থুতুনি ঠেকায়।
মাসুদ ঘাড় বাঁকিয়ে হৈ চৈ করে ওঠে, এ্যাই ফিয়া থুতুনি সরাও-সরাও আমার কাতুকুতু লাগছে-এ্যাকসিডেন্ট করে ফেলব-
ফিয়া উদাস কন্ঠে বলল, এ্যাকসিডেন্ট করবে? কর না-
মাসুদ অস্থির হয়ে ওঠে, এ্যাই থুতুনি সরাও বলছি-
ফিয়া নির্লিপ্ত, না- সরাব না-
মাসুদ অসহিষ্ণু, আহা-তুমি বুঝতে পারছ না- এভাবে চলা খুব রিস্কি-  
ফিয়া অটল, মোটেই না।
মাসুদ বিরক্ত, এ্যাই- তাহলে যাব না কিন্তু-
ফিয়া ঠাণ্ডা গলায় বলল, তাহলে থুতুনি দিয়ে তোমার ত্যাড়া ঘাড় ফেঁড়ে ফেলব।
মাসুদ উত্তেজিত, তবে রে-
ফিয়া কলকলিয়ে হেসে ওঠে। মাসুদের কণ্ঠেও সংক্রমিত হয় সেই হাসি। থুতুনি সরিয়ে নেয় ফিয়া-মাসুদ স্বস্তি পায়। কিন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই অস্বস্তি বাড়ে ফিয়ার-ওরা শ্যামলী-কল্যাণপুর-মীরপুর এক নম্বরে মাজার রোডের মোড় ছাড়িয়ে গাবতলী বাস টার্মিনাল পার হচ্ছে।
ফিয়া আবার জিজ্ঞেস করল, এ্যাই- আমরা যাচ্ছিটা কোথায়?
মাসুদের জবাব নিরাসক্ত, গেলেই ত দেখবে।
একটানে ওরা বাস টার্মিনাল পার হয়ে ব্রীজের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ফিয়া শুরুতে ভেবেছিল চিড়িয়াখানা কিংবা নতুন গড়েওঠা বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাবে।  এখন সে ক্ষণে আতংকিত- ক্ষণে নিশ্চুপ মাসুদের বুদ্ধি বিবেচনার ওপর আস্থা আছে তার।
ব্রীজ পার হয়ে তারা আমিন বাজারে এসে পড়ল। ডানদিকে সব বিকল মেরামতরত বাস-ট্রাক ঘাপটি মেরে রয়েছে। রাগী-খ্যাপা-বিদঘুটে-অপরিচ্ছন্ন মানুষজন- কেউ কাজ করছে- কেউ রাস্তার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বসে আছে। তার মনে হচ্ছে-লোকগুলোর দৃষ্টিতে কোন ভদ্রতা-সৌজন্যের ছোঁয়া নেই। ভাবা মাত্র আশংকার সাথে আতংক এসে যুক্ত হয় তার চেতনায়।
সে মাসুদের কানের কাছে মুখ এনে চিৎকার করে ওঠে, এ্যাই- তুমি বলছ না কেন- আমরা যাচ্ছিটা কোথায়?
ওরা তখন আমিন বাজার পার হয়ে দু’পাশে গ্রামীণ নিসর্গের মাঝ বরাবর এগাচ্ছে। মাসুদের নতুন কেনা কাওয়াসাকি ফাঁকা রাস্তায় উদ্দাম হয়ে উঠছে। ফিয়ার উৎকন্ঠিত কন্ঠস্বর তীব্র বাতাসে উড়ে যাচ্ছে- মাসুদ মোটেই টলছে না। নিঃশব্দে টানছে বাইক আর মনে মনে ভাবছে-হায়রে নারীর মন! প্রতি মুহূর্তে উৎকণ্ঠায় বিদ্ধগ্ধ-সন্দিগ্ধ-সন্ত্রস্ত।
ফিয়ার ভীতি-সিক্ত কণ্ঠস্বর, মাসুদ আমি নেমে যাব- তুমি থাম-
ওরা তখন উন্মুক্ত প্রান্তরে-কোথাও কেউ নেই-এরকম। মাসুদ এবার সত্যি  সাইড করে ব্রেক কষে। বাইক থেমে যায় একটা কালি কড়ুই গাছের তলায়। তাকায় ফিয়ার দিকে। তার চোখে বিরক্তি।
তারপর বলল, কী নামবে! যাও- নেমে যাও।
ফিয়া নিশ্চুপ-অনেকটা স্তব্ধ। সে ধরেই নিয়েছিল কাওয়াসাকির স্পীডোমিটার আর নিচে নামবে না-মাসুদও আর থামবে না।
মাসুদ বেশ গম্ভীর হয়ে বলে ওঠল, তুমিই না কতদিন বলেছ-‘তোমার সাথে দোযখে যেতেও আমার আপত্তি নেই’-এই তার নমুনা!
মাসুদ থেমে যায়- ফিয়াও একদম চুপ। তার হিব্বল দৃষ্টির আড়ালে কী টলমল করছে কান্না! সেদিকে তাকিয়ে মাসুদের বিরক্তি অনেকটাই উবে যায়- জেগে ওঠে সহানুভূতি।
কণ্ঠ নরম করে বলল, আশ্চর্য! কতদিন বলেছ-চল নাগো এমন কোথাও যাই-কোন নিরিবিলি জায়গায়-যেখানে আমরা নিশ্চিন্তে নিরাপদে ভবিষ্যতের কথা-আমাদের স্বপ্নের কথা বলতে পারব। আর কেউ শুনবে না-আর কেউ থাকবে না-শুধু তুমি আর আমিÑ ছুঁয়েছেনে দেখব আমাদের সঞ্চিত-সংকুচিত স্বপ্নটুকু! কি বলনি?
ফিয়া মৃদুস্বরে বলল, বলেছি তো…
মাসুদ বলল, তাহলে…
ফিয়া কিছুটা সাহস পায়, কিন্তু যাচিছ কোথায়-তা বলছ না তো?
একটা ট্রাক ওদের পার হয়ে গেল এক মেঘ ধূলা উড়িয়ে। ফিয়া ওড়না চেপে ধরল নাকে-মুখে। রুমাল বের করার ফুরসৎ পেল না মাসুদ। হাতে চাপা দিল। মিনিট পাঁচেক লাগল ধূলার মেঘটুকু মিলিয়ে যেতে। মাসুদ এবার রুমাল বের করে মুখ-হাত ঝেড়ে আড়চোখে তাকায় ফিয়ার দিকে। ফিয়াও উড়নার আঁচল দিয়ে ময়লা ঝাড়ছে।
মাসুদ গম্ভীর হয়ে বলল, চল- ফিরে যাই তাহলে। নগরীর একঘেঁয়ে কোলাহলেই চাপা থাকুক আমাদের স্বপ্ন-আমাদের ভবিষ্যৎ!
ফিয়া চমকে ওঠে। চোখে মুখে ভাবান্তর সৃষ্টি হয়। কিন্তু নিশ্চুপ। মাসুদ তাকায় না তার দিকে। স্টার্টারে পা রাখে। স্টার্ট দেয়।
ফিয়া এবার মরিয়া হয়ে উঠল, না-
মাসুদ নির্বিকার। ফিয়ার কন্ঠে মিনতি, প্লীজ- মাফ করে দাও আমাকে। আমি না হঠাৎ খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সকালে খবরের কাগজ পড়ার পর থেকেই মনটা খারপ হয়ে আছে তাই-প্লীজ মাসুদ-
মাসুদ ফিরে তাকায়-চোখ রাখে ফিয়ার চোখে। তারপর হেসে ওঠে প্রান্তর কাঁপিয়ে। হেসে ওঠে  ফিয়াও। অশ্রুভরা চোখে এ হাসি মাসুদের মনে হয়- অপূর্ব। ঘোর বৃষ্টিভরা মেঘের পর এক ঝলক আলো যেন সতেজ ও ঝরঝরে করে তোলে দু’জনকেই। আবার ছুটে চলে সামনে। হাওয়ায় উড়ে ফিয়ার দীর্ঘ খোলা চুল আর হালকা বেগুনি রঙ উড়না। ব্যাংক কলোনী ছাড়িয়ে কিছুটা পথ পার হয়ে বামদিকে মেঠো পথে নেমে আসে তারা।
আঁকাবাঁকা রাস্তায় চলতে চলতে সোঁদা মাটির গন্ধ পাচ্ছে ফিয়া। অনেক দূরে দূরে ছোট ছোট দুয়েকটা গ্রামীণ ঘরবাড়ি গাছপালায় ছাওয়া-বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে সবুজাভ পতিত জমি। মাঝেমধ্যেই ছোট ছোট টিলার চরাই-উৎরাই ছাড়িয়ে কোথাও আবার ঝিলিক মারছে ঝিনুকের মত টুকরো টুকরো জলাভূমি। মন ভাল করে-দেয়া শ্যামল প্রকৃতি। ফিয়া অবাক হয়ে দেখছে-নগর ঢাকার কুনুইয়ের তলায় এত সুন্দর একটা জায়গা!  
মেঠোপথটা যেখানটায় মিলিয়ে গেছে সেইখানে দু’টা কাঁঠাল গাছ-একটা আরেকটার গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে-ঠিক তার পাশে থামে মাসুদ। সামনে বিশাল অসমতল প্রান্তর-মাঝেমধ্যেই সবুজ ঘাসে ছাওয়া টিলা-টালি এড়িয়ে সবুজ পাড়ে সাদা শাড়ির মত ছোট্ট একটা খাল এঁকে বেঁকে বয়ে গেছে। শ’তিনেক গজ দূরে খালের পাড় ঘেঁষে ক্ষেতে কাজ করছিলেন একজন কৃষক-এই মাত্র উঠে চলে যাচ্ছেন। আশেপাশে আর কোন লোকজন নজরে পড়ছে না।
বৈশাখের ঝিমমারা বিকেল। উন্মুক্ত প্রায় নিঃসঙ্গ বিশাল প্রান্তর-ছোট ছোট মাটির টিলা ডানে-বাঁয়ে রেখে বয়ে-চলা খাল-এর চেয়ে উন্মুক্ত প্রকৃতি আর  কোথায় থাকতে পারে? ফিয়ার মনে হচ্ছে-এমন সংগোপন এই পরিবেশ-গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ভালবাসার কথা বললে-স্বপ্নের কথা বললে-ভবিষ্যতের কথা বললে-কেউ শুনবে না!
বাইক লক করে ফিয়ার চোখমুখের উচ্ছ্বসিত ভাব লক্ষ্য করল মাসুদ-তারপর জানতে চাইল, কি পছন্দ হয়েছে জায়গাটা?
ফিয়া কাঁঠাল গাছটা এক চক্কর ঘুরে এসে বলল, ওহ্ বিউটিফুল! ঢাকার এত কাছে এরকম খোলামেলা নির্জন এক চিমটি সুইজারল্যান্ড থাকতে পারে- ওহ্ এটা আমি ভাবিইনি।
মাসুদ কাঁঠাল গাছটার গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে বসে বলল, এই চমৎকার জায়গাটা আমরা বেছে নিয়েছি। সব কিছু যদি ভালোয় ভালোয় যায় তাহলে এখানে একটা পল্লী গড়ে উঠবে-যার তুলনা এদেশে শুধু নয়-প্রাচ্যের কম দেশেই তুমি খুঁজে  পাবে-
মাসুদের চোখে ভিড় করে আসে ঘন সবুজ সেই স্বপ্নেরা-মুহূর্তেই তার চোখের সামনে সজীব হয়ে ওঠে। সে পরিষ্কার দেখতে পায় সব কিছু-যেন হাত বাড়ালেই স্পর্শ করা যাবে। সে স্বপ্নমগ্ন দৃশ্যাবলী সামনে নিয়ে এক এক করে তার বর্ণনা দিয়ে যায় ফিয়ার কাছে :
এইখানে প্রাকৃতিক অবস্থান বিঘ্নিত না করে গড়ে উঠবে একটা চমৎকার পল্লী। মাঝখানে ওই যে সবচেয়ে উঁচু টিলাটা দেখছ-ওইটি হবে এই পল্লীর সিভিক সেন্টার। ওখানে থাকবে-ক্লাব-টেলিফোন এক্সচেঞ্জ-হাসপাতাল আর থাকবে-স্কুল-কোঅপারেটিভ স্টোর-মসজিদ। ওই যে টিলাগুলো দেখছ- ওসবের পাদদেশ স্পর্শ করে বাঁকে-বাঁকে প্রবাহিত একটি লেক যুক্ত হবে দূরের ওই খালের সাথে।
ভূ-গঠন বিঘ্নিত না করে গোটা এলাকা জুড়ে থাকবে একশ’একটা বাড়ি। সব বাড়ি হবে একই ডিজাইনে এবং দেড় তলা-প্রতিটা বাড়ির ফ্লোর এরিয়া হবে দু’হাজার বর্গফুট। বাড়ির সামনে থাকবে ফলের বাগান-তারপর রাস্তা-রাস্তার পর এলিয়ে-ছড়িয়ে বয়ে যাবে একটা লেক। বাড়ির পেছনে থাকবে সব্জি-বাগান-সব্জি-বাগানের চাষ হবে কেন্দ্রীয়ভাবে-থাকবে একটা পোল্ট্রি-হাউস-গোটা দশেক গাভী নিয়ে আর লেকে চাষ করা হবে মাছের। এ পল্লীর বাসিন্দারা প্রতিদিনই ভোরে দোর গোড়ায় পেয়ে যাবে খাঁটি গরুর দুধ-তাজা শাক-সব্জি আর মাছ। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পর প্রয়োজন মাফিক সব জিনিসের পরিমাণ জানিয়ে দিয়ে আসতে হবে অফিসে।
পল্লীর মহিলাদের নিয়ে গড়ে তোলা হবে কুটির শিল্প-তার উৎপাদিত পণ্য রফতানি হবে বাইরে। এ পল্লীর প্রতিটি মানুষকে ভোরে গোটা পল্লীর প্রতিটি রাস্তায় একবার চক্কর দিয়ে হাজির হতে হবে ক্লাবে-ওখানে ফ্রি আখের গুড়ের শরবত ও কাঁচা ছোলা মওজুত থাকবে। তারপর পুরুষরা যাবে মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করতে-মহিলারা ফিরবে ঘরে। প্রতিমাসে শেষ শুক্রবার হবে ফিস্ট। সেদিন মহিলাদের থাকবে ছুটি। রান্নাবান্না হবে ক্লাব ঘরে- করবে পুরুষরা। এ পল্লী কোনদিন এক মুহূর্তের জন্যও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে না-থাকবে নিজস্ব জেনারেটর। এই পল্লীর স্কুলটি পরিচালিত হবে ছেলেমেয়েদের অবাধ-মুক্ত বিকাশের লক্ষ্যে। এখানে আনন্দ কলরব থাকবে-কিন্তু কোন হট্টগোল থাকবে না-শান্তি বিঘ্নিত হবে না। কেউ শুধু নিজের জন্য ভাববে না-সবাই হবে সবার জন্য। থাকবে দু’টা নিজস্ব কোস্টার-সকাল ছ’টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত কোস্টার দু’টা চলাচল করবে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত।
এ পর্যন্ত  বলে মাসুদ চোখ খুলল। তারপর পেছনে না তাকিয়েই বলল, জান ফিয়া-এ পল্লীর নাম রাখব আমরা ‘স্বপ্নমগ্ন’-কী চমৎকার হবে না নামটা?
মাসুদ পাশ ফিরে তাকায় ফিয়ার সমর্থনের আশায়। ফিয়া কখন উঠে গেছে-টের পায়নি-লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় মাসুদ। ফিয়া হাঁটুতে থুতুনি রেখে বসে আছে খাল-পাড়ে। ছোট্ট খালটায় মৃদু বাতাসে কুঞ্চিত পানিতে তার উদাস দৃষ্টি কাঁপছে। মাসুদ এসে বসে তার পাশে।
দু’হাতে ফিয়ার মুখ তুলে ধরে বলল, কী ব্যাপার উঠে এলে তুমি এখানে! অথচ এখানে যে পল্লীটা গড়ে তোলার চিন্তা করছি-আমি তার পুরা পরিকল্পনাটাই তোমাকে উদ্দেশ্য করে বলে ফেলেছি। জান ত ঢাকা শহরে ছোট্ট একটা ঘরের স্বপ্ন কী রকম অবাস্তব হয়ে ওঠতে যাচ্ছে-তাই আমরা এ জায়গাটা বেছে নিয়েছি।
ফিয়া বলল, দেখ-সকালের খবরের কাগজে সীমার হত্যাকাণ্ডের খবরটা পড়ার পর থেকে আমি আর কোন কিছুতে উৎসাহ খুঁজে পাচ্ছি না। জান- আজ সকাল বেলা আম্মা আব্বাকে বললেন, এ-ই মাসুদ ছেলেটার একটু ভাল মত খোঁজ-খবর নাও তো- একেবারে গ্রামে লোক পাঠিয়ে। আর ওর বন্ধু-বান্ধবদের কাছেও। সে-ও তো কী ব্যবসা-ট্যবসা করবে ফিয়া বলল-পত্রিকার চাকরিটাই বা ছাড়ল কেন-খুব ভাল মত খবর নেয়া দরকার- রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে চাইছে কি-না। আর ওরকমই যদি হয়-তাহলে একটা ছাপোষা চাকরিজীবি ছেলে দেখ মেয়ের জন্য।
মাসুদ বিস্মিত, সত্যিই বলেছেন আম্মা একথা?
ফিয়া মাসুদের একটা হাত চেপে ধরে বলল, তাহলে আর বলছি কী-দরজার আড়াল থেকে আমি নিজের কানে শুনেছি। প্লীজ মাসুদ তোমার এসব স্বপ্ন-টপ্ন রাখ। আমার খুব বড়লোক হবার কোন সখ নেই-তুমি বরং ব্যবসা-ট্যবসার ধান্ধা ছেড়ে দাও। আবার পত্রিকার চাকরিটা নাও। না হয়- এককাজ করলে হয় না-তুমি ত বলেছিলে গ্রামে তোমাদের বেশ কিছু জমিজমা আছে। চল নাগো-বিয়ের পর আমরা গ্রামে চলে যাই। গ্রামে গেলে আমাদের চাওয়া পাওয়াও সীমিত হবে জীবন হয়ে যাবে সহজ সরল আবেগে প্রেমে আনন্দে।
মাসুদ বলল, দেখ ফিয়া সমস্যাটা শহর আর গ্রামের নয়-সমস্যাটা মানসিকতার। আর গ্রামের কথা বলছ! গ্রামে রাস্তাঘাট হচ্ছে-বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। টিভি-ভিসিআর পর্যন্ত গ্রামে গিয়ে ঠেকেছে-
ফিয়া মাসুদের হাত আরও জোরে আঁকড়ে ধরে বলল, তাহলে-তাহলে আমরা কোথায় যাব-কোথায় আমাদের স্বপ্নেরা নিরাপদে থাকবে?
মাসুদ ফিয়ার একটা হাত তার বুকে চেপে ধরে বলল, এখানে-এইখানে…।

ইউসুফ শরীফ: দেশের স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক ও কবি। তার প্রকাশিত ছোটগল্পের সংখ্যা ৭০ এবং প্রকাশিত উপন্যাস ২১টি। তিনি কথাসাহিত্যিকদের সংগঠন কথাসাহিত্য কেন্দ্র’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/