শাহলা আহমদের বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ ‘বুলবুল-বাঙ্গাল’

শাহলা আহমেদ

বুলবুল-বাঙ্গাল

বাবা কে প্রায়ই দেখেছি নির্জনে -নিভৃতে একাগ্র মনে লিখে যাচ্ছেন…। বাবার মাঝে ছিল প্রকৃতির ছোঁয়া, অসম্ভব গাছ প্রেমিক ছিলেন। নানান ধরনের ফুল. নানান জাতের পাতাবাহারের সমাহার, বিশেষ করে উঠোনের একপাশে হাস্নাহেনা ফুলের গাছ…..লম্বা টানা সাদা কালো মোজাইকের বারান্দায় বসে বাবা লিখে যাচ্ছেন। যে কলমটা দিয়ে লিখতেন, কলমটার নিবটা ছিল বেশ সুক্ষ্ন।

পার্কার ফাউনটেনপেন দিয়ে লেখার চলন ছিল সে সময়।আবার দেখেছি দোয়াত কলম..কলমটা কালির মধ্যে ডুবিয়ে লিখতে।বাবার হাতের লেখা ছিল নিখুঁত অসাধারণ.. মনে হত খবরের কাগজের মতন ছাপার অক্ষর হয়ে বের হয়ে এসেছে..! উর্দু, আরবি, ফার্সিতেই হামদ নাত গজল লিখতেন। ওই ভাষা জানা ছিল না তাই বুঝতে ও পারতাম না। কোনদিন চেষ্টা ও করিনি..এখন খুব আফসোস হয়। বাবা আমাকে বাংলায় চিঠি লিখতেন আর শেষে লিখতেন, ইশ্ কি বিশ্রী লেখা.. মুগ্ধ হয়ে লেখাগুলো বার বার পরতাম আর আলতো হাত বুলাতাম-অক্ষরগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুক্ত দানার মতন……কি অপূর্ব…!

শুধু লিখেই ক্ষান্ত ছিলেন না বিভিন্ন আসরে নিজের লেখা হামদ নাত গজল ও পরিবেশন করতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার রচিত প্রথম মরমী কবিতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে ( বর্তমান শেখ বোরহান কলেজ) রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কবি আল্লামা ইকবালের একটি নাত আবৃত্তি করেছিলেন। ১৯৪৮ সনে যখন কায়েদ -এ- আযাম মোঃ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসেন, তখন ঢাকার রেসকোর্স ( বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মাঠে তার বত্তৃতার আগে একটি নাত আবৃত্তি করেছিলেন। তার সমুধুর কন্ঠস্বরের জন্য তাকে ‘বুলবুল-বাঙ্গাল’ উপাধি ভূষিত করা হয়েছিল।

ইদানীং বাবার অনেক কবিতা বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে। বাবার গজলের প্রথম অনুবাদ কবি আসাদ চৌধুরীর ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ নামক বইতে ছাপা হয়েছে। বাড়ির কাছে আরশিনগর’ সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সম্ভবত এদেশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ বাবা জহুরুল হক মোবারকী রচিত ‘ গজলামে হারাম’ আজ বাবা দিবসে বাবারই লিখিত কবিতা উৎসর্গ করলাম।

ওমেন্স নিউজ সাহিত্য/