শুভ জন্মদিন অপরাহ  উইনফ্রে

অপরাহ  উইনফ্রে

আজ বিশ্বের একজন প্রভাবশালী নারীর জন্মদিন যিনি অতি ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে উঠে এসে ক্ষমতাবানদের দলে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। আর এর পুরোটাই করেছেন নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। তিনি হলেন অপরাহ  উইনফ্রে, যার আরেক নাম ‘কুইন অব মিডিয়া’। আজ যেই অপরাহ উইনফ্রেকে আমরা দেখি, তিনি একদিনে এমনটা হননি। তাকে পেরিয়ে আসতে হয়েছে অনেক অমসৃণ পথ। আজ তার জন্মদিনে শুনবো তার জীবন সংগ্রামের কিছু কথা।

তার জন্ম ২৯ শে জানুয়ারি, ১৯৫৪ সালে, মিসিসিপির কসিউস্কো এর এক নিতান্ত দরিদ্র পরিবারে। ছোটবেলায় হিব্রু বাইবেল থেকে নিয়ে, তার নাম রাখা হয়, অর্পাহ। কিন্তু তার মাসহ পরিচিত কেউই সে নাম উচ্চারণ করতে পারত না, তাই পরে সে নিজেই তার নাম বদলে রাখেন অপরাহ । তার মা, ভার্নিটা লি ছিলেন গৃহপরিচারিকা, বাবা ভার্নন উইনফ্রে ছিলেন নাপিত। মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে জন্মের পরপরই তার আশ্রয় হয় নানির কাছে যেখানে দারিদ্র্যের জন্য তাঁকে জামার বদলে ‘আলুর বস্তা’ পড়ে সমবয়সীদের হাসির পাত্র হতে হয়। বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী নারী অপরাহ উইনফ্রে। মাত্র নয় বছর বয়সে যে কিশোরী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং এই নির্যাতন সইতে না পেরে একপযার্য়ে বস্তি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, কে জানত এই কিশোরীই একদিন সারা বিশ্বে সফল নারীর দৃষ্টান্তে পরিণত হবেন!

নানা-নানির সাথে আমাদের যেমন সুখকর স্মৃতি থাকে, অপরাহর তা ছিল না। ছোটবেলায় একটু পান থেকে চুন খসলেই অপরাহকে নানির বেত দিয়ে মার খেতে হত। তারপরও অপরাহর রোল মডেল সেই নানিই, তিনি আজকে যে অবস্থায় আছেন, তার কৃতিত্ব তিনি তার নানিকেই দেন। তার ভাষ্যমতে, তার নানির থেকে তিনি তাঁর জীবনে সবচেয়ে বড় উপহারটা পেয়েছেন। তা হচ্ছে, মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই পড়তে শেখা। স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অপরাহ উইনফ্রে জুতো কী জিনিস জানতেন না, আলুর বস্তা বাদে কোনো পোশাকও পড়েননি। তার কাছে তখন বিনোদনের মাধ্যম ছিল পশুপাখির সাথে খেলা করা আর প্রচুর বই পড়া।

বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী নারী অপরাহ উইনফ্রে। মাত্র নয় বছর বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং এই নির্যাতন সইতে না পেরে একপযার্য়ে বস্তি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, কে জানত এই কিশোরীই একদিন সারা বিশ্বে সফল নারীর দৃষ্টান্তে পরিণত হবেন! অপরাহ উইনফ্রে নিজেও কি জানতেন সে কথা?

এত কিছুর পরও, কিশোর বয়সেই অপরাহ উইনফ্রে নিজ যোগ্যতায় প্রথম আফ্রিকান- আমেরিকান হিসেবে ন্যাশভিল টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপনার চাকরী পেয়ে যান কিন্তু তা তার জন্য তেমন একটা সুখকর হয় নি।  কেননা, সেখান থেকে তাকে বিনা দোষে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি বাল্টিমোরে একজন সাংবাদিক এবং এক টেলিভিশনে সহউপস্থাপকের পদে চাকরী পেয়ে যান। তার ভয় ছিল এই যে, তার জাত এবং অবস্থার কারণে আমেরিকানরা তাকে পছন্দ করবে না কিন্তু তার প্রতিভা এবং পরিশ্রমের কারণে তার অনুষ্ঠান রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর অপরাহ উইনফ্রে অনেক টিভি শো এবং ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পান এবং সেখানেও ব্যাপক সমাদৃত হন। অপরাহ উইনফ্রের মতে তার এই সাফল্যের একমাত্র কারণ ছিল স্বপ্নকে কখনো ভুলে না গিয়ে সে হিসেবে জীবনে এগোনো।

১৯৮৮ সালে অপরাহ উইনফ্রে “দ্যা হার্পো এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপ” নামে নিজের কোম্পানি খোলেন। ২০০০ সালে বাজারে আনেন তার ম্যাগাজিন, ‘দ্যা অপরাহ ’স ম্যাগাজিন’। তার ‘দ্যা অপরাহ  উইনফ্রে’স শো’ বর্তমান শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম, এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারলেই রাতারাতি খ্যাতি পাওয়া যায় এমনটাই মনে করেন সমগ্র বিশ্বের মানুষজন। বিংশ শতাব্দীর সর্বোচ্চ ধনী মার্কিন-আফ্রিকান হিসেবে আখ্যায়িত অপরাহ উইনফ্রের মোট সম্পদের পরিমাণ, ২.৮ বিলিয়ন ডলার যার একটা অংশ যায় সমাজসেবায়। বর্তমানে তিনি উত্তর আমেরিকার প্রথম এবং একমাত্র মাল্টি-বিলিয়নিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচিত।

এখানেই শেষ নয়, তিনি বিশ্ব জুড়ে ক্ষমতাবান মানুষদের কাতারে ঠাঁই পেয়েছে। তাও একবার দুবার না, বহুবার। টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের একশ জন সর্বোচ্চ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় অপরাহ উইনফ্রে একমাত্র ব্যক্তি যিনি টানা আটবার নির্বাচিত হয়েছেন। যেখানে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও হিলারি কিনটন নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র পাঁচবার। আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও অপরাহ উইনফ্রেকে আমেরিকার সম্ভাব্য সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী বলে মনে করেন। অন্যদিকে, সিএনএন এবং টাইম ডট কম অপরাহকে বিশ্বের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান নারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আজ এই সংগ্রামী ও সফল নারীর জন্মদিনে জানাই অনেক  অভিবাদন ও শুভেচ্ছা।