পরিবারের প্রয়োজনে অটোরিকশা চালাচ্ছেন যে তিন বোন

করোনার  মধ্যে সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই। এ অবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য মানুষ কত কিছু-ই না করছে। এই তিন বোনকেই দেখুন না, করোনা সঙ্কটের মধ্যে সংসার চালাতে স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা। অটোরিকশা চালিয়ে নিজ নিজ সংসারের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। ওই তিন বোনের নাম-নাসরিন বিবি, সাইমা খাতুন আর শাহনাজ বিবি। পাকিস্তানের মতো পুরুষ নিয়ন্ত্রিত দেশে অটোরিকশা চালিয়ে দিব্যি অর্থ উপার্জন করছেন এই  তিন বোন।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে নাসরিন জানান, ‘আমার পরিবারে আমিই একমাত্র রোজগার করা মানুষ।  আমার ছোট ছোট সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে এই পেশাই বেছে নিতে হয়েছে আমাকে।’

এছাড়া নাসরিনের আরেক বোনের স্বামী মারা গেছেন। আরেক বোনের স্বামী অসুস্থ। তাই ওই তিন নারীর উপরই এসে পড়েছে সংসার চালানোর কঠিন দায়িত্ব। শেষে কি করা! তিনি বোন মিলে ঠিক করলেন, ‘মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করার দরকার নাই। চল আমরা অটোরিকশা চালাই।’

কেবল পরিকল্পনা করেই তারা বসে থাকেননি। কিস্তিতে টাকা ধার নিয়ে তিনজনের জন্য তিনটা সিএনজি কিনে নিলেন। এরপর থেকে এই অটো চালিয়েই তিন তিনটি সংসারের যাবতীয় প্রয়োজন মেটাচ্ছেন ওই তিন বোন।

এ প্রসঙ্গে নাসরিন বলেন,‘আমি-ই প্রথম অটো চালানো শিখি এবং মাসিক ৫ হাজার টাকা কিস্তিতে একটি অটোরিকশা কিনে নেই।’ পরে নাসরিনের দেখাদেখি তার বাকি দুই বোনও কিস্তিতে সিএনজি কিনেন। আর এজন্য তারা নিজেদের গয়নাগাটি বিক্রি করে দেন।

পাকিস্তানে করোনা মহামারি আঘাত হানার পরই ওই তিন বোন অটোরিকশা কিনেছেন এবং লাহোরের মতো জনাকীর্ণ শহরে তারা এটি চালাচ্ছেন। সেখানে লকডাউন তুলে নেয়ার পর থেকে প্রতিদিনই অটো চালিয়ে রোজগার করছেন এই তিন বোন।

এ প্রসঙ্গে নাসরিনের বোন সাইমা বলেন,‘আমার সংসারে আয় করার মতো কেউ ছিল না। তাই আমি অটো চালাতে শুরু করেছি।  আমি এখন এই অটোরিকশা চালানোর টাকা দিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ চালাচ্ছি। এমনকি আমার সংন্তানদেরও লেখাপড়াও করাতে পারছি।’

নাসরিন বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছিলাম। ঘরে খাবার পর্যন্ত ছিলো না।’

এসময় কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য তারা কত-ই না চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনও কাজ মেলেনি। ‘এই কাজে যোগ দেয়ার আগে ভেবেছিলাম বাইরে গিয়ে পুরুষদের মধ্যে অটো চালাবো কত কিছুই না ভাববে লোকজন। এটা তো বিরাট চ্যালেঞ্জের কাজ। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টা ততটা  কঠিন ছিল না।’বলছিলেন নাসরিন।

বরং অটো চালাতে গিয়ে তিন বোন দেখলেন, রাস্তাঘাটের লোকজন উল্টো তাদের উৎসাহ দিচ্ছে। ফলে কোনও ধরনের সামাজিক হয়রানিতে পড়তে হয়নি তাদের। নাসরিন বলেন, ‘এখন লোকেরা গাড়ি থামিয়ে এই কঠোর পরিশ্রমের জন্য আমাদের প্রশংসা করেন।’ফলে যাত্রী পেতেও তাদের কোনও রকম সমস্যা হয় না।

অটোচালক তিন বোন নাসরিন বিবি, সাইমা খাতুন আর শাহনাজ বিবির কাহিনী পাকিস্তানের সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। অনেকেই তাদের প্রশংসা করে ফেসবুক ও টুইটারে পোস্ট দিচ্ছেন। ফিজিওফিশিয়াল০৫ নামের এক ইউজার টুইটারে লিখেছেন- ‘বোন তোমাদের স্যালুট জানাই।’

ওমেন্স নিউজ ডেস্ক/